HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কাদের রোযা কবুল হয়
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
اَلْحَمْدُ للهِِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلٰى رَسُوْلِه مُحَمَّدٍ وَعَلٰى الِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ
‘কাদের রোযা কবুল হয়’ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের করতে পেরে মহান আলস্নাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
ইসলামের যে পাঁচটি বুনিয়াদ রয়েছে তার মধ্যে রোযা অন্যতম। আলস্নাহর কাছে রোযা কবুল হওয়ার জন্য রোযার আদাব ও নিয়মাবলী জানা এবং তা পালন করা একামত্ম জরম্নরী। এ গ্রন্থটিতে রোযার আদাব, গুরম্নত্ব ও উপকারিতা এবং রমাযান মাস সংক্রামত্ম বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় দলীল- প্রমাণসহ আলোচনা করা হয়েছে। কোরআন, হাদীসসহ রোযা সংক্রামত্ম দেশী-বিদেশী বহু গ্রন্থ অধ্যয়ন করে সেগুলোর সার নির্যাস এ বইটিতে আনা হয়েছে। যার ফলে বইটি পাঠক সমাজের কাছে সমাদৃত হয়েছে এবং অল্পদিনের মধ্যেই প্রথম সংস্করণের কপিগুলো শেষ হয়ে যায়। এবার আরো কিছু আকর্ষণীয় নতুন বিষয় সংযোজন করে দ্বিতীয় সংস্করণ বের করেছি। বইটির মাধ্যমে পাঠকমহল যথেষ্ট উপকৃত হতে পারবেন, ইনশা-আলস্নাহ। পাঠকরা উপকৃত হলেই আমাদের শ্রম সার্থক হবে।
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই এবং দু‘আ করি আলস্নাহ যেন সবাইকে জাযায়ে খাইর দান করেন এবং আমাদের এ শ্রম ও খেদমতকে কবুল করে সকলের নাজাতের উসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
মায়াস্সালাম
আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
চেয়ারম্যান
ইমাম পাবলিকেশন্স লিমিটেড
‘কাদের রোযা কবুল হয়’ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের করতে পেরে মহান আলস্নাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
ইসলামের যে পাঁচটি বুনিয়াদ রয়েছে তার মধ্যে রোযা অন্যতম। আলস্নাহর কাছে রোযা কবুল হওয়ার জন্য রোযার আদাব ও নিয়মাবলী জানা এবং তা পালন করা একামত্ম জরম্নরী। এ গ্রন্থটিতে রোযার আদাব, গুরম্নত্ব ও উপকারিতা এবং রমাযান মাস সংক্রামত্ম বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় দলীল- প্রমাণসহ আলোচনা করা হয়েছে। কোরআন, হাদীসসহ রোযা সংক্রামত্ম দেশী-বিদেশী বহু গ্রন্থ অধ্যয়ন করে সেগুলোর সার নির্যাস এ বইটিতে আনা হয়েছে। যার ফলে বইটি পাঠক সমাজের কাছে সমাদৃত হয়েছে এবং অল্পদিনের মধ্যেই প্রথম সংস্করণের কপিগুলো শেষ হয়ে যায়। এবার আরো কিছু আকর্ষণীয় নতুন বিষয় সংযোজন করে দ্বিতীয় সংস্করণ বের করেছি। বইটির মাধ্যমে পাঠকমহল যথেষ্ট উপকৃত হতে পারবেন, ইনশা-আলস্নাহ। পাঠকরা উপকৃত হলেই আমাদের শ্রম সার্থক হবে।
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই এবং দু‘আ করি আলস্নাহ যেন সবাইকে জাযায়ে খাইর দান করেন এবং আমাদের এ শ্রম ও খেদমতকে কবুল করে সকলের নাজাতের উসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
মায়াস্সালাম
আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
চেয়ারম্যান
ইমাম পাবলিকেশন্স লিমিটেড
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়ালস্নাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি কেবলমাত্র তাই পায় যা সে নিয়ত করে। সুতরাং যার হিজরত হবে আলস্নাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে তার হিজরত আলস্নাহ এবং রাসূলের দিকেই হবে আর যার হিজরত হবে দুনিয়া অর্জনের জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য, তার হিজরত সেদিকেই হবে যেদিকে সে হিজরত করেছে। (বুখারী হা/১)
হাদীসের শিক্ষা :
আমরা প্রত্যেকটি কাজ আলস্নাহর সমত্মুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করব যাতে দুনিয়াতে কল্যাণ এবং আখিরাতে জান্নাতের নিয়ামত লাভ করতে পারি।
আবদুলস্নাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়ালস্নাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও তা পৌঁছিয়ে দাও। (বুখারী- হা/৩৪৬১)
হাদীসের শিক্ষা :
দ্বীন সম্পর্কে আমরা যে যতটুকু জানি তা প্রচার করা আমাদের দায়িত্ব।
হাদীসের শিক্ষা :
আমরা প্রত্যেকটি কাজ আলস্নাহর সমত্মুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করব যাতে দুনিয়াতে কল্যাণ এবং আখিরাতে জান্নাতের নিয়ামত লাভ করতে পারি।
আবদুলস্নাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়ালস্নাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও তা পৌঁছিয়ে দাও। (বুখারী- হা/৩৪৬১)
হাদীসের শিক্ষা :
দ্বীন সম্পর্কে আমরা যে যতটুকু জানি তা প্রচার করা আমাদের দায়িত্ব।
বৎসরে বারটি মাস যায়। আলস্নাহ তা‘আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টির শুরম্ন থেকেই এ নিয়ম নির্ধারণ করেছেন। কোরআনের মধ্যে এসেছে-
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِيْ كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ
‘‘যেদিন আলস্নাহ তা‘আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকেই আলস্নাহর নিকট মাসসমূহের সংখ্যা বারটি। এটা আলস্নাহর কিতাবে লিখিত।’’
(সূরা তাওবা- ৩৬)
চন্দ্র বৎসরের বারটি মাসের মধ্যে রমাযান মাসের নামটি অধিক পরিচিত। একমাত্র রমাযান মাসের নামটি কোরআন মাজীদে এসেছে। সুরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে উলেস্নখ আছে-
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
‘‘রমাযান তো সেই মাস যে মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক, হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ফুরকান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী)।’’
আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে রমাযান رَمَضٌ (রামায) ধাতু হতে এসেছে।
اَلرَّمَضُ وَهُوَ شِدَّةُ اَلْحَرِّ أَوْ شِدَّةُ وَقْعِ اَلشَّمْسِ
‘রামায’ এর অর্থ হল গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরম অথবা সূর্যের অত্যাধিক উত্তাপ।
(মুফরাদাতুল কোরআন ২০৩ পৃঃ)
প্রাচীন ভাষায় এ মাসের নাম ছিল ‘নাতিক’। আরবরা পুরাতন নামগুলো পরিবর্তন করার সময় যে মাস যে ঋতুতে পড়েছিল, সে অনুযায়ী নতুনভাবে চন্দ্র মাসগুলোর নাম দিয়েছিল। পুরাতন নাতিক গ্রীষ্মের মধ্যে পড়েছিল। তাই এর নাম দেয়া হয়েছে رَمَضَانَ ‘রমাযান’। (কামুস)
অপরদিকে রমাযান মাসে মানুষের পাপসমূহ জ্বলে-পুড়ে ভষ্মীভূত হয়। এজন্য এ মাসকে রমাযান মাস বলা হয়েছে।
উলেস্নখ্য যে, মীম অক্ষর সাকিন করে ‘রম্যান’ উচ্চারণ না করে মীমের যবরসহ ‘রমাযান’ বলাই সঠিক। যেহেতু কোরআনে এভাবে এসেছে।
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِيْ كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ
‘‘যেদিন আলস্নাহ তা‘আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকেই আলস্নাহর নিকট মাসসমূহের সংখ্যা বারটি। এটা আলস্নাহর কিতাবে লিখিত।’’
(সূরা তাওবা- ৩৬)
চন্দ্র বৎসরের বারটি মাসের মধ্যে রমাযান মাসের নামটি অধিক পরিচিত। একমাত্র রমাযান মাসের নামটি কোরআন মাজীদে এসেছে। সুরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে উলেস্নখ আছে-
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
‘‘রমাযান তো সেই মাস যে মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক, হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ফুরকান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী)।’’
আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে রমাযান رَمَضٌ (রামায) ধাতু হতে এসেছে।
اَلرَّمَضُ وَهُوَ شِدَّةُ اَلْحَرِّ أَوْ شِدَّةُ وَقْعِ اَلشَّمْسِ
‘রামায’ এর অর্থ হল গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরম অথবা সূর্যের অত্যাধিক উত্তাপ।
(মুফরাদাতুল কোরআন ২০৩ পৃঃ)
প্রাচীন ভাষায় এ মাসের নাম ছিল ‘নাতিক’। আরবরা পুরাতন নামগুলো পরিবর্তন করার সময় যে মাস যে ঋতুতে পড়েছিল, সে অনুযায়ী নতুনভাবে চন্দ্র মাসগুলোর নাম দিয়েছিল। পুরাতন নাতিক গ্রীষ্মের মধ্যে পড়েছিল। তাই এর নাম দেয়া হয়েছে رَمَضَانَ ‘রমাযান’। (কামুস)
অপরদিকে রমাযান মাসে মানুষের পাপসমূহ জ্বলে-পুড়ে ভষ্মীভূত হয়। এজন্য এ মাসকে রমাযান মাস বলা হয়েছে।
উলেস্নখ্য যে, মীম অক্ষর সাকিন করে ‘রম্যান’ উচ্চারণ না করে মীমের যবরসহ ‘রমাযান’ বলাই সঠিক। যেহেতু কোরআনে এভাবে এসেছে।
রমাযান মাস অন্যান্য মাস থেকে বিশেষ গুরম্নত্বপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যময়। রমাযান মাস সম্পর্কে কোরআন ও হাদীসে যত আলোচনা এসেছে অন্য কোন মাস সম্পর্কে ততটা আসেনি। রমাযান মাস নিয়ে যতবেশি চিমত্মা-গবেষণা করা হয় এবং লেখা-লেখি হয় অন্য কোন মাস নিয়ে ততটা হয় না। প্রতি বছর রমাযান ঘুরে আসে- রহমত, বরকত আর মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে। রমাযান মাস যখন ঘনিয়ে আসে তখন মু’মিনের হৃদয়ে বিরাজ করে চরম আনন্দ। রমাযানকে পাওয়ার আশায় সবাই থাকে অপেক্ষমান। কী টান! কী আকর্ষণ! এ মাসের জন্য। এর কারণ হচ্ছে রমাযান কোরআনের মাস, দু‘আ কবুলের মাস, জীবনের গোনাহসমূহ থেকে মুক্তি পাওয়ার মাস, বেশি বেশি নেকী অর্জন করার মাস।
রমাযানের এত মর্যাদা কেন?
যেসব কারণে রমাযানের ফযীলত বেড়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হল, এ মাসেই আলস্নাহ তা‘আলা কোরআন নাযিল করেছেন। বিশ্বের মানুষ যখন দিশেহারা, পথহারা হয়ে গিয়েছিল, মানুষ যখন অজ্ঞতা, মূর্খতা ও বর্বরতায় নিমজ্জিত ছিল তখন সেই ভ্রামত্ম জাতিকে সত্যের মশাল দেখানোর জন্য, অন্ধকারের অতল গহবর থেকে বের করে জ্ঞানের আলোর দিকে মানব জাতিকে নিয়ে আসার জন্য এবং অসংখ্য ভ্রামত্ম পথের মধ্যে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য মহান আলস্নাহ কালজয়ী বাণী কোরআন মাজিদ নাযিল করেন- যা ছিল বিশ্বনবীর চিরস্থায়ী মুজিযা। এর মাধ্যমে তিনি অসভ্য, বর্বর জাতির মধ্য থেকে এমন একদল মর্দে মুজাহিদ তৈরী করেছিলেন যারা সত্য ও ন্যায়ের পথে নিজেদের জীবন পর্যমত্ম বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করত না। এ কোরআন দিয়ে তিনি একটি ঐতিহাসিক বিপস্নব সাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে রাতে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাযিল শুরম্ন হল সেই রাত্রিটি হাজার মাস থেকেও উত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ হল। আর সেই রাতটি রমাযান মাসে হওয়াতে পুরো মাসটাই ফযীলতপূর্ণ হল। এদিকে ইঙ্গিত করেই আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘রমাযান তো সেই মাস যাতে কোরআন নাযিল হয়েছে।’’(সূরা বাকারা- ১৮৫)
রমাযান মাসের বহুমুখী কল্যাণ :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِيْنُ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যখন রমাযান মাস আরম্ভ হয় তখন আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানগুলোকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখা হয় । (বুখারী হা/১৮৯৯)
রমাযান মাসের বিশেষ মর্যাদার কারণে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে, রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়। এ মাসে যেহেতু অজস্রধারায় রহীম ও রহমান আলস্নাহর পক্ষ থেকে রহমত নাযিল হতে থাকে এবং রহমতের ফেরেশতারা অবিরাম আসা-যাওয়া করে এজন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাদীসের অপর বর্ণনায় এসেছে এ মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। কারণ মানুষ এমাসে বেশি বেশি নেক আমল করে এবং প্রতিটি আমলের অতিরিক্ত সওয়াব পায়, যার ফলে সে জান্নাতের উপযুক্ত হয় এবং জান্নাতের কাছাকাছি চলে যায়।
এ মাসে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ এ সময় মানুষ অন্য মাসের চেয়ে কম খারাপ কাজ করে, যার ফলে জাহান্নাম থেকে সে দূরে থাকার সুযোগ পায়। রমাযানের সম্মানে আলস্নাহ তা‘আলা জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখেন ।
এ মাসে দুষ্ট শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়। এজন্য শয়তানী কার্যকলাপ কম হয়। তবে এ মাসে শয়তানকে বেঁধে রাখা হলেও অনেকেই গোনাহের কাজ করে থাকে। এর কারণ হচ্ছে-
মানুষের নফসে আম্মারা তথা কুপ্রবৃত্তি তাকে পাপের দিকে আকৃষ্ট করে।
শয়তান যাকে ১১ মাস কুমন্ত্রণা দিতে পারে তাকে একমাস কুমন্ত্রণা না দিলেও সে পাপকাজ করে যায়। কারণ সারা বছর শয়তানের কাজ করলে শয়তানী কাজ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। এজন্য একমাস শয়তান বাঁধা থাকলেও পূর্বের অভ্যাসের কারণে মানুষ পাপকাজ করে।
রমাযান বরকতের মাস :
রমাযান মাস বরকতের মাস, এ মাসে মু’মিনের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। বরকত দু’প্রকার হয়ে থাকে, এক প্রকার বরকত হল পরিমাণের মধ্যে বরকত। যেমন- একজনের খাবার দু’জনের এবং দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। আরেক প্রকার বরকত হল শক্তির মধ্যে বরকত। যেমন- আমরা যখন রোযা থাকি না তখন সকালে পেট ভরে খেলেও দুপুরে আবার ক্ষুধা লাগে এবং খাবারের চাহিদা হয়; কিন্তু রোযার সময় আমরা রাতে ফজরের আগে খাই এবং সন্ধ্যা পর্যমত্ম কিছুই খাই না তারপরও শরীরের কোন ক্ষতি হয় না, সাহারীতে যা খাই তার পুষ্টিগুণ ও শক্তির মধ্যে আলস্নাহ বরকত দিয়ে দেন যা সারা দিনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।
রমাযান সবরের মাস :
রমাযান আমাদেরকে সবরের প্রশিক্ষণ দেয়। ভোর থেকে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যমত্ম সারাদিন খানা-পিনা ও মনের চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে মু’মিন এক চরম ধৈর্যপরীক্ষার সম্মুখীন হয়। আর সবর মু’মিনের এমন এক গুণ যার প্রতিদান হল জান্নাত। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
‘‘সবরকারীদেরকে অগণিত পুরস্কার প্রদান করা হবে।’’ (সূরা যুমার- ১০)
রমাযান সমতার মাস :
রমাযান মুসলিম মিলস্নাতের মধ্যে সাম্যের হাওয়া বয়ে আনে। সাদা-কালো, ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, সকলকে এক ও একাকার করে দেয়। যারা সর্বদা ভোগ-বিলাসের মধ্যে থাকে তাদেরকেও ঐ সকল লোকদের সাথে শামিল হতে হয় যারা সকালে খেলে দুপুরে খেতে পায় না। যত বড় রাজা-বাদশাহ হোক না কেন এমন কখনো হয় না যে, তার জন্য সাহারীর সময় একটু পিছানোর সুযোগ থাকে অথবা নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগে তাকে ইফতারের সুযোগ দেয়া যেতে পারে; বরং সকলকে একই সময়ে খাওয়া বন্ধ করতে হয় আবার একই সময়ে খাওয়া শুরম্ন করতে হয়, আবার তারাবীর নামাযে গিয়ে সবাইকে একই কাতারে দাঁড়াতে হয়। এটা সাম্যের এক জ্বলমত্ম উদাহরণ।
রমাযান রহমত ও মাগফিরাতের মাস :
আলস্নাহ তা‘আলা হলেন দয়ার সাগর। বান্দার প্রতি তিনি খুবই সহানুভূতিশীল। রমাযান মাসে তিনি বান্দার নেক আমলের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। অপরদিকে তাওবাকারী বান্দাদের গোনাহ-খাতা মাফ করে তাদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাসিত্ম হতে মুক্তি দেন।
রমাযান দু‘আ কবুলের মাস :
রোযাদারের দু‘আ আলস্নাহ কবুল করেন। সূরা বাকারায় রমাযান সংক্রামত্ম আলোচনার মধ্যে আলস্নাহ তা‘আলা বলেন-
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّي قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ
(হে নবী!) আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে তোমার কাছে জানতে চায় তখন তুমি জানিয়ে দাও যে, আমি একেবারে নিকটে। কোন প্রার্থনাকারী যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার দু‘আ কবুল করি। সুতরাং তারা যেন আমার কথা মেনে চলে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে, যাতে তারা সৎপথ পেতে পারে।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৬)
তাছাড়া হাদীসের মধ্যে এসেছে রোযাদারের দু‘আ কবুল হয়ে থাকে। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, তিন শ্রেণীর লোকের দু‘আ ফেরত দেয়া হয় না, ১. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, ২. রোযাদারের দু‘আ- যতক্ষণ পর্যমত্ম না সে ইফতার করে, ৩. মযলুম ব্যক্তির দু‘আ। (মিশকাত)
এ থেকে বুঝা যায় যে, রমাযান মাসে দু‘আ কবুলের বিশেষ সুযোগ রয়েছে।
রমাযানের এত মর্যাদা কেন?
যেসব কারণে রমাযানের ফযীলত বেড়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হল, এ মাসেই আলস্নাহ তা‘আলা কোরআন নাযিল করেছেন। বিশ্বের মানুষ যখন দিশেহারা, পথহারা হয়ে গিয়েছিল, মানুষ যখন অজ্ঞতা, মূর্খতা ও বর্বরতায় নিমজ্জিত ছিল তখন সেই ভ্রামত্ম জাতিকে সত্যের মশাল দেখানোর জন্য, অন্ধকারের অতল গহবর থেকে বের করে জ্ঞানের আলোর দিকে মানব জাতিকে নিয়ে আসার জন্য এবং অসংখ্য ভ্রামত্ম পথের মধ্যে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য মহান আলস্নাহ কালজয়ী বাণী কোরআন মাজিদ নাযিল করেন- যা ছিল বিশ্বনবীর চিরস্থায়ী মুজিযা। এর মাধ্যমে তিনি অসভ্য, বর্বর জাতির মধ্য থেকে এমন একদল মর্দে মুজাহিদ তৈরী করেছিলেন যারা সত্য ও ন্যায়ের পথে নিজেদের জীবন পর্যমত্ম বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করত না। এ কোরআন দিয়ে তিনি একটি ঐতিহাসিক বিপস্নব সাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে রাতে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাযিল শুরম্ন হল সেই রাত্রিটি হাজার মাস থেকেও উত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ হল। আর সেই রাতটি রমাযান মাসে হওয়াতে পুরো মাসটাই ফযীলতপূর্ণ হল। এদিকে ইঙ্গিত করেই আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘রমাযান তো সেই মাস যাতে কোরআন নাযিল হয়েছে।’’(সূরা বাকারা- ১৮৫)
রমাযান মাসের বহুমুখী কল্যাণ :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِيْنُ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যখন রমাযান মাস আরম্ভ হয় তখন আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানগুলোকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখা হয় । (বুখারী হা/১৮৯৯)
রমাযান মাসের বিশেষ মর্যাদার কারণে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে, রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়। এ মাসে যেহেতু অজস্রধারায় রহীম ও রহমান আলস্নাহর পক্ষ থেকে রহমত নাযিল হতে থাকে এবং রহমতের ফেরেশতারা অবিরাম আসা-যাওয়া করে এজন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাদীসের অপর বর্ণনায় এসেছে এ মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। কারণ মানুষ এমাসে বেশি বেশি নেক আমল করে এবং প্রতিটি আমলের অতিরিক্ত সওয়াব পায়, যার ফলে সে জান্নাতের উপযুক্ত হয় এবং জান্নাতের কাছাকাছি চলে যায়।
এ মাসে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ এ সময় মানুষ অন্য মাসের চেয়ে কম খারাপ কাজ করে, যার ফলে জাহান্নাম থেকে সে দূরে থাকার সুযোগ পায়। রমাযানের সম্মানে আলস্নাহ তা‘আলা জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখেন ।
এ মাসে দুষ্ট শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়। এজন্য শয়তানী কার্যকলাপ কম হয়। তবে এ মাসে শয়তানকে বেঁধে রাখা হলেও অনেকেই গোনাহের কাজ করে থাকে। এর কারণ হচ্ছে-
মানুষের নফসে আম্মারা তথা কুপ্রবৃত্তি তাকে পাপের দিকে আকৃষ্ট করে।
শয়তান যাকে ১১ মাস কুমন্ত্রণা দিতে পারে তাকে একমাস কুমন্ত্রণা না দিলেও সে পাপকাজ করে যায়। কারণ সারা বছর শয়তানের কাজ করলে শয়তানী কাজ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। এজন্য একমাস শয়তান বাঁধা থাকলেও পূর্বের অভ্যাসের কারণে মানুষ পাপকাজ করে।
রমাযান বরকতের মাস :
রমাযান মাস বরকতের মাস, এ মাসে মু’মিনের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। বরকত দু’প্রকার হয়ে থাকে, এক প্রকার বরকত হল পরিমাণের মধ্যে বরকত। যেমন- একজনের খাবার দু’জনের এবং দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। আরেক প্রকার বরকত হল শক্তির মধ্যে বরকত। যেমন- আমরা যখন রোযা থাকি না তখন সকালে পেট ভরে খেলেও দুপুরে আবার ক্ষুধা লাগে এবং খাবারের চাহিদা হয়; কিন্তু রোযার সময় আমরা রাতে ফজরের আগে খাই এবং সন্ধ্যা পর্যমত্ম কিছুই খাই না তারপরও শরীরের কোন ক্ষতি হয় না, সাহারীতে যা খাই তার পুষ্টিগুণ ও শক্তির মধ্যে আলস্নাহ বরকত দিয়ে দেন যা সারা দিনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।
রমাযান সবরের মাস :
রমাযান আমাদেরকে সবরের প্রশিক্ষণ দেয়। ভোর থেকে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যমত্ম সারাদিন খানা-পিনা ও মনের চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে মু’মিন এক চরম ধৈর্যপরীক্ষার সম্মুখীন হয়। আর সবর মু’মিনের এমন এক গুণ যার প্রতিদান হল জান্নাত। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
‘‘সবরকারীদেরকে অগণিত পুরস্কার প্রদান করা হবে।’’ (সূরা যুমার- ১০)
রমাযান সমতার মাস :
রমাযান মুসলিম মিলস্নাতের মধ্যে সাম্যের হাওয়া বয়ে আনে। সাদা-কালো, ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, সকলকে এক ও একাকার করে দেয়। যারা সর্বদা ভোগ-বিলাসের মধ্যে থাকে তাদেরকেও ঐ সকল লোকদের সাথে শামিল হতে হয় যারা সকালে খেলে দুপুরে খেতে পায় না। যত বড় রাজা-বাদশাহ হোক না কেন এমন কখনো হয় না যে, তার জন্য সাহারীর সময় একটু পিছানোর সুযোগ থাকে অথবা নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগে তাকে ইফতারের সুযোগ দেয়া যেতে পারে; বরং সকলকে একই সময়ে খাওয়া বন্ধ করতে হয় আবার একই সময়ে খাওয়া শুরম্ন করতে হয়, আবার তারাবীর নামাযে গিয়ে সবাইকে একই কাতারে দাঁড়াতে হয়। এটা সাম্যের এক জ্বলমত্ম উদাহরণ।
রমাযান রহমত ও মাগফিরাতের মাস :
আলস্নাহ তা‘আলা হলেন দয়ার সাগর। বান্দার প্রতি তিনি খুবই সহানুভূতিশীল। রমাযান মাসে তিনি বান্দার নেক আমলের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। অপরদিকে তাওবাকারী বান্দাদের গোনাহ-খাতা মাফ করে তাদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাসিত্ম হতে মুক্তি দেন।
রমাযান দু‘আ কবুলের মাস :
রোযাদারের দু‘আ আলস্নাহ কবুল করেন। সূরা বাকারায় রমাযান সংক্রামত্ম আলোচনার মধ্যে আলস্নাহ তা‘আলা বলেন-
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّي قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ
(হে নবী!) আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে তোমার কাছে জানতে চায় তখন তুমি জানিয়ে দাও যে, আমি একেবারে নিকটে। কোন প্রার্থনাকারী যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার দু‘আ কবুল করি। সুতরাং তারা যেন আমার কথা মেনে চলে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে, যাতে তারা সৎপথ পেতে পারে।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৬)
তাছাড়া হাদীসের মধ্যে এসেছে রোযাদারের দু‘আ কবুল হয়ে থাকে। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, তিন শ্রেণীর লোকের দু‘আ ফেরত দেয়া হয় না, ১. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, ২. রোযাদারের দু‘আ- যতক্ষণ পর্যমত্ম না সে ইফতার করে, ৩. মযলুম ব্যক্তির দু‘আ। (মিশকাত)
এ থেকে বুঝা যায় যে, রমাযান মাসে দু‘আ কবুলের বিশেষ সুযোগ রয়েছে।
রোযা ফারসী শব্দ। কোরআন ও হাদীসের ভাষায় রোযাকে صَوْمٌ সাওম বলে, সাওম বা সিয়াম উভয়টিই মাসদার তথা ক্রিয়ামূল।
আভিধানিক অর্থে সাওম এর অর্থ হল, সাধারণভাবে বিরত থাকা। আর ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায়- ‘‘আলস্নাহর সমত্মুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাসত্ম পর্যমত্ম খানা-পিনা ও যৌন সম্ভোগ হতে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলে।’’
আভিধানিক অর্থে সাওম এর অর্থ হল, সাধারণভাবে বিরত থাকা। আর ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায়- ‘‘আলস্নাহর সমত্মুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাসত্ম পর্যমত্ম খানা-পিনা ও যৌন সম্ভোগ হতে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলে।’’
প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম পর্যমত্ম সকল নবীদের শরীয়তে রোযার বিধান ছিল। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, এর মাধ্যমে হয়ত তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৩)
অবশ্য রোযার হুকুম-আহকাম, রোযার সংখ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন নবীর শরীয়াতে বিভিন্ন রকম ছিল।
মূসা (আঃ) ও তাঁর উম্মতরা আশুরার দিন রোযা রাখতেন।
আবদুলস্নাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম মদীনায় হিজরত করে আসার পর দেখলেন যে, ইয়াহুদীরা আশুরার দিন রোযা রাখে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিসের রোযা? তারা বলল, এটি এক মহান দিন। এ দিন আলস্নাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রম্নর কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন, ফলে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মূসা (আঃ) এ দিনে রোযা রাখতেন, তাই আমরাও এ দিনটিতে রোযা রাখি। (সহীহ বুখারী, হা/৩৯৪৩; আবু দাউদ, হা/২৪৪৭)
দাঊদ (আঃ) অর্ধেক বছর রোযা রাখতেন।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ لِيْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبُّ الصِّيَامِ إِلَى اللهِ صِيَامُ دَاوُدَ كَانَ يَصُوْمُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا
আবদুলস্নাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, আলস্নাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় রোযা হল দাঊদ (আঃ)-এর রোযা। তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং একদিন ইফতার করতেন। অর্থাৎ তিনি বছরের অর্ধেক দিন রোযা রাখতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪২০; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৯৬)
ঈসা (আঃ)-এর মাতা মারইয়াম মান্নতের রোযা রেখেছিলেন।
إِنِّيْ نَذَرْتُ لِلرَّحْمنِ صَوْمًا فَلَنْ أُكَلِّمَ الْيَوْمَ إِنْسِيًّا
ঈসা (আঃ)-এর জন্মের সময় লোকদের অপবাদ শোনার ভয়ে তার মাতা মারইয়াম খুবই চিমিত্মত হয়ে পড়েন, কারণ তার কোন স্বামী ছিল না। তখন আলস্নাহ তা‘আলা তাকে সামত্মবনা দিয়ে বললেন, ‘‘যদি তুমি কোন লোককে দেখতে পাও তবে বলে দিও- আমি রহমানের উদ্দেশ্যে রোযা মান্নত করেছি, তাই আজ আমি কারো সাথে কথা বলব না।’’ (সূরা মারইয়াম- ২৬)
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, এর মাধ্যমে হয়ত তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৩)
অবশ্য রোযার হুকুম-আহকাম, রোযার সংখ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন নবীর শরীয়াতে বিভিন্ন রকম ছিল।
মূসা (আঃ) ও তাঁর উম্মতরা আশুরার দিন রোযা রাখতেন।
আবদুলস্নাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম মদীনায় হিজরত করে আসার পর দেখলেন যে, ইয়াহুদীরা আশুরার দিন রোযা রাখে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিসের রোযা? তারা বলল, এটি এক মহান দিন। এ দিন আলস্নাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রম্নর কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন, ফলে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মূসা (আঃ) এ দিনে রোযা রাখতেন, তাই আমরাও এ দিনটিতে রোযা রাখি। (সহীহ বুখারী, হা/৩৯৪৩; আবু দাউদ, হা/২৪৪৭)
দাঊদ (আঃ) অর্ধেক বছর রোযা রাখতেন।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ لِيْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبُّ الصِّيَامِ إِلَى اللهِ صِيَامُ دَاوُدَ كَانَ يَصُوْمُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا
আবদুলস্নাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, আলস্নাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় রোযা হল দাঊদ (আঃ)-এর রোযা। তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং একদিন ইফতার করতেন। অর্থাৎ তিনি বছরের অর্ধেক দিন রোযা রাখতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪২০; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৯৬)
ঈসা (আঃ)-এর মাতা মারইয়াম মান্নতের রোযা রেখেছিলেন।
إِنِّيْ نَذَرْتُ لِلرَّحْمنِ صَوْمًا فَلَنْ أُكَلِّمَ الْيَوْمَ إِنْسِيًّا
ঈসা (আঃ)-এর জন্মের সময় লোকদের অপবাদ শোনার ভয়ে তার মাতা মারইয়াম খুবই চিমিত্মত হয়ে পড়েন, কারণ তার কোন স্বামী ছিল না। তখন আলস্নাহ তা‘আলা তাকে সামত্মবনা দিয়ে বললেন, ‘‘যদি তুমি কোন লোককে দেখতে পাও তবে বলে দিও- আমি রহমানের উদ্দেশ্যে রোযা মান্নত করেছি, তাই আজ আমি কারো সাথে কথা বলব না।’’ (সূরা মারইয়াম- ২৬)
রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার আগে নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম মুসলমানদেরকে প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং আশুরার দিনে রোযা রাখতে উৎসাহিত করতেন ।
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنَا بِصِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ وَيَحُثُّنَا عَلَيْهِ وَيَتَعَاهَدُنَا عِنْدَهُ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ لَمْ يَأْمُرْنَا وَلَمْ يَنْهَنَا وَلَمْ يَتَعَاهَدْنَا عِنْدَهُ
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) বলেন, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম আমাদেরকে আশুরার দিন রোযা রাখার নির্দে.শ দিতেন এবং এ ব্যাপারে খুবই উৎসাহ দিতেন। আমরা রোযা রাখছি কি না এরও খোঁজ-খবর নিতেন। পরে যখন রমাযানের রোযা ফরজ হয়ে গেল তখন এ ব্যাপারে কোন আদেশ করতেন না, নিষেধও করতেন না এবং কোন খোঁজ-খবরও নিতেন না। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৯৪৬)
দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে সর্বপ্রথম রমাযান মাসে রোযা রাখার বিধান নাযিল হয়। তবে এতে লোকদেরকে এতটুকু সুযোগ দেয়া হয়েছিল যে, যারা রোযা রাখতে চায় না, তারা প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়ালেও চলবে। আলস্নাহর বাণী :
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ - أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُونَه فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَنْ تَصُوْمُوا خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা (এর মাধ্যমে আলস্নাহকে) ভয় করতে পার। (রোযা ফরজ করা হয়েছে) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, তবে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, তবে সমপরিমাণ দিনের রোযা (সুস্থ হয়ে অথবা সফর থেকে ফিরে এসে) কাযা আদায় করে নেবে; আর যারা সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না তাদের জন্য এর বিনিময়ে ফিদিয়া দেয়ার সুযোগ থাকবে আর তা হচ্ছে একজন গরীব ব্যক্তিকে (পেট ভরে) খাবার দেয়া। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি (এর চেয়ে বেশি দিয়ে) ভাল কাজ করতে চায়, তাহলে এ কাজ তার জন্য একামত্ম কল্যাণকর হবে। তবে (এ সময়) রোযা রাখা তোমাদের জন্য খুবই ভাল; যদি তোমরা (রোযার উপকারিতা সম্পর্কে) জানতে পার।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৩,১৮৪)
উপরোক্ত বিধান নাযিল হওয়ার একবছর পর সুস্থদের ব্যাপারে যে ছাড় দেয়া হয়েছিল তা রহিত করে পুরো মাস রোযা রাখা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয় এবং রোগী ও মুসাফিরদের ব্যাপারে কাযার বিধান বহাল রাখা হয়। তবে যারা রোযা রাখতে অক্ষম তারা ফিদিয়া দিতে পারবে।
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيْضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
রমাযান মাস (এমন একটি মাস) যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে, আর এই কোরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক, সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং (হক ও বাতিলের) পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে যেন রোযা রাখে, তবে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে তবে সে পরবর্তী দিনগুলোতে গুণে গুণে সেই পরিমাণ কাযা করে নেবে। (এ সুযোগ দিয়ে) আলস্নাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কখনোই তোমাদের (জীবন) কঠিন করতে চান না। আলস্নাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তোমরা যেন গুণে গুণে (রোযার) সংখ্যাগুলো পূর্ণ করতে পার, আর আলস্নাহ তোমাদেরকে (জীবন যাপনের) যে পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন সেজন্য তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে পার এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পার। (সূরা বাকারা- ১৮৫)
রমাযান মাসে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যাওয়ার পর এর বিসত্মারিত বিধি-বিধান সম্পর্কে মুসলমানদেরকে ধারণা দেয়া হয় এবং রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর জেগে উঠে সহবাস করা ও খাওয়া-দাওয়া করাকে হালাল করে দেয়া হয়, আগে এসব হালাল ছিল না। ইবনে কাসীরের বর্ণনায় এসেছে :
কায়েস ইবনে সুরমাহ আনসারী রোযা রেখে সারাদিন পরিশ্রম করে বাড়ী ফিরে স্ত্রীকে বললেন, খাওয়ার কিছু আছে কি? স্ত্রী বললেন, না। এরপর স্ত্রী খাবারের খোঁজে বের হলেন। ফিরে এসে দেখেন স্বামী ঘুমিয়ে পড়েছেন। ফলে তিনি পরের দিন না খেয়ে রোযা রাখলেন। এক পর্যায়ে তিনি ক্ষুধার জ্বালায় বেঁহুশ হয়ে পড়েন। নবীর কাছে এ খবর দেয়া হল।
অপরদিকে উমর (রাঃ) রোযার রাতে ঘুমানোর পর জেগে উঠে স্ত্রীর সাথে সহবাস করে বসেন। পরে তিনি নিজেকে দোষী মনে করে আক্ষেপের সাথে নবীর কাছে গিয়ে নিজের ঘটনা বললেন। এসব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আলস্নাহ তা‘আলা সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াত নাযিল করে সুবহে সাদিক পর্যমত্ম সহবাস করা ও খাওয়া-দাওয়াকে বৈধ করে দিলেন।
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلٰى نِسَائِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُونَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ فَالْآنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللهُ لَكُمْ وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَا كَذلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ آيَاتِه لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
‘‘রোযার মাসে রাতের বেলায় তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলন করা তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে, তোমাদের স্ত্রীরা যেমনি তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ, ঠিক তোমরাও তাদের জন্য পোশাক সমতুল্য। আলস্নাহ এটা জানেন যে, তোমরা নিজেদের উপর খিয়ানত করে বসবে, তাই তিনি তোমাদের উপর দয়া করলেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। এখন চাইলে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করতে পার এবং (এ ব্যাপারে) আলস্নাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য যা (বিধি-বিধান কিংবা সমত্মান) লিখে রেখেছেন তা সন্ধান কর। আর তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পার যতক্ষণ পর্যমত্ম রাতের অন্ধকার রেখার ভিতর থেকে ভোরের শুভ্র আলোকরেখা পরিষ্কার না হয়। অতঃপর তোমরা রাত আসা পর্যমত্ম রোযা পূর্ণ কর। তবে মসজিদে যখন তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় থাকবে তখন নারী সম্ভোগ থেকে বিরত থকবে। এ হচ্ছে আলস্নাহর নির্ধারিত সীমারেখা। অতএব তোমরা কখনো এর কাছেও যেয়ো না, এভাবেই আলস্নাহ তা‘আলা তার যাবতীয় নিদর্শন মানুষের জন্য বলে দিয়েছেন, যেন তারা (এর আলোকে) আলস্নাহকে ভয় করতে পারে।’’
(সূরা বাকারা- ১৮৭)
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنَا بِصِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ وَيَحُثُّنَا عَلَيْهِ وَيَتَعَاهَدُنَا عِنْدَهُ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ لَمْ يَأْمُرْنَا وَلَمْ يَنْهَنَا وَلَمْ يَتَعَاهَدْنَا عِنْدَهُ
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) বলেন, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম আমাদেরকে আশুরার দিন রোযা রাখার নির্দে.শ দিতেন এবং এ ব্যাপারে খুবই উৎসাহ দিতেন। আমরা রোযা রাখছি কি না এরও খোঁজ-খবর নিতেন। পরে যখন রমাযানের রোযা ফরজ হয়ে গেল তখন এ ব্যাপারে কোন আদেশ করতেন না, নিষেধও করতেন না এবং কোন খোঁজ-খবরও নিতেন না। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৯৪৬)
দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে সর্বপ্রথম রমাযান মাসে রোযা রাখার বিধান নাযিল হয়। তবে এতে লোকদেরকে এতটুকু সুযোগ দেয়া হয়েছিল যে, যারা রোযা রাখতে চায় না, তারা প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়ালেও চলবে। আলস্নাহর বাণী :
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ - أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُونَه فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَنْ تَصُوْمُوا خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা (এর মাধ্যমে আলস্নাহকে) ভয় করতে পার। (রোযা ফরজ করা হয়েছে) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, তবে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, তবে সমপরিমাণ দিনের রোযা (সুস্থ হয়ে অথবা সফর থেকে ফিরে এসে) কাযা আদায় করে নেবে; আর যারা সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না তাদের জন্য এর বিনিময়ে ফিদিয়া দেয়ার সুযোগ থাকবে আর তা হচ্ছে একজন গরীব ব্যক্তিকে (পেট ভরে) খাবার দেয়া। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি (এর চেয়ে বেশি দিয়ে) ভাল কাজ করতে চায়, তাহলে এ কাজ তার জন্য একামত্ম কল্যাণকর হবে। তবে (এ সময়) রোযা রাখা তোমাদের জন্য খুবই ভাল; যদি তোমরা (রোযার উপকারিতা সম্পর্কে) জানতে পার।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৩,১৮৪)
উপরোক্ত বিধান নাযিল হওয়ার একবছর পর সুস্থদের ব্যাপারে যে ছাড় দেয়া হয়েছিল তা রহিত করে পুরো মাস রোযা রাখা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয় এবং রোগী ও মুসাফিরদের ব্যাপারে কাযার বিধান বহাল রাখা হয়। তবে যারা রোযা রাখতে অক্ষম তারা ফিদিয়া দিতে পারবে।
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيْضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
রমাযান মাস (এমন একটি মাস) যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে, আর এই কোরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক, সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং (হক ও বাতিলের) পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে যেন রোযা রাখে, তবে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে তবে সে পরবর্তী দিনগুলোতে গুণে গুণে সেই পরিমাণ কাযা করে নেবে। (এ সুযোগ দিয়ে) আলস্নাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কখনোই তোমাদের (জীবন) কঠিন করতে চান না। আলস্নাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তোমরা যেন গুণে গুণে (রোযার) সংখ্যাগুলো পূর্ণ করতে পার, আর আলস্নাহ তোমাদেরকে (জীবন যাপনের) যে পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন সেজন্য তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে পার এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পার। (সূরা বাকারা- ১৮৫)
রমাযান মাসে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যাওয়ার পর এর বিসত্মারিত বিধি-বিধান সম্পর্কে মুসলমানদেরকে ধারণা দেয়া হয় এবং রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর জেগে উঠে সহবাস করা ও খাওয়া-দাওয়া করাকে হালাল করে দেয়া হয়, আগে এসব হালাল ছিল না। ইবনে কাসীরের বর্ণনায় এসেছে :
কায়েস ইবনে সুরমাহ আনসারী রোযা রেখে সারাদিন পরিশ্রম করে বাড়ী ফিরে স্ত্রীকে বললেন, খাওয়ার কিছু আছে কি? স্ত্রী বললেন, না। এরপর স্ত্রী খাবারের খোঁজে বের হলেন। ফিরে এসে দেখেন স্বামী ঘুমিয়ে পড়েছেন। ফলে তিনি পরের দিন না খেয়ে রোযা রাখলেন। এক পর্যায়ে তিনি ক্ষুধার জ্বালায় বেঁহুশ হয়ে পড়েন। নবীর কাছে এ খবর দেয়া হল।
অপরদিকে উমর (রাঃ) রোযার রাতে ঘুমানোর পর জেগে উঠে স্ত্রীর সাথে সহবাস করে বসেন। পরে তিনি নিজেকে দোষী মনে করে আক্ষেপের সাথে নবীর কাছে গিয়ে নিজের ঘটনা বললেন। এসব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আলস্নাহ তা‘আলা সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াত নাযিল করে সুবহে সাদিক পর্যমত্ম সহবাস করা ও খাওয়া-দাওয়াকে বৈধ করে দিলেন।
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلٰى نِسَائِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُونَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ فَالْآنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللهُ لَكُمْ وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَا كَذلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ آيَاتِه لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
‘‘রোযার মাসে রাতের বেলায় তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলন করা তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে, তোমাদের স্ত্রীরা যেমনি তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ, ঠিক তোমরাও তাদের জন্য পোশাক সমতুল্য। আলস্নাহ এটা জানেন যে, তোমরা নিজেদের উপর খিয়ানত করে বসবে, তাই তিনি তোমাদের উপর দয়া করলেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। এখন চাইলে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করতে পার এবং (এ ব্যাপারে) আলস্নাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য যা (বিধি-বিধান কিংবা সমত্মান) লিখে রেখেছেন তা সন্ধান কর। আর তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পার যতক্ষণ পর্যমত্ম রাতের অন্ধকার রেখার ভিতর থেকে ভোরের শুভ্র আলোকরেখা পরিষ্কার না হয়। অতঃপর তোমরা রাত আসা পর্যমত্ম রোযা পূর্ণ কর। তবে মসজিদে যখন তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় থাকবে তখন নারী সম্ভোগ থেকে বিরত থকবে। এ হচ্ছে আলস্নাহর নির্ধারিত সীমারেখা। অতএব তোমরা কখনো এর কাছেও যেয়ো না, এভাবেই আলস্নাহ তা‘আলা তার যাবতীয় নিদর্শন মানুষের জন্য বলে দিয়েছেন, যেন তারা (এর আলোকে) আলস্নাহকে ভয় করতে পারে।’’
(সূরা বাকারা- ১৮৭)
يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ
লোকেরা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন! তা হল মানুষ ও হজ্জের জন্য সময় নির্দেশক। (সূরা বাকারা- ১৮৯)
মহান আলস্নাহ চাঁদকে মানুষের জন্য সময় নির্দেশক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এর দ্বারা মানুষ নিজেদের ইবাদাত ও অন্যান্য বিষয়ের সময় ও তারিখ নির্ধারণ করে থাকে। সুতরাং বান্দার প্রতি আলস্নাহর খাস রহমত এই যে, তিনি ফরয রোযা শুরম্ন হওয়ার বিষয়টি এমন একটি স্পষ্ট চিহ্নের উপর নির্ভরশীল করেছেন, যা সবার সামনে প্রকাশ পায়।
চাঁদ দেখে রোযা রাখতে হবে : মহানবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর। কিন্তু যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করে নাও। (সহীহ বুখারী, হা/১৯০৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৮)
সাক্ষ্য দ্বারা মাস প্রমাণ : রোযা ওয়াজিব হওয়ার জন্য প্রত্যেক মুসলিমকে চাঁদ দেখা শর্ত নয়; কিছু সংখ্যক লোক দেখলে, বরং সঠিক মতে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বসত্ম একজন ব্যক্তি দেখলেই তার দেখা মতে সেদেশের সকলের জন্য রোযা রাখা জরম্নরী হয়ে যাবে।
ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, একদা লোকেরা নতুন চাঁদ দেখতে সমবেত হল। আমি রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-কে খবর দিলাম যে, আমি চাঁদ দেখেছি। তিনি আমার এ খবরে রোযা রাখলেন এবং লোকদেরকে রোযা রাখতে আদেশ করলেন। (আবু দাউদ, হা/২৩৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৪৪৭)
চাঁদ দেখা না গেলে রমাযান প্রবেশ হওয়া প্রমাণ করার উপায় হল, শা’বান মাসকে ৩০ দিন পূর্ণ করে নেয়া। অবশ্য এ জন্য শা’বান মাসের শুরম্নর হিসাব রাখতে হবে।
পঞ্জিকার হিসাবের উপর নির্ভর করে রোযা রাখা বা ঈদ করা যাবে না।
পূর্ব সতর্কতামূলকভাবে রমাযানের এক দিন আগে থেকে রোযা রাখা বৈধ নয়। সুতরাং এ ব্যাপারে নিজেকে ভারগ্রসত্ম করা উচিত নয়।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন রমাযানের আগে একটি বা দু’টি রোযা না করে। তবে তার কথা ভিন্ন, যে সেদিনে রোযা রাখায় অভ্যসত্ম। যেমন- কেউ প্রতি সোমবার রোযা রাখে, এখন রমাযানের আগের দিন সোমবার হলে সে রোযা রাখতে পারে। (সহীহ বুখারী, হা/১৭১৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭০)
লোকেরা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন! তা হল মানুষ ও হজ্জের জন্য সময় নির্দেশক। (সূরা বাকারা- ১৮৯)
মহান আলস্নাহ চাঁদকে মানুষের জন্য সময় নির্দেশক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এর দ্বারা মানুষ নিজেদের ইবাদাত ও অন্যান্য বিষয়ের সময় ও তারিখ নির্ধারণ করে থাকে। সুতরাং বান্দার প্রতি আলস্নাহর খাস রহমত এই যে, তিনি ফরয রোযা শুরম্ন হওয়ার বিষয়টি এমন একটি স্পষ্ট চিহ্নের উপর নির্ভরশীল করেছেন, যা সবার সামনে প্রকাশ পায়।
চাঁদ দেখে রোযা রাখতে হবে : মহানবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর। কিন্তু যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করে নাও। (সহীহ বুখারী, হা/১৯০৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৮)
সাক্ষ্য দ্বারা মাস প্রমাণ : রোযা ওয়াজিব হওয়ার জন্য প্রত্যেক মুসলিমকে চাঁদ দেখা শর্ত নয়; কিছু সংখ্যক লোক দেখলে, বরং সঠিক মতে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বসত্ম একজন ব্যক্তি দেখলেই তার দেখা মতে সেদেশের সকলের জন্য রোযা রাখা জরম্নরী হয়ে যাবে।
ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, একদা লোকেরা নতুন চাঁদ দেখতে সমবেত হল। আমি রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-কে খবর দিলাম যে, আমি চাঁদ দেখেছি। তিনি আমার এ খবরে রোযা রাখলেন এবং লোকদেরকে রোযা রাখতে আদেশ করলেন। (আবু দাউদ, হা/২৩৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৪৪৭)
চাঁদ দেখা না গেলে রমাযান প্রবেশ হওয়া প্রমাণ করার উপায় হল, শা’বান মাসকে ৩০ দিন পূর্ণ করে নেয়া। অবশ্য এ জন্য শা’বান মাসের শুরম্নর হিসাব রাখতে হবে।
পঞ্জিকার হিসাবের উপর নির্ভর করে রোযা রাখা বা ঈদ করা যাবে না।
পূর্ব সতর্কতামূলকভাবে রমাযানের এক দিন আগে থেকে রোযা রাখা বৈধ নয়। সুতরাং এ ব্যাপারে নিজেকে ভারগ্রসত্ম করা উচিত নয়।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন রমাযানের আগে একটি বা দু’টি রোযা না করে। তবে তার কথা ভিন্ন, যে সেদিনে রোযা রাখায় অভ্যসত্ম। যেমন- কেউ প্রতি সোমবার রোযা রাখে, এখন রমাযানের আগের দিন সোমবার হলে সে রোযা রাখতে পারে। (সহীহ বুখারী, হা/১৭১৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭০)
আলস্নাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর যে কয়টি ইবাদাত ফরয করেছেন তার মধ্যে রোযা অন্যতম এবং ইসলামের মূল ভিত্তিসমূহের একটি।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - بُنِىَ الْإِسْلَامُ عَلٰى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَحَجِّ الْبَيْتِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
আবদুলস্নাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত : ১. এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আলস্নাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম আলস্নাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।
২. নামায কায়েম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হজ্জ পালন করা। ৫. রমাযান মাসে রোযা রাখা। (সহীহ বুখারী, হা/৮; সহীহ মুসলিম, হা/১২২)
যে ব্যক্তি রমাযান মাস পেয়েও এ মাসে ইবাদাত-বন্দেগী করে আলস্নাহকে রাজি খুশি করতে পারল না তার মত হতভাগা আর নেই। জিবরাঈল ফেরেশতা এবং নবী মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বদ্দু‘আ করেছেন ঐ ব্যক্তিকে যে রমাযান মাস পেলো অথচ তার গোনাহ ক্ষমা হওয়ার আগে রমাযান বিদায় হয়ে গেল।
যে ব্যক্তি বিনা ওজরে রমাযানের রোযা রাখে না সে ব্যক্তির দু’টি কারণ হতে পারে : হয় সে রোযাকে একটি ফরয ইবাদাত বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে না, আর না হয় সে অলসতা করে রোযা রাখছে না।
যদি কেউ রোযা ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে ও বলে যে, রোযা শরীয়তে ফরয নয়, তাহলে সে কাফির ও মুরতাদ। কারণ সে ইসলামের সর্বসম্মত একটি রম্নকন অস্বীকার করছে। তার এই মুরতাদ হওয়ার ফলে একজন মুরতাদের মাল ও পরিবারের ব্যাপারে যে বিধান আছে তা কার্যকর হবে। সরকারের কাছে সে হত্যাযোগ্য অপরাধী বলে গণ্য হবে। তার গোসল-কাফন ও জানাযা হবে না এবং মুসলিমদের গোরস্থানে তাকে দাফনও করা যাবে না। অবশ্য যদি কেউ নওমুসলিম হওয়ার ফলে অথবা ইসলামী পরিবেশ ও উলামা থেকে দূরে থাকার ফলে না জেনে এ ধরনের কথা বলে থাকে তাহলে তার কথা ভিন্ন।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - بُنِىَ الْإِسْلَامُ عَلٰى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَحَجِّ الْبَيْتِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
আবদুলস্নাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত : ১. এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আলস্নাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম আলস্নাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।
২. নামায কায়েম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হজ্জ পালন করা। ৫. রমাযান মাসে রোযা রাখা। (সহীহ বুখারী, হা/৮; সহীহ মুসলিম, হা/১২২)
যে ব্যক্তি রমাযান মাস পেয়েও এ মাসে ইবাদাত-বন্দেগী করে আলস্নাহকে রাজি খুশি করতে পারল না তার মত হতভাগা আর নেই। জিবরাঈল ফেরেশতা এবং নবী মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বদ্দু‘আ করেছেন ঐ ব্যক্তিকে যে রমাযান মাস পেলো অথচ তার গোনাহ ক্ষমা হওয়ার আগে রমাযান বিদায় হয়ে গেল।
যে ব্যক্তি বিনা ওজরে রমাযানের রোযা রাখে না সে ব্যক্তির দু’টি কারণ হতে পারে : হয় সে রোযাকে একটি ফরয ইবাদাত বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে না, আর না হয় সে অলসতা করে রোযা রাখছে না।
যদি কেউ রোযা ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে ও বলে যে, রোযা শরীয়তে ফরয নয়, তাহলে সে কাফির ও মুরতাদ। কারণ সে ইসলামের সর্বসম্মত একটি রম্নকন অস্বীকার করছে। তার এই মুরতাদ হওয়ার ফলে একজন মুরতাদের মাল ও পরিবারের ব্যাপারে যে বিধান আছে তা কার্যকর হবে। সরকারের কাছে সে হত্যাযোগ্য অপরাধী বলে গণ্য হবে। তার গোসল-কাফন ও জানাযা হবে না এবং মুসলিমদের গোরস্থানে তাকে দাফনও করা যাবে না। অবশ্য যদি কেউ নওমুসলিম হওয়ার ফলে অথবা ইসলামী পরিবেশ ও উলামা থেকে দূরে থাকার ফলে না জেনে এ ধরনের কথা বলে থাকে তাহলে তার কথা ভিন্ন।
যদি কেউ অলসতা করে রোযা না রাখে তাহলে সে কবিরা গোনাহ করল। সে ভয়ানক কঠিন শাসিত্মর সম্মুখীন হবে।
আবূ উমামা বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, আমি শুয়েছিলাম এমতাবস্থায় আমার নিকট দু’জন (ফেরেশ্তা) আসলেন। তারা আমার পার্শ্ব ধরে একটি পাহাড়ের নিকট নিয়ে গেলেন। তারা উভয়ে আমাকে বললেন, পাহাড়ে আরোহণ করম্নন। আমি বললাম, আমি এতে আরোহণ করতে পারব না। তারা বললেন, আমরা আপনার জন্য তা সহজ করে দেব। তখন আমি সেখানে আরোহণ করলাম, এমনকি আমি পাহাড়ের চূঁড়ায় পৌঁছে গেলাম। সেখানে আমি কঠিন চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম এ আওয়াজ কিসের? তারা বললেন, এ হল জাহান্নামীদের কান্না-কাটির আওয়াজ। অতঃপর তারা আমাকে নিয়ে সামনে চললেন, সেখানে আমি কিছু লোককে উল্টো ঝুলমত্ম অবস্থায় দেখলাম যাদের মুখ ফাটা এবং রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? তারা বললেন, এরা ঐ সব লোক যারা রোযার দিন সময় হওয়ার আগেই ইফতার করে নিত। অর্থাৎ তারা যথা নিয়মে রোযা রাখত না। (সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৪৯১)
মুসত্মফা মুহাম্মাদ আম্মারাহ তাঁর তারগীবের টীকায় বলেন, হাদীসের ভাবার্থ এই যে, মহান আলস্নাহ তাঁর নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামকে রোযা ভঙ্গকারীদের আযাব সম্বন্ধে অবগত করেছেন। তিনি দেখেছেন তাদের সেই দুর্দশা; তাদের আকার-আকৃতি ছিল বড়ই মর্মামিত্মক ও নিকৃষ্ট। কঠিন যন্ত্রণায় তারা কুকুর ও নেকড়ের মত চিৎকার করছে। তারা সাহায্য প্রার্থনা করছে অথচ কোন সাহায্যকারী নেই। তাদের পায়ের শেষ প্রামেত্ম জাহান্নামের রশি দিয়ে কসাইখানায় যবাই করা ছাগলের মত তাদেরকে নিম্নমুখী করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর তাদের মুখ ভরে রক্ত ঝরছে। নাঊযু বিলস্নাহি মিন যালিক!
আশা করি নাফরমান বেরোযাদার মুসলিম সম্প্রদায় এই আযাবের কথা জেনে আলস্নাহর নিকট তওবা করবে এবং আলস্নাহর সেই আযাবকে ভয় করে যথা নিয়মে রোযা পালন করবে।
আবূ উমামা বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, আমি শুয়েছিলাম এমতাবস্থায় আমার নিকট দু’জন (ফেরেশ্তা) আসলেন। তারা আমার পার্শ্ব ধরে একটি পাহাড়ের নিকট নিয়ে গেলেন। তারা উভয়ে আমাকে বললেন, পাহাড়ে আরোহণ করম্নন। আমি বললাম, আমি এতে আরোহণ করতে পারব না। তারা বললেন, আমরা আপনার জন্য তা সহজ করে দেব। তখন আমি সেখানে আরোহণ করলাম, এমনকি আমি পাহাড়ের চূঁড়ায় পৌঁছে গেলাম। সেখানে আমি কঠিন চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম এ আওয়াজ কিসের? তারা বললেন, এ হল জাহান্নামীদের কান্না-কাটির আওয়াজ। অতঃপর তারা আমাকে নিয়ে সামনে চললেন, সেখানে আমি কিছু লোককে উল্টো ঝুলমত্ম অবস্থায় দেখলাম যাদের মুখ ফাটা এবং রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? তারা বললেন, এরা ঐ সব লোক যারা রোযার দিন সময় হওয়ার আগেই ইফতার করে নিত। অর্থাৎ তারা যথা নিয়মে রোযা রাখত না। (সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৪৯১)
মুসত্মফা মুহাম্মাদ আম্মারাহ তাঁর তারগীবের টীকায় বলেন, হাদীসের ভাবার্থ এই যে, মহান আলস্নাহ তাঁর নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামকে রোযা ভঙ্গকারীদের আযাব সম্বন্ধে অবগত করেছেন। তিনি দেখেছেন তাদের সেই দুর্দশা; তাদের আকার-আকৃতি ছিল বড়ই মর্মামিত্মক ও নিকৃষ্ট। কঠিন যন্ত্রণায় তারা কুকুর ও নেকড়ের মত চিৎকার করছে। তারা সাহায্য প্রার্থনা করছে অথচ কোন সাহায্যকারী নেই। তাদের পায়ের শেষ প্রামেত্ম জাহান্নামের রশি দিয়ে কসাইখানায় যবাই করা ছাগলের মত তাদেরকে নিম্নমুখী করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর তাদের মুখ ভরে রক্ত ঝরছে। নাঊযু বিলস্নাহি মিন যালিক!
আশা করি নাফরমান বেরোযাদার মুসলিম সম্প্রদায় এই আযাবের কথা জেনে আলস্নাহর নিকট তওবা করবে এবং আলস্নাহর সেই আযাবকে ভয় করে যথা নিয়মে রোযা পালন করবে।
রোযার বিনিময় আলস্নাহ নিজ হাতে দিয়ে থাকেন :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلٰى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا الصَّوْمَ فَإِنَّه ̒ لِىْ وَأَنَا أَجْزِىْ بِه ̩ يَدَعُ شَهْوَتَه ̒ وَطَعَامَه ̒ مِنْ أَجْلِىْ .
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন : আদম সমত্মানের প্রত্যেকটি নেক আমলের সওয়াব নিম্নে দশ গুণ হতে সাতশ’ গুণ পর্যমত্ম বৃদ্ধি করা হয়। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তবে রোযা ব্যতীত। কারণ রোযা আমার জন্যই হয়ে থাকে, তাই এর বদলা আমি নিজেই দেব। যেহেতু বান্দা আমার জন্যই তার কামনা-বাসনা ও খাওয়া-দাওয়া ত্যাগ করেছে।’’ (মুসলিম হা/১১৫১)
মূলত সকল ইবাদাতই আলস্নাহর জন্য। তা সত্বেও রোযাকে খাস করে আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন ‘‘এটা আমার জন্য’’। এর কারণ হল, রোযা একটি গোপন ইবাদাত। অন্যান্য ইবাদাত পালনের সময় কিছু না কিছু বাহ্যিক কাঠামোর আশ্রয় নিতে হয়। যেমন- নামায পড়ার সময় ওঠা-বসা ও রম্নকু সিজদা করতে হয়। যাকাত আদায়ের সময় তা অপরকে দিতে হয়। হজ্জ করার সময় দীর্ঘ পথ সফর করতে হয় এসব অন্য লোক দেখতে পায়; কিন্তু রোযার মধ্যে তা নেই। রোযা যদি কেউ রেখে থাকে তবে তা আলস্নাহর জন্যই রাখবে। কারণ কেউ যদি রোযার সময় গোপনে কিছু খায় তবে কোন মানুষ তা দেখতে পায় না। এ কারণেই আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন, রোযা আমার জন্যই হয়ে থাকে।
আলস্নাহ তা‘আলা আরো বলেছেন ‘‘রোযার সওয়াব আমিই দেব’’। বান্দা যেহেতু কেবল আলস্নাহর সমত্মুষ্টির জন্য রোযা রাখে যার মধ্যে লোকদেখানো বা অহংকারের লেশমাত্র নেই, তাই আলস্নাহ তা‘আলা বান্দার প্রতি এতই সমত্মুষ্ট হন যে, এ আমলের সওয়াব দেয়ার জন্য তিনি কোন মাধ্যম অবলম্বন করেন না, কোন পরিমাণের হিসাবও করেন না বরং তিনি নিজ হাতেই যত খুশি তত নেকী বান্দাকে দিয়ে থাকেন অথবা আলস্নাহ তা‘আলা নিজেই রোযার বদলা হয়ে যান। সুবহা-নালস্নাহ!
রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে :
لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِه وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّه
রোযাদারের জন্য রয়েছে দু’টি আনন্দ। একটি তার ইফতারের সময় অপরটি তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সময়। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭৬৪; নাসাঈ, হা/২২১৩)
ইফতারের সময় আনন্দের কারণ হচ্ছে বান্দা সারাদিন রোযা রাখার পর যখন ইফতার সামনে নিয়ে বসে আর দেখে যে, এখনই তার রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে তখন সে নিজকে ধন্য মনে করে এবং রোযার পুরস্কার পাওয়ার আশা করে। প্রতিটি ঘরে ইফতারীর আয়োজন হয়। একে অপরকে ইফতারীর আদান-প্রদান করে। সবার মাঝে যেন আনন্দের হিলেস্নাল প্রবাহিত হতে থাকে। আবার সারাটি মাস রোযা রাখার পর যখন ঈদের দিনটি আসে তখন ঘরে-বাইরে সমগ্র মুসলিম জাতির মধ্যে এক আনন্দের স্রোত বইতে থাকে।
দ্বিতীয় আনন্দ হবে আখিরাতে। এটা পূর্ণাঙ্গ ও আসল আনন্দ। বান্দা যখন আলস্নাহর দরবারে উপস্থিত হবে এবং আলস্নাহ তা‘আলা বান্দাকে অগণিত পুরস্কার এবং বিশেষ মর্যাদা দেবেন তখনই সেই চরম আনন্দ লাভ হবে।
রোযাদারের মুখের গন্ধ মিশ্কে আম্বরের সুগন্ধ :
وَلَخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ
নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আলস্নাহর কাছে মিশ্কের খুশ্বু হতেও উত্তম। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭৬৪; নাসাঈ, হা/২২১৩)
সারাদিন রোযা রাখার ফলে উপবাসজনিত কারণে রোযাদারের মুখে যে গন্ধ সৃষ্টি হয় সেটা আলস্নাহর কাছে খুবই পবিত্র জিনিস। সুগন্ধকে মানুষ যেভাবে ভালবাসে এবং কাছে টানে রোযাদারকেও আলস্নাহ তা‘আলা সেভাবে ভালবাসেন এবং রহমতের ছায়াতলে টেনে নেন।
রোযাদারদের জন্য জান্নাতের বিশেষ দরজা রয়েছে :
عَنْ سَهْلٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ
সাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, জান্নাতের একটি বিশেষ দরজা রয়েছে যার নাম হল রাইয়ান। কিয়ামতের দিন কেবল রোযাদাররাই এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, তাদের ছাড়া অন্য কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী -১১৮৬)
জান্নাতের বিভিন্ন সত্মর ও দরজা রয়েছে এবং এগুলোর বিভিন্ন নাম রয়েছে, এর মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রাইয়ান অর্থ- পিপাসামুক্ত, রোযাদাররা দুনিয়াতে ক্ষুধা ও পিপাসা সহ্য করে রোযা রেখেছিল। আলস্নাহ তা‘আলা জান্নাতে তাদেরকে পরিতৃপ্ত করবেন। তাই যেখানে তাদেরকে রাখা হবে তার নাম দেয়া হয়েছে রাইয়ান বা পিপাসামুক্ত। আলস্নাহ তা‘আলা জান্নাতবাসীদেরকে বলবেন-
كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْئًا ۢبِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الْأَيَّامِ الْخَالِيَةِ
‘‘অতীতের দিনগুলোতে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে তার বিনিময়ে এখন তৃপ্তিসহকারে খাও এবং পান কর।’’ (সূরা হাক্কাহ- ২৪)
এছাড়াও রোযার মধ্যে বহু কল্যাণ ও উপকারিতা রয়েছে যেমন :
রোযার দ্বারা প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় জৈবিক ও পাশবিক নেশা নিসেত্মজ হয় পশুস্বভাব দূরীভূত হয় মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয় এবং মহান রাববুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতায় অমত্মর বিগলিত হয় রোযা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ রোযা মানুষকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাযত করে রোযার দ্বারা শারীরিক সুস্থতা অর্জিত হয় রোযার দ্বারা মানুষের অমত্মরে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয় মানুষের স্বভাবে বিনয় ও নম্রতা সৃষ্টি হয় মানব মনে আলস্নাহর মহত্ত্বের ধারণা জাগ্রত হয় অমত্মর্দৃষ্টি উন্মোচিত হয় দূরদর্শিতা প্রখর হয় মানুষের মধ্যে এক প্রকার রূহানী শক্তি সৃষ্টি হয় মানুষের মধ্যে ফেরেশতাদের স্বভাব সৃষ্টি হয় মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ এবং পরস্পরের প্রতি ভালবাসা তৈরী হয়।
রোযা পালন আলস্নাহর প্রতি গভীর প্রেমের অন্যতম নিদর্শন। কেননা কারো প্রতি ভালবাসা জন্মালে তাকে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে প্রেমিক পানাহার বর্জন করে এবং দুনিয়ার সবকিছুকে ভুলে যায়। ঠিক তেমনিভাবে রোযাদার ব্যক্তিও আলস্নাহর প্রেমে সবকিছু ছেড়ে দেয় এমনকি পানাহার পর্যমত্ম ভুলে যায়। তাই রোযা আলস্নাহ প্রেমের অন্যতম নিদর্শন।
রোযা মানুষের জন্য রূহানী খাদ্যতুল্য। যারা দুনিয়াতে রোযা রাখবে না তারা পরকালে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকবে।
রোযার দ্বারা আত্মার পরিশুদ্ধি এবং হৃদয়ের সজীবতা অর্জিত হয়। সর্বোপরি এর দ্বারা অমত্মরাত্মায় হাসিল হয় প্রচুর প্রশামিত্ম এবং দূরীভূত হয় অস্থিরতা। পক্ষামত্মরে পানাহারের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি ও অযথা গল্প-গুজব মানুষকে আলস্নাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে গোমরাহীতে লিপ্ত করে দেয়।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلٰى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا الصَّوْمَ فَإِنَّه ̒ لِىْ وَأَنَا أَجْزِىْ بِه ̩ يَدَعُ شَهْوَتَه ̒ وَطَعَامَه ̒ مِنْ أَجْلِىْ .
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন : আদম সমত্মানের প্রত্যেকটি নেক আমলের সওয়াব নিম্নে দশ গুণ হতে সাতশ’ গুণ পর্যমত্ম বৃদ্ধি করা হয়। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তবে রোযা ব্যতীত। কারণ রোযা আমার জন্যই হয়ে থাকে, তাই এর বদলা আমি নিজেই দেব। যেহেতু বান্দা আমার জন্যই তার কামনা-বাসনা ও খাওয়া-দাওয়া ত্যাগ করেছে।’’ (মুসলিম হা/১১৫১)
মূলত সকল ইবাদাতই আলস্নাহর জন্য। তা সত্বেও রোযাকে খাস করে আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন ‘‘এটা আমার জন্য’’। এর কারণ হল, রোযা একটি গোপন ইবাদাত। অন্যান্য ইবাদাত পালনের সময় কিছু না কিছু বাহ্যিক কাঠামোর আশ্রয় নিতে হয়। যেমন- নামায পড়ার সময় ওঠা-বসা ও রম্নকু সিজদা করতে হয়। যাকাত আদায়ের সময় তা অপরকে দিতে হয়। হজ্জ করার সময় দীর্ঘ পথ সফর করতে হয় এসব অন্য লোক দেখতে পায়; কিন্তু রোযার মধ্যে তা নেই। রোযা যদি কেউ রেখে থাকে তবে তা আলস্নাহর জন্যই রাখবে। কারণ কেউ যদি রোযার সময় গোপনে কিছু খায় তবে কোন মানুষ তা দেখতে পায় না। এ কারণেই আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন, রোযা আমার জন্যই হয়ে থাকে।
আলস্নাহ তা‘আলা আরো বলেছেন ‘‘রোযার সওয়াব আমিই দেব’’। বান্দা যেহেতু কেবল আলস্নাহর সমত্মুষ্টির জন্য রোযা রাখে যার মধ্যে লোকদেখানো বা অহংকারের লেশমাত্র নেই, তাই আলস্নাহ তা‘আলা বান্দার প্রতি এতই সমত্মুষ্ট হন যে, এ আমলের সওয়াব দেয়ার জন্য তিনি কোন মাধ্যম অবলম্বন করেন না, কোন পরিমাণের হিসাবও করেন না বরং তিনি নিজ হাতেই যত খুশি তত নেকী বান্দাকে দিয়ে থাকেন অথবা আলস্নাহ তা‘আলা নিজেই রোযার বদলা হয়ে যান। সুবহা-নালস্নাহ!
রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে :
لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِه وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّه
রোযাদারের জন্য রয়েছে দু’টি আনন্দ। একটি তার ইফতারের সময় অপরটি তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সময়। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭৬৪; নাসাঈ, হা/২২১৩)
ইফতারের সময় আনন্দের কারণ হচ্ছে বান্দা সারাদিন রোযা রাখার পর যখন ইফতার সামনে নিয়ে বসে আর দেখে যে, এখনই তার রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে তখন সে নিজকে ধন্য মনে করে এবং রোযার পুরস্কার পাওয়ার আশা করে। প্রতিটি ঘরে ইফতারীর আয়োজন হয়। একে অপরকে ইফতারীর আদান-প্রদান করে। সবার মাঝে যেন আনন্দের হিলেস্নাল প্রবাহিত হতে থাকে। আবার সারাটি মাস রোযা রাখার পর যখন ঈদের দিনটি আসে তখন ঘরে-বাইরে সমগ্র মুসলিম জাতির মধ্যে এক আনন্দের স্রোত বইতে থাকে।
দ্বিতীয় আনন্দ হবে আখিরাতে। এটা পূর্ণাঙ্গ ও আসল আনন্দ। বান্দা যখন আলস্নাহর দরবারে উপস্থিত হবে এবং আলস্নাহ তা‘আলা বান্দাকে অগণিত পুরস্কার এবং বিশেষ মর্যাদা দেবেন তখনই সেই চরম আনন্দ লাভ হবে।
রোযাদারের মুখের গন্ধ মিশ্কে আম্বরের সুগন্ধ :
وَلَخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ
নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আলস্নাহর কাছে মিশ্কের খুশ্বু হতেও উত্তম। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭৬৪; নাসাঈ, হা/২২১৩)
সারাদিন রোযা রাখার ফলে উপবাসজনিত কারণে রোযাদারের মুখে যে গন্ধ সৃষ্টি হয় সেটা আলস্নাহর কাছে খুবই পবিত্র জিনিস। সুগন্ধকে মানুষ যেভাবে ভালবাসে এবং কাছে টানে রোযাদারকেও আলস্নাহ তা‘আলা সেভাবে ভালবাসেন এবং রহমতের ছায়াতলে টেনে নেন।
রোযাদারদের জন্য জান্নাতের বিশেষ দরজা রয়েছে :
عَنْ سَهْلٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ
সাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, জান্নাতের একটি বিশেষ দরজা রয়েছে যার নাম হল রাইয়ান। কিয়ামতের দিন কেবল রোযাদাররাই এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, তাদের ছাড়া অন্য কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী -১১৮৬)
জান্নাতের বিভিন্ন সত্মর ও দরজা রয়েছে এবং এগুলোর বিভিন্ন নাম রয়েছে, এর মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রাইয়ান অর্থ- পিপাসামুক্ত, রোযাদাররা দুনিয়াতে ক্ষুধা ও পিপাসা সহ্য করে রোযা রেখেছিল। আলস্নাহ তা‘আলা জান্নাতে তাদেরকে পরিতৃপ্ত করবেন। তাই যেখানে তাদেরকে রাখা হবে তার নাম দেয়া হয়েছে রাইয়ান বা পিপাসামুক্ত। আলস্নাহ তা‘আলা জান্নাতবাসীদেরকে বলবেন-
كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْئًا ۢبِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الْأَيَّامِ الْخَالِيَةِ
‘‘অতীতের দিনগুলোতে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে তার বিনিময়ে এখন তৃপ্তিসহকারে খাও এবং পান কর।’’ (সূরা হাক্কাহ- ২৪)
এছাড়াও রোযার মধ্যে বহু কল্যাণ ও উপকারিতা রয়েছে যেমন :
রোযার দ্বারা প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় জৈবিক ও পাশবিক নেশা নিসেত্মজ হয় পশুস্বভাব দূরীভূত হয় মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয় এবং মহান রাববুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতায় অমত্মর বিগলিত হয় রোযা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ রোযা মানুষকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাযত করে রোযার দ্বারা শারীরিক সুস্থতা অর্জিত হয় রোযার দ্বারা মানুষের অমত্মরে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয় মানুষের স্বভাবে বিনয় ও নম্রতা সৃষ্টি হয় মানব মনে আলস্নাহর মহত্ত্বের ধারণা জাগ্রত হয় অমত্মর্দৃষ্টি উন্মোচিত হয় দূরদর্শিতা প্রখর হয় মানুষের মধ্যে এক প্রকার রূহানী শক্তি সৃষ্টি হয় মানুষের মধ্যে ফেরেশতাদের স্বভাব সৃষ্টি হয় মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ এবং পরস্পরের প্রতি ভালবাসা তৈরী হয়।
রোযা পালন আলস্নাহর প্রতি গভীর প্রেমের অন্যতম নিদর্শন। কেননা কারো প্রতি ভালবাসা জন্মালে তাকে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে প্রেমিক পানাহার বর্জন করে এবং দুনিয়ার সবকিছুকে ভুলে যায়। ঠিক তেমনিভাবে রোযাদার ব্যক্তিও আলস্নাহর প্রেমে সবকিছু ছেড়ে দেয় এমনকি পানাহার পর্যমত্ম ভুলে যায়। তাই রোযা আলস্নাহ প্রেমের অন্যতম নিদর্শন।
রোযা মানুষের জন্য রূহানী খাদ্যতুল্য। যারা দুনিয়াতে রোযা রাখবে না তারা পরকালে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকবে।
রোযার দ্বারা আত্মার পরিশুদ্ধি এবং হৃদয়ের সজীবতা অর্জিত হয়। সর্বোপরি এর দ্বারা অমত্মরাত্মায় হাসিল হয় প্রচুর প্রশামিত্ম এবং দূরীভূত হয় অস্থিরতা। পক্ষামত্মরে পানাহারের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি ও অযথা গল্প-গুজব মানুষকে আলস্নাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে গোমরাহীতে লিপ্ত করে দেয়।
ইসলামের আদেশ-নিষেধ পালন করলে সওয়াব হয় এ কথা সবারই জানা; কিন্তু কেবল সওয়াবই নয়, ইসলামের প্রতিটি আদেশ-নিষেধ পালনের মধ্যে ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিহিত রয়েছে কল্যাণ ও উপকারিতা। এ বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের যুগে যুক্তি, তর্ক ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে, ইসলামের প্রতিটি বিধান নিঃসন্দেহে কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক। রোযা তেমনি একটি অত্যমত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ ইসলামী বিধান। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে রোযা গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি মেশিন প্রসত্মুতকারী জানেন যে, উক্ত মেশিন ঠিক রাখার জন্য ও ভাল সার্ভিস দেয়ার জন্য কোন্ সময় কী ব্যবস্থা নিতে হবে। একইভাবে মানব দেহের নির্মাতা স্বয়ং আলস্নাহ তা‘আলাই ভাল জানেন শরীরকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখার জন্য এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য কী ব্যবস্থা নিতে হবে। উক্ত ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তিনি বছরে একমাস রোযা রাখা ফরয করেছেন। বিভিন্ন প্রকার রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে রোযার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। নিম্নে এ সংক্রামত্ম কিছু আলোচনা তুলে ধরছি।
উচ্চ রক্তচাপ :
রোযা শরীরের রক্ত প্রবাহকে পরিশোধন করে থাকে এবং সমগ্র প্রবাহ প্রণালীকে নবরূপ দান করে থাকে। রোযা উচ্চ রক্তচাপজনিত ব্যাধি এবং অন্যান্য মারাত্মক ব্যাধি কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস :
গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, রোযা রাখাতে ডায়াবেটিস রোগীদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তাদের সুগার নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। হৃদরোগীদের অস্থিরতা ও শ্বাস স্ফীতি হ্রাস পেয়েছে।
পাকস্থলীর রোগ ও আলসার :
রোযার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় পাকস্থলীর রোগীরা। রোযা পেপটিক আলসার এবং তজ্জনিত পাকস্থলীর দাহ্যতা ও এর প্রদাহ তাড়াতাড়ি উপশম করে। পাকস্থলী একটি বৃহদাকার পেশী বিশেষ। শরীরের অন্যান্য পেশীর মত এরও বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এক মাস রোযা রাখার ফলে পাকস্থলী ও অন্ত্র বিশ্রাম নেয়ার সময় পায় তখনই তা ক্ষতস্থান বা আলসার নিরাময়ে লেগে যায় এবং পূর্বাবস্থা পুনরম্নদ্ধারে নিয়োজিত হয়।
যারা মনে করেন যে, রোযা রাখলে পেটের শুল বেদনা বৃদ্ধি পায়, তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। সতের জন রোযাদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলীতে এসিড খুব বেশি বা কম, রোযা রাখার ফলে তাদের উভয় দোষই সেরে গেছে।
ধূমপান ত্যাগ :
উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসে ক্যান্সার ও হৃদরোগ থেকে বাঁচার জন্য ধূমপান ত্যাগ করা একামত্ম অপরিহার্য। রোযা ধুমপান থেকে বিরত থাকার একটি সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়।
কিডনী ও মূত্রথলি :
একমাস রোযা রাখার ফলে লিভার, কিডনী, ও মূত্রথলী প্রভৃতি অঙ্গসমূহ বিশ্রাম পায়। এতে অঙ্গগুলো বেশ উপকারিতা লাভ করে। কিডনী ও মূত্রথলীর নানা উপসর্গ রোযার ফলে নিরাময় হবার সম্ভাবনা আছে।
ওজন কমানো :
যারা বেশি মোটা এবং যাদের শরীরে মেদ থাকে রোযা রাখলে তাদের শরীরের চর্বি শরীরে ব্যবহৃত হয়ে শরীরে শক্তি যোগায় এবং দেহকে অস্বাভাবিক মোটা হতে বাধা দেয়। এতে শরীর ভাল থাকে এবং হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায় এবং শরীরের ওজন স্বাভাবিক হয়ে আসে।
প্রজনন অঙ্গ :
জৈবিক চাহিদাকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষেত্রে রোযার প্রতিক্রিয়া অত্যধিক। একবার জনৈক অতি দরিদ্র সাহাবী রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর নিকট বিবাহ মঞ্জুরির আবেদন করেছিলেন। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম এ অবস্থায় তাঁকে বিবাহের অনুমতি না দিয়ে রোযা রাখবার ব্যবস্থাপত্র দিয়েছিলেন। ইসলামের বিধান হল দারিদ্রের কারণে বিবাহ করতে না পারলে রোযা রেখে মনকে পবিত্র রাখা।
মসিত্মষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র :
রোযা মসিত্মষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে সর্বাধিক উজ্জীবিত করে। রোযা মসিত্মষ্কে রক্ত প্রবাহ সবল করে। স্নায়ুবিক দুর্বলতা এবং মসিত্মষ্কের অবসাদ দূর করে। যার ফলে মসিত্মষ্ক অধিক শক্তি অর্জন করতে পারে। এতে ধ্যান-ধারণা পরিষ্কার হয়। সুদীর্ঘ অনুশীলন এবং গভীর ধ্যান করা সম্ভব হয়। জ্ঞানীগণ যথার্থই বলেছেন, ‘‘ক্ষুধার্ত উদর জ্ঞানের উৎস’’।
Dr. Alex Heig বলেছেন, ‘‘রোযা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়, স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তি শক্তি বর্ধিত হয়, প্রীতি, ভালবাসা, সহানুভূতি, এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি প্রভৃতি বেড়ে যায়। খাদ্যে অরম্নচি দূর হয়।’’
মানসিক শক্তি ও শামিত্ম :
শারীরিক কতগুলো ব্যাধির উৎস হচ্ছে মানসিক অশামিত্ম। এ রোগগুলোকে বলা হয় সাইকোসোমাটিক ব্যাধি। মানুষ যদি রোযা রাখে তবে এসব ব্যাধির উপসর্গ কম হবার সম্ভবনা থাকে। কেননা রোযার মাধ্যমে মানুষের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মুখ ও দাঁত :
রমাযান মাসে খাদ্য গ্রহণের মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় বিধায় মুখ ও দাঁতের যত্নেরও কিছুটা পরিবর্তন লক্ষণীয়। সাহারীর পর, নামাযের পূর্বে এবং রাত্রে ঘুমাবার আগে ভাল করে মেসওয়াক বা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। নিম গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা উত্তম। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল নিম গাছের ডালের রস রোগের উত্তম কার্যকর প্রতিরোধক। মেসওয়াক করার সময় হাতের আঙ্গুল দিয়ে মাড়ি ম্যাসেজ করলে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এতে মাড়ি সুস্থ থাকে। সাহারীর পর দু’দাঁতের মধ্যখানে যেসব খাদ্যের কণা আটকে থাকে তা খিলাল দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ঘুম :
ঘুম মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় জৈব প্রক্রিয়া। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য এর প্রয়োজন অপরিসীম। নিদ্রা মানুষের দুশ্চিমত্মাগুলোকে কমিয়ে এনে মানসিক প্রশামিত্ম দান করে। সেজন্য কোরআনে কয়েক জায়গায় ঘুমকে শামিত্ম ও আরামের উপায় বলা হয়েছে। যেমন : সূরা নাবার ৯ ও ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে: ‘‘তোমাদের জন্য নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম এবং রাতকে করেছি আবরণ’’।
তবে মাত্রাতিরিক্ত ঘুম ভাল নয়। একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ৫-৬ ঘন্টা ঘুমাতে পারে। যারা বেশি ঘুমায় তাদের চেয়ে যারা কম ঘুমায় তারা অধিক পরিশ্রমী এবং কর্তব্যনিষ্ঠ। তারাই জীবনে সফলকাম হয়। রমাযান মাসে কম ঘুমানোর ট্রেনিংটা জীবনে সাফল্য বয়ে আনতে সাহায্য করে।
উচ্চ রক্তচাপ :
রোযা শরীরের রক্ত প্রবাহকে পরিশোধন করে থাকে এবং সমগ্র প্রবাহ প্রণালীকে নবরূপ দান করে থাকে। রোযা উচ্চ রক্তচাপজনিত ব্যাধি এবং অন্যান্য মারাত্মক ব্যাধি কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস :
গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, রোযা রাখাতে ডায়াবেটিস রোগীদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তাদের সুগার নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। হৃদরোগীদের অস্থিরতা ও শ্বাস স্ফীতি হ্রাস পেয়েছে।
পাকস্থলীর রোগ ও আলসার :
রোযার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় পাকস্থলীর রোগীরা। রোযা পেপটিক আলসার এবং তজ্জনিত পাকস্থলীর দাহ্যতা ও এর প্রদাহ তাড়াতাড়ি উপশম করে। পাকস্থলী একটি বৃহদাকার পেশী বিশেষ। শরীরের অন্যান্য পেশীর মত এরও বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এক মাস রোযা রাখার ফলে পাকস্থলী ও অন্ত্র বিশ্রাম নেয়ার সময় পায় তখনই তা ক্ষতস্থান বা আলসার নিরাময়ে লেগে যায় এবং পূর্বাবস্থা পুনরম্নদ্ধারে নিয়োজিত হয়।
যারা মনে করেন যে, রোযা রাখলে পেটের শুল বেদনা বৃদ্ধি পায়, তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। সতের জন রোযাদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলীতে এসিড খুব বেশি বা কম, রোযা রাখার ফলে তাদের উভয় দোষই সেরে গেছে।
ধূমপান ত্যাগ :
উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসে ক্যান্সার ও হৃদরোগ থেকে বাঁচার জন্য ধূমপান ত্যাগ করা একামত্ম অপরিহার্য। রোযা ধুমপান থেকে বিরত থাকার একটি সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়।
কিডনী ও মূত্রথলি :
একমাস রোযা রাখার ফলে লিভার, কিডনী, ও মূত্রথলী প্রভৃতি অঙ্গসমূহ বিশ্রাম পায়। এতে অঙ্গগুলো বেশ উপকারিতা লাভ করে। কিডনী ও মূত্রথলীর নানা উপসর্গ রোযার ফলে নিরাময় হবার সম্ভাবনা আছে।
ওজন কমানো :
যারা বেশি মোটা এবং যাদের শরীরে মেদ থাকে রোযা রাখলে তাদের শরীরের চর্বি শরীরে ব্যবহৃত হয়ে শরীরে শক্তি যোগায় এবং দেহকে অস্বাভাবিক মোটা হতে বাধা দেয়। এতে শরীর ভাল থাকে এবং হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায় এবং শরীরের ওজন স্বাভাবিক হয়ে আসে।
প্রজনন অঙ্গ :
জৈবিক চাহিদাকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষেত্রে রোযার প্রতিক্রিয়া অত্যধিক। একবার জনৈক অতি দরিদ্র সাহাবী রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর নিকট বিবাহ মঞ্জুরির আবেদন করেছিলেন। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম এ অবস্থায় তাঁকে বিবাহের অনুমতি না দিয়ে রোযা রাখবার ব্যবস্থাপত্র দিয়েছিলেন। ইসলামের বিধান হল দারিদ্রের কারণে বিবাহ করতে না পারলে রোযা রেখে মনকে পবিত্র রাখা।
মসিত্মষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র :
রোযা মসিত্মষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে সর্বাধিক উজ্জীবিত করে। রোযা মসিত্মষ্কে রক্ত প্রবাহ সবল করে। স্নায়ুবিক দুর্বলতা এবং মসিত্মষ্কের অবসাদ দূর করে। যার ফলে মসিত্মষ্ক অধিক শক্তি অর্জন করতে পারে। এতে ধ্যান-ধারণা পরিষ্কার হয়। সুদীর্ঘ অনুশীলন এবং গভীর ধ্যান করা সম্ভব হয়। জ্ঞানীগণ যথার্থই বলেছেন, ‘‘ক্ষুধার্ত উদর জ্ঞানের উৎস’’।
Dr. Alex Heig বলেছেন, ‘‘রোযা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়, স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তি শক্তি বর্ধিত হয়, প্রীতি, ভালবাসা, সহানুভূতি, এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি প্রভৃতি বেড়ে যায়। খাদ্যে অরম্নচি দূর হয়।’’
মানসিক শক্তি ও শামিত্ম :
শারীরিক কতগুলো ব্যাধির উৎস হচ্ছে মানসিক অশামিত্ম। এ রোগগুলোকে বলা হয় সাইকোসোমাটিক ব্যাধি। মানুষ যদি রোযা রাখে তবে এসব ব্যাধির উপসর্গ কম হবার সম্ভবনা থাকে। কেননা রোযার মাধ্যমে মানুষের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মুখ ও দাঁত :
রমাযান মাসে খাদ্য গ্রহণের মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় বিধায় মুখ ও দাঁতের যত্নেরও কিছুটা পরিবর্তন লক্ষণীয়। সাহারীর পর, নামাযের পূর্বে এবং রাত্রে ঘুমাবার আগে ভাল করে মেসওয়াক বা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। নিম গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা উত্তম। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল নিম গাছের ডালের রস রোগের উত্তম কার্যকর প্রতিরোধক। মেসওয়াক করার সময় হাতের আঙ্গুল দিয়ে মাড়ি ম্যাসেজ করলে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এতে মাড়ি সুস্থ থাকে। সাহারীর পর দু’দাঁতের মধ্যখানে যেসব খাদ্যের কণা আটকে থাকে তা খিলাল দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ঘুম :
ঘুম মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় জৈব প্রক্রিয়া। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য এর প্রয়োজন অপরিসীম। নিদ্রা মানুষের দুশ্চিমত্মাগুলোকে কমিয়ে এনে মানসিক প্রশামিত্ম দান করে। সেজন্য কোরআনে কয়েক জায়গায় ঘুমকে শামিত্ম ও আরামের উপায় বলা হয়েছে। যেমন : সূরা নাবার ৯ ও ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে: ‘‘তোমাদের জন্য নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম এবং রাতকে করেছি আবরণ’’।
তবে মাত্রাতিরিক্ত ঘুম ভাল নয়। একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ৫-৬ ঘন্টা ঘুমাতে পারে। যারা বেশি ঘুমায় তাদের চেয়ে যারা কম ঘুমায় তারা অধিক পরিশ্রমী এবং কর্তব্যনিষ্ঠ। তারাই জীবনে সফলকাম হয়। রমাযান মাসে কম ঘুমানোর ট্রেনিংটা জীবনে সাফল্য বয়ে আনতে সাহায্য করে।
প্রাপ্তবয়স্ক, বুদ্ধিসম্পন্ন, সক্ষম, মুকীম মুসলমানের উপর রোযা ফরয। অমুসলিমের উপর রোযা ফরয নয়, সে রোযা রাখলেও তা আলস্নাহর দরবারে কবুল হবে না। যেহেতু কোন ইবাদাত কবুল হওয়ার জন্য মূল শর্ত হল ইসলাম গ্রহণ করা। মহান আলস্নাহ বলেন,
وَمَا مَنَعَهُمْ أَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهِ
‘‘তাদের দান গ্রহণে বাধা কেবল এই ছিল যে, তারা আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে’’ (সূরা তওবা- ৫৪)। অমুসলিমের দানের মত জিনিস যদি কবুল না হয়, তাহলে অন্যান্য ইবাদাত কীভাবে কবুল হবে?
অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে পূর্বের রোযা কাযা করতে হবে না।
قُلْ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا إِنْ يَنْتَهُوْا يُغْفَرْ لَهُمْ مَّا قَدْ سَلَفَ
‘‘কাফিরদেরকে বলে দাও! যদি তারা কুফরী থেকে বিরত হয়, তাহলে তাদের অতীতের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’ (সূরা আনফাল- ৩৮)
নাবালক শিশুর উপর রোযা ফরয নয়। মহানবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, ‘‘তিন ব্যক্তি থেকে (পাপ লিখার) কলম তুলে নেয়া হয়েছে; ১. পাগলের নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়। ২. ঘুমমত্ম ব্যক্তির নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়। ৩. শিশুর নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে বালেগ হয়। (সুনানে নাসাঈ, হা/৩৪৩২; ইবনে মাজাহ, হা/২০৪১)
অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য শিশুদেরকে রোযা রাখার নির্দেশ দিতে হবে। শিশু রোযা রাখলে শুদ্ধ হবে এবং সওয়াবও পাবে। আর তার পিতা-মাতার জন্যও রয়েছে তরবিয়ত ও ভাল কাজের নির্দেশ দেয়ার সওয়াব। রম্নবাইয়্যি বিনতে মুআওয়াজ (রাঃ) বলেন, ‘‘আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে রোযা রাখাতাম এবং তাদের জন্য খেলনা রাখতাম। তাদের মধ্যে কেউ যখন খাবারের জন্য কাঁদত তখন আমরা ঐ খেলনা দিতাম। এভাবে ইফতারের সময় হয়ে যেত।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৯৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৭২৫)
উলেস্নখ্য যে, বালেগ হওয়ার লক্ষণ হল : ১. স্বপ্নদোষ বা অন্য প্রকারে বীর্যপাত হওয়া। ২. নাভির নিচে মোটা লোম গজানো। ৩. অথবা ১৫ বছর বয়স হওয়া। ৪. বালিকাদের ক্ষেত্রে একটি লক্ষণ হল মাসিক শুরম্ন হওয়া। বালিকার মাসিকের রক্ত আসতে শুরম্ন হলেই সে সাবালিকা; যদিও তার বয়স ১০ বছর।
(আশ্শারহুল মুমতে)
পাগলের উপর রোযা রাখা অথবা রোযার পরিবর্তে দরিদ্রকে আহার করানো ওয়াজিব নয়। কেউ যদি কোন রোগ বা আঘাত ইত্যাদির কারণে বেঁহুশ বা অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে তার রোযা নষ্ট হয় না। যেহেতু সে জ্ঞান থাকা অবস্থায় রোযার নিয়ত করেছে। মূর্ছা ও জ্বিনে ধরা রোগীরও এই বিধান।
রোযার মাসে কোন কাফির মুসলমান হলে, কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালিগ হলে এবং পাগলের পাগলামী সেরে গেলে রমাযানের বাকী দিনগুলোতে রোযা রাখতে হবে।
হায়িয (মাসিক বা ঋতুস্রাব) ও নিফাসগ্রসত্ম (সমত্মান প্রসবোত্তর রক্ত যাওয়া) মহিলারা হায়িয ও নিফাস চলাকালে রোযা রাখবে না। তারা পরে তাদের ছুটে যাওয়া রোযার কাযা আদায় করবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৭৮৯; নাসাঈ, হা/২৩১৮)
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলাদের যদি গর্ভাবস্থায় বা দুগ্ধদানের কারণে রোযা রাখতে কষ্ট হয় অথবা তাদের সমত্মানদের প্রাণহানীর আশংকা করে তাহলে তারা রোযা রাখবে না। পরে যখন সুবিধা হয় এবং আশংকা দূর হয়ে যায় তখন কাযা করে নেবে। (তিরমিযী, হা/৭১৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৬৭)
স্থায়ী কারণে রোযা রাখতে অক্ষম যেমন, অতি বৃদ্ধ এবং এমন রোগী যার রোগ ভাল হওয়ার আশা করা যায় না তাদের প্রতিদিনের রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে আহার করাতে হবে।
মিসকীনকে খাদ্য দানের নিয়ম :
খাবার তৈরি করে একদিনে রোযার সংখ্যার সমপরিমাণ মিসকীনকে খাওয়ায়ে দেবে। অথবা একজন মিসকীনকেই ঐ পরিমাণ দিন খাওয়াবে। অথবা প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে এক ফিতরা পরিমাণ খাদ্য (চাল, গম ইত্যাদি) মিসকীনকে দান করে দেবে।
যেসব রোগীর রোগ সাময়িক এবং তা ভাল হওয়ার আশা আছে তারা কষ্ট হলে রোযা রাখবে না। সুস্থ হওয়ার পর রোযার কাযা করে নেবে।
فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ
আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘যদি তোমাদের মধ্যে কেউ রোযার মাসে অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা সফরে থাকে তাহলে পরে গুণে গুণে সেই দিনগুলো পূর্ণ করে নেবে।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৪)
মুসাফির ইচ্ছা করলে রোযা রাখবে অথবা রোযা রাখবে না। পরে সে ছুটে যাওয়া রোযার কাযা পূর্ণ করবে।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রমাযানের ষোল দিন গত হওয়ার পর আমরা নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর সাথে জিহাদ করেছিলাম, তখন আমাদের মধ্যে কেউ কেউ রোযা রেখেছিলেন আবার কেউ কেউ রাখেননি; কিন্তু এ কারণে কেউ কাউকে দোষারোপ করেননি। (সহীহ মুসলিম, হা/২৬৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭২৩)
সফরে যদি রোযা রাখার পরিবেশ ভাল থাকে এবং কষ্ট না হয় তাহলে রোযা রাখাই উত্তম, আর কষ্ট হলে না রাখা উত্তম।
وَمَا مَنَعَهُمْ أَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهِ
‘‘তাদের দান গ্রহণে বাধা কেবল এই ছিল যে, তারা আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে’’ (সূরা তওবা- ৫৪)। অমুসলিমের দানের মত জিনিস যদি কবুল না হয়, তাহলে অন্যান্য ইবাদাত কীভাবে কবুল হবে?
অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে পূর্বের রোযা কাযা করতে হবে না।
قُلْ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا إِنْ يَنْتَهُوْا يُغْفَرْ لَهُمْ مَّا قَدْ سَلَفَ
‘‘কাফিরদেরকে বলে দাও! যদি তারা কুফরী থেকে বিরত হয়, তাহলে তাদের অতীতের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’ (সূরা আনফাল- ৩৮)
নাবালক শিশুর উপর রোযা ফরয নয়। মহানবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, ‘‘তিন ব্যক্তি থেকে (পাপ লিখার) কলম তুলে নেয়া হয়েছে; ১. পাগলের নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়। ২. ঘুমমত্ম ব্যক্তির নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়। ৩. শিশুর নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে বালেগ হয়। (সুনানে নাসাঈ, হা/৩৪৩২; ইবনে মাজাহ, হা/২০৪১)
অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য শিশুদেরকে রোযা রাখার নির্দেশ দিতে হবে। শিশু রোযা রাখলে শুদ্ধ হবে এবং সওয়াবও পাবে। আর তার পিতা-মাতার জন্যও রয়েছে তরবিয়ত ও ভাল কাজের নির্দেশ দেয়ার সওয়াব। রম্নবাইয়্যি বিনতে মুআওয়াজ (রাঃ) বলেন, ‘‘আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে রোযা রাখাতাম এবং তাদের জন্য খেলনা রাখতাম। তাদের মধ্যে কেউ যখন খাবারের জন্য কাঁদত তখন আমরা ঐ খেলনা দিতাম। এভাবে ইফতারের সময় হয়ে যেত।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৯৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৭২৫)
উলেস্নখ্য যে, বালেগ হওয়ার লক্ষণ হল : ১. স্বপ্নদোষ বা অন্য প্রকারে বীর্যপাত হওয়া। ২. নাভির নিচে মোটা লোম গজানো। ৩. অথবা ১৫ বছর বয়স হওয়া। ৪. বালিকাদের ক্ষেত্রে একটি লক্ষণ হল মাসিক শুরম্ন হওয়া। বালিকার মাসিকের রক্ত আসতে শুরম্ন হলেই সে সাবালিকা; যদিও তার বয়স ১০ বছর।
(আশ্শারহুল মুমতে)
পাগলের উপর রোযা রাখা অথবা রোযার পরিবর্তে দরিদ্রকে আহার করানো ওয়াজিব নয়। কেউ যদি কোন রোগ বা আঘাত ইত্যাদির কারণে বেঁহুশ বা অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে তার রোযা নষ্ট হয় না। যেহেতু সে জ্ঞান থাকা অবস্থায় রোযার নিয়ত করেছে। মূর্ছা ও জ্বিনে ধরা রোগীরও এই বিধান।
রোযার মাসে কোন কাফির মুসলমান হলে, কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালিগ হলে এবং পাগলের পাগলামী সেরে গেলে রমাযানের বাকী দিনগুলোতে রোযা রাখতে হবে।
হায়িয (মাসিক বা ঋতুস্রাব) ও নিফাসগ্রসত্ম (সমত্মান প্রসবোত্তর রক্ত যাওয়া) মহিলারা হায়িয ও নিফাস চলাকালে রোযা রাখবে না। তারা পরে তাদের ছুটে যাওয়া রোযার কাযা আদায় করবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৭৮৯; নাসাঈ, হা/২৩১৮)
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলাদের যদি গর্ভাবস্থায় বা দুগ্ধদানের কারণে রোযা রাখতে কষ্ট হয় অথবা তাদের সমত্মানদের প্রাণহানীর আশংকা করে তাহলে তারা রোযা রাখবে না। পরে যখন সুবিধা হয় এবং আশংকা দূর হয়ে যায় তখন কাযা করে নেবে। (তিরমিযী, হা/৭১৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৬৭)
স্থায়ী কারণে রোযা রাখতে অক্ষম যেমন, অতি বৃদ্ধ এবং এমন রোগী যার রোগ ভাল হওয়ার আশা করা যায় না তাদের প্রতিদিনের রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে আহার করাতে হবে।
মিসকীনকে খাদ্য দানের নিয়ম :
খাবার তৈরি করে একদিনে রোযার সংখ্যার সমপরিমাণ মিসকীনকে খাওয়ায়ে দেবে। অথবা একজন মিসকীনকেই ঐ পরিমাণ দিন খাওয়াবে। অথবা প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে এক ফিতরা পরিমাণ খাদ্য (চাল, গম ইত্যাদি) মিসকীনকে দান করে দেবে।
যেসব রোগীর রোগ সাময়িক এবং তা ভাল হওয়ার আশা আছে তারা কষ্ট হলে রোযা রাখবে না। সুস্থ হওয়ার পর রোযার কাযা করে নেবে।
فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ
আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘যদি তোমাদের মধ্যে কেউ রোযার মাসে অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা সফরে থাকে তাহলে পরে গুণে গুণে সেই দিনগুলো পূর্ণ করে নেবে।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৪)
মুসাফির ইচ্ছা করলে রোযা রাখবে অথবা রোযা রাখবে না। পরে সে ছুটে যাওয়া রোযার কাযা পূর্ণ করবে।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রমাযানের ষোল দিন গত হওয়ার পর আমরা নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর সাথে জিহাদ করেছিলাম, তখন আমাদের মধ্যে কেউ কেউ রোযা রেখেছিলেন আবার কেউ কেউ রাখেননি; কিন্তু এ কারণে কেউ কাউকে দোষারোপ করেননি। (সহীহ মুসলিম, হা/২৬৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭২৩)
সফরে যদি রোযা রাখার পরিবেশ ভাল থাকে এবং কষ্ট না হয় তাহলে রোযা রাখাই উত্তম, আর কষ্ট হলে না রাখা উত্তম।
ইচ্ছা করে কোন কিছু খেলে বা পান করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমনটি কেউ করলে তাকে বিনীতভাবে তাওবা করতে হবে এবং ঐ রোযার কাযা ও কাফফারাহ আদায় করতে হবে। তবে কেউ যদি ভুলবশতঃ কিছু খেয়ে ফেলে তবে তার রোযা ভঙ্গ হবে না। রোযার কথা মনে পড়ার সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ করে দেবে। অন্য কেউ দেখলে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত। আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘তোমরা ভাল কাজে একে অপরের সহযোগিতা করো, তবে পাপ কাজে একে অপরের সহযোগিতা করো না।’’ (সূরা মায়িদা- ২)
রোযা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমন ব্যক্তিকে খালিস নিয়তে তাওবাহ করতে হবে এবং তাকে কাফফারাহ আদায় করতে হবে।
রোযার কাফফারাহ :
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, একজন লোক রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর নিকট এসে বলতে লাগল, হে আলস্নাহর রাসূল! আমি ধ্বংস হয়েছি। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম জিজ্ঞেস করলেন, কোন জিনিস তোমাকে ধ্বংস করেছে? সে বলল, আমি রমাযান মাসে দিনের বেলায় রোযা অবস্থায় স্ত্রীসঙ্গমে লিপ্ত হয়ে পড়েছি। তার কাফফারার জন্য আলস্নাহর নবী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি গোলাম আজাদ করার মতো সামর্থ্য আছে? সে বলল, না। আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এক নাগাড়ে দুই মাস রোযা রাখতে পারবে কি? সে বলল, না। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি ৬০ জন মিসকীনকে খাবার দিতে পারবে? সে বলল, না। নবী তাকে বললেন, তুমি বসো, এরপর নবীর নিকট একটি বড় খেজুর ভর্তি ঝুড়ি আনা হল। নবী বললেন, তুমি এগুলো সাদাকাহ করে দাও। তখন সে বলল, ‘‘মদীনার একপ্রামত্ম থেকে অপর প্রামত্ম পর্যমত্ম আমার চেয়ে গরীব আর কেউ নেই।’’ দয়ার নবী তার এ কথা শুনে হাসলেন, এমনকি তাঁর সামনের দাঁতগুলো প্রকাশিত হয়েছিল। এবার নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বললেন, এগুলো তুমি নাও এবং তোমার পরিবারকে খেতে দাও। (সহীহ বুখারী, হা/১৯৩৬; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৬৫৭)
স্বামী-স্ত্রী উভয়ে রাজী হয়ে সহবাস করলে উভয়ের উপর কাফফারাহ ওয়াজিব হবে। আর যদি স্বামী স্ত্রীকে বাধ্য করে তবে স্ত্রী কেবল কাযা করবে আর স্বামীকে কাযা ও কাফফারাহ উভয়টিই আদায় করতে হবে।
যে নিজেকে সংযত রাখতে পারে তার জন্য স্ত্রীকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা ও আলিঙ্গন করা জায়েয আছে। বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে আছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম রোযা অবস্থায় চুম্বন করতেন, মাখামাখি করতেন, কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিলেন। তবে যে অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে যায় তার জন্য এসব থেকে বিরত থাকা উচিত; নতুবা জায়েযের পথ ধরে রোযা ভঙ্গ হওয়ার মত কিছু ঘটে যেতে পারে। আলস্নাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেছেন, ‘‘রোযাদার আমার সমত্মুষ্টির জন্য তার যৌন আকাঙ্ক্ষাকে ত্যাগ করেছে।’’
স্বেচ্ছায় যে কোনভাবে বীর্যপাত ঘটালে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
রোযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভঙ্গ হবে না, কারণ এটা বান্দার ইচ্ছাধীন নয়, অনুরূপভাবে যদি কোন রোগজনিত কারণে এমনিতেই বীর্যপাত হয়ে যায় অথবা সাদা পানি বের হয় তাতেও রোযা ভঙ্গ হবে না।
রাতে গোসল ফরয হয়েছে; কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখা গেল যে, গোসল করতে গেলে সাহারী খাওয়ার সময় থাকবে না, এ অবস্থায় আগে খেয়ে নেবে এবং পরে গোসল করে ফজরের নামায পড়বে। আযানের পরে গোসল করলেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
রোযা অবস্থায় যদি এমন কোন ইঞ্জেকশন বা সস্নাইন নেয় যা পুষ্টি বা খাদ্যের কাজে ব্যবহৃত হয়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে অন্যান্য ইঞ্জেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে না।
ইচ্ছা করে বমি করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে, পরে কাযা করতে হবে। কিন্তু অনিচ্ছায় যদি কারো বমি আসে তবে রোযা ভঙ্গ হবে না। (তিরমিযী, হা/৭২৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৭৬)
রোযা অবস্থায় মহিলাদের হায়িয বা নিফাস শুরম্ন হলে রোযা ভঙ্গ হবে। পরে কাযা করতে হবে। নিফাস বা মাসিক চলাকালে-তাসবীহ পড়া, আলস্নাহর কাছে দু‘আ করা, তাওবা-ইসেত্মগফার করা, কালিমা পড়া, নবীর উপর দরূদ পাঠ করা এবং ইসলামী বই-কিতাব পড়া এসব করতে কোন নিষেধ নেই; বরং এগুলো করা উচিত; তাহলে আলস্নাহর কথা মনে থাকবে। শয়তান ওয়াসওয়াসা দিতে পারবে না।
রাত্রে ফজরের আযানের একটু পূর্বে যদি হায়িয বা নিফাস বন্ধ হয়ে যায় অথবা সময়সীমা শেষ হয়ে যায় তাহলে এই দিনের রোযা রাখতে হবে, এ ব্যাপারে মহিলাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
রমাযানের কাযা রোযা দেরীতেও আদায় করা চলে, তবে তাড়াতাড়ি আদায় করে নেয়া ভাল। কারণ হায়াত-মউতের খবর তো কেউ জানে না।
ফরজ রোযা দায়িত্বে রেখে কেউ যদি মারা যায় তবে তার অলি (অভিভাবকরা) তার পরিবর্তে ফিদিয়া আদায় করবে।
এমন কিছু বিষয় আছে যা করলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। তাই এগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ থাকা উচিত নয়। যেমন- রোযা অবস্থায় মেসওয়াক করা, গোসল করা, শরীরে তেল মালিশ করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, নাকে, কানে ও চোখে ঔষধ দেয়া, চোখে সুরমা ব্যবহার করা, মুখের থুথু গিলে ফেলা, প্রচ- গরমের কারণে শরীর ঠান্ডা করা, মাথায় পানি ঢালা। বিশেষ প্রয়োজনে তরকারীর লবণ বা ঝাল মুখে দিয়ে পরীক্ষা করা অথবা কোন খাদ্যদ্রব্য চিবিয়ে শিশুর মুখে দেয়া ইত্যাদি।
এমন কিছু কাজ আছে যা করলে রোযা একেবারে ভঙ্গ হয়ে যায় না; তবে রোযা ত্রম্নটিযুক্ত হয় এবং রোযার সওয়াব কমে যায়। যেমন- গীবত ও চোগলখোরী করা, পরস্পরে গালা-গালি করা, মারা-মারি করা, মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মুসলমানের মান-ইজ্জত নষ্ট করা, রাগান্বিত হওয়া, মূল্যবান সময়কে অনর্থক কাজে নষ্ট করা, অশস্নীল গান অথবা মিউজিক সম্বলিত যে কোন গান শ্রবণ করা, টেলিভিশনের পর্দায় অশস্নীল ছবি দেখা, নারীদের বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করা, নারী-পুরম্নষের অবাধ মেলামেশা ও আড্ডা দেয়া ইত্যাদি। এ সকল কাজ সব সময়ের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ; তাই রমাযানে তো বটেই; রমাযান ছাড়া অন্যান্য সময়েও এসকল কাজ থেকে দূরে থাকা মুসলিম নর-নারীর উপর একামত্ম কর্তব্য।
রোযা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমন ব্যক্তিকে খালিস নিয়তে তাওবাহ করতে হবে এবং তাকে কাফফারাহ আদায় করতে হবে।
রোযার কাফফারাহ :
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, একজন লোক রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর নিকট এসে বলতে লাগল, হে আলস্নাহর রাসূল! আমি ধ্বংস হয়েছি। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম জিজ্ঞেস করলেন, কোন জিনিস তোমাকে ধ্বংস করেছে? সে বলল, আমি রমাযান মাসে দিনের বেলায় রোযা অবস্থায় স্ত্রীসঙ্গমে লিপ্ত হয়ে পড়েছি। তার কাফফারার জন্য আলস্নাহর নবী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি গোলাম আজাদ করার মতো সামর্থ্য আছে? সে বলল, না। আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এক নাগাড়ে দুই মাস রোযা রাখতে পারবে কি? সে বলল, না। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি ৬০ জন মিসকীনকে খাবার দিতে পারবে? সে বলল, না। নবী তাকে বললেন, তুমি বসো, এরপর নবীর নিকট একটি বড় খেজুর ভর্তি ঝুড়ি আনা হল। নবী বললেন, তুমি এগুলো সাদাকাহ করে দাও। তখন সে বলল, ‘‘মদীনার একপ্রামত্ম থেকে অপর প্রামত্ম পর্যমত্ম আমার চেয়ে গরীব আর কেউ নেই।’’ দয়ার নবী তার এ কথা শুনে হাসলেন, এমনকি তাঁর সামনের দাঁতগুলো প্রকাশিত হয়েছিল। এবার নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বললেন, এগুলো তুমি নাও এবং তোমার পরিবারকে খেতে দাও। (সহীহ বুখারী, হা/১৯৩৬; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৬৫৭)
স্বামী-স্ত্রী উভয়ে রাজী হয়ে সহবাস করলে উভয়ের উপর কাফফারাহ ওয়াজিব হবে। আর যদি স্বামী স্ত্রীকে বাধ্য করে তবে স্ত্রী কেবল কাযা করবে আর স্বামীকে কাযা ও কাফফারাহ উভয়টিই আদায় করতে হবে।
যে নিজেকে সংযত রাখতে পারে তার জন্য স্ত্রীকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা ও আলিঙ্গন করা জায়েয আছে। বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে আছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম রোযা অবস্থায় চুম্বন করতেন, মাখামাখি করতেন, কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিলেন। তবে যে অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে যায় তার জন্য এসব থেকে বিরত থাকা উচিত; নতুবা জায়েযের পথ ধরে রোযা ভঙ্গ হওয়ার মত কিছু ঘটে যেতে পারে। আলস্নাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেছেন, ‘‘রোযাদার আমার সমত্মুষ্টির জন্য তার যৌন আকাঙ্ক্ষাকে ত্যাগ করেছে।’’
স্বেচ্ছায় যে কোনভাবে বীর্যপাত ঘটালে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
রোযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভঙ্গ হবে না, কারণ এটা বান্দার ইচ্ছাধীন নয়, অনুরূপভাবে যদি কোন রোগজনিত কারণে এমনিতেই বীর্যপাত হয়ে যায় অথবা সাদা পানি বের হয় তাতেও রোযা ভঙ্গ হবে না।
রাতে গোসল ফরয হয়েছে; কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখা গেল যে, গোসল করতে গেলে সাহারী খাওয়ার সময় থাকবে না, এ অবস্থায় আগে খেয়ে নেবে এবং পরে গোসল করে ফজরের নামায পড়বে। আযানের পরে গোসল করলেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
রোযা অবস্থায় যদি এমন কোন ইঞ্জেকশন বা সস্নাইন নেয় যা পুষ্টি বা খাদ্যের কাজে ব্যবহৃত হয়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে অন্যান্য ইঞ্জেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে না।
ইচ্ছা করে বমি করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে, পরে কাযা করতে হবে। কিন্তু অনিচ্ছায় যদি কারো বমি আসে তবে রোযা ভঙ্গ হবে না। (তিরমিযী, হা/৭২৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৭৬)
রোযা অবস্থায় মহিলাদের হায়িয বা নিফাস শুরম্ন হলে রোযা ভঙ্গ হবে। পরে কাযা করতে হবে। নিফাস বা মাসিক চলাকালে-তাসবীহ পড়া, আলস্নাহর কাছে দু‘আ করা, তাওবা-ইসেত্মগফার করা, কালিমা পড়া, নবীর উপর দরূদ পাঠ করা এবং ইসলামী বই-কিতাব পড়া এসব করতে কোন নিষেধ নেই; বরং এগুলো করা উচিত; তাহলে আলস্নাহর কথা মনে থাকবে। শয়তান ওয়াসওয়াসা দিতে পারবে না।
রাত্রে ফজরের আযানের একটু পূর্বে যদি হায়িয বা নিফাস বন্ধ হয়ে যায় অথবা সময়সীমা শেষ হয়ে যায় তাহলে এই দিনের রোযা রাখতে হবে, এ ব্যাপারে মহিলাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
রমাযানের কাযা রোযা দেরীতেও আদায় করা চলে, তবে তাড়াতাড়ি আদায় করে নেয়া ভাল। কারণ হায়াত-মউতের খবর তো কেউ জানে না।
ফরজ রোযা দায়িত্বে রেখে কেউ যদি মারা যায় তবে তার অলি (অভিভাবকরা) তার পরিবর্তে ফিদিয়া আদায় করবে।
এমন কিছু বিষয় আছে যা করলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। তাই এগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ থাকা উচিত নয়। যেমন- রোযা অবস্থায় মেসওয়াক করা, গোসল করা, শরীরে তেল মালিশ করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, নাকে, কানে ও চোখে ঔষধ দেয়া, চোখে সুরমা ব্যবহার করা, মুখের থুথু গিলে ফেলা, প্রচ- গরমের কারণে শরীর ঠান্ডা করা, মাথায় পানি ঢালা। বিশেষ প্রয়োজনে তরকারীর লবণ বা ঝাল মুখে দিয়ে পরীক্ষা করা অথবা কোন খাদ্যদ্রব্য চিবিয়ে শিশুর মুখে দেয়া ইত্যাদি।
এমন কিছু কাজ আছে যা করলে রোযা একেবারে ভঙ্গ হয়ে যায় না; তবে রোযা ত্রম্নটিযুক্ত হয় এবং রোযার সওয়াব কমে যায়। যেমন- গীবত ও চোগলখোরী করা, পরস্পরে গালা-গালি করা, মারা-মারি করা, মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মুসলমানের মান-ইজ্জত নষ্ট করা, রাগান্বিত হওয়া, মূল্যবান সময়কে অনর্থক কাজে নষ্ট করা, অশস্নীল গান অথবা মিউজিক সম্বলিত যে কোন গান শ্রবণ করা, টেলিভিশনের পর্দায় অশস্নীল ছবি দেখা, নারীদের বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করা, নারী-পুরম্নষের অবাধ মেলামেশা ও আড্ডা দেয়া ইত্যাদি। এ সকল কাজ সব সময়ের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ; তাই রমাযানে তো বটেই; রমাযান ছাড়া অন্যান্য সময়েও এসকল কাজ থেকে দূরে থাকা মুসলিম নর-নারীর উপর একামত্ম কর্তব্য।
রোযা রাখার নিয়তে ভোররাতে যে খাবার খাওয়া হয় তাকে সাহারী বলে। এখানে এ শব্দটির উচ্চারণ ‘সেহ্রী’ বা ‘সাহ্রী’ সঠিক নয়। কারণ আরবী ভাষায় ‘সেহ্রম্নন’ শব্দের অর্থ যাদু করা। যেমন : يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ ‘‘তারা মানুষকে যাদু শিখাত।’’ (সুরা বাকারা- ১২০) আবার سَحْرٌ সাহ্রম্নন শব্দের অর্থ হল বুকের উপরিভাগ। আরবী ভাষায় রাতের শেষ ভাগ বুঝাতে سَحَر ‘সাহার’ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন نَجَّيْنهُمْ بِسَحَرِ ‘‘আমি লূতের পরিবারকে রাতের শেষ ভাগে মুক্তি দিয়েছি’’ (সুরা কামার- ৩৪)। তাই এর উচ্চারণে ‘সেহ্রী’ বা ‘সাহ্রী’ না বলে ‘‘সাহারী’’ বলাই শুদ্ধ। কিছু বইয়ে সেহ্রী লেখা থাকলেও বর্তমানে লেখকরা সাহারী ব্যবহার করছেন।
সাহারী খাওয়ার গুরম্নত্ব :
عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - تَسَحَّرُوْا فَإِنَّ فِى السُّحُوْرِ بَرَكَةً
আনাস (রাঃ) বলেন, নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, ইয়াহূদী ও নাসারাদের রোযা আর আমাদের রোযার মধ্যে পার্থক্য এই যে, আমরা সাহারী খেয়ে রোযা রাখি আর তারা সাহারী খায় না। (সহীহ মুসলিম, হা/২৬০৪; আবু দাউদ, হা/২৩৪৫)
সাহারী হল বরকতের খানা :
আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, সাহারী সম্পূর্ণটাই বরকতময়। অতএব তোমরা এটা ছেড়ে দিও না, যদি তোমাদের কেউ এক ঢোক পানি পান করার সুযোগ পায় তবে যেন তা পান করে। কেননা আলস্নাহ তা‘আলা সাহারী ভক্ষণকারীদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারা তাদের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করতে থাকেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪১৪; জামেউস সগীর, হা/৫৯৯৬)
সাহারী দেরীতে খাওয়া উত্তম :
বুখারী ও মুসলিমের হাদীস থেকে জানা যায় যে, রাসূলের যুগে সাহারী খাওয়া ও ফজরের আযানের মধ্যখানে ৫০টি আয়াত পড়ার সমপরিমাণ সময় থাকত। ৫০টি আয়াত পড়তে প্রায় ১৫-২০ মিনিট সময় লাগতে পারে। এ থেকে বুঝা যায় যে, সাহাবীরা খুব আগে সাহারী খেতেন না। আযানের কিছু সময় আগে খাওয়াা শেষ করতেন।
সাহারী খাওয়ার গুরম্নত্ব :
عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - تَسَحَّرُوْا فَإِنَّ فِى السُّحُوْرِ بَرَكَةً
আনাস (রাঃ) বলেন, নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, ইয়াহূদী ও নাসারাদের রোযা আর আমাদের রোযার মধ্যে পার্থক্য এই যে, আমরা সাহারী খেয়ে রোযা রাখি আর তারা সাহারী খায় না। (সহীহ মুসলিম, হা/২৬০৪; আবু দাউদ, হা/২৩৪৫)
সাহারী হল বরকতের খানা :
আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, সাহারী সম্পূর্ণটাই বরকতময়। অতএব তোমরা এটা ছেড়ে দিও না, যদি তোমাদের কেউ এক ঢোক পানি পান করার সুযোগ পায় তবে যেন তা পান করে। কেননা আলস্নাহ তা‘আলা সাহারী ভক্ষণকারীদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারা তাদের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করতে থাকেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪১৪; জামেউস সগীর, হা/৫৯৯৬)
সাহারী দেরীতে খাওয়া উত্তম :
বুখারী ও মুসলিমের হাদীস থেকে জানা যায় যে, রাসূলের যুগে সাহারী খাওয়া ও ফজরের আযানের মধ্যখানে ৫০টি আয়াত পড়ার সমপরিমাণ সময় থাকত। ৫০টি আয়াত পড়তে প্রায় ১৫-২০ মিনিট সময় লাগতে পারে। এ থেকে বুঝা যায় যে, সাহাবীরা খুব আগে সাহারী খেতেন না। আযানের কিছু সময় আগে খাওয়াা শেষ করতেন।
সূর্য ডুবার সাথে সাথেই ইফতারের সময় হয়ে যায় :
উমর (রাঃ) বলেন, নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যখন রাত্রি এসে যাবে, দিন বিদায় নেবে, সূর্য অসত্মমিত হবে তখন রোযাদার ব্যক্তি ইফতার করবে। (সহীহ বুখারী, হা/১৯৫৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৬১২)
তাড়াতাড়ি ইফতার করার গুরম্নত্ব :
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, লোকেরা যতদিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে, কারণ ইয়াহূদীরা দেরীতে ইফতার করে থাকে। অন্য বর্ণনায় আছে, ইসলাম ততদিন প্রভাবশালী হয়ে থাকবে যতদিন লোকেরা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। (আবু দাউদ, হা/২৩৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৮০৯)
উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সূর্য ডুবার সাথে সাথে ইফতার করা সুন্নাত, দেরী করা সমীচীন নয়।
ইফতারের পর দু‘আ :
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ
যাহাবায যামাউ ওয়াব তালস্নাতিল উরূকু ওয়াসাবাতাল আজরম্ন ইনশাআলস্নাহ
অর্থ : পিপাসা দূর হল, শরীরের শিরাগুলো সতেজ হল এবং আলস্নাহ চান তো রোযার সওয়াব নির্ধারিত হল। (আবু দাঊদ, হা/২৩৫৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৩৯৫)
খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত :
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর দিয়ে আর যদি শুকনা খেজুরও না পেতেন তবে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। (আবু দাউদ, হা/২৩৫৮; তিরমিযী, হা/৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৯৮)
রোযাদারকে ইফতার করানোর ফযীলত :
مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَه مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَه مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْتَقِصَ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْئًا - وَمَنْ جَهَّزَ غَازِيًا أَوْ خَلَفَه فِىْ أَهْلِه كَانَ لَه مِثْلُ أَجْرِه مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْتَقِصَ مِنْ أَجْرِه شَيْئًا
নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে অথবা কোন যোদ্ধাকে জিহাদের আসবাবপত্র সংগ্রহ করে দেবে বা তার পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করবে সে রোযাদার ও মুজাহিদের সমান সওয়াব পাবে তবে রোযাদার ও মুজাহিদের সওয়াব থেকে বিন্দু মাত্র কমানো হবে না। (তিরমিযী, হা/৮০৭; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৪৬)
উমর (রাঃ) বলেন, নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যখন রাত্রি এসে যাবে, দিন বিদায় নেবে, সূর্য অসত্মমিত হবে তখন রোযাদার ব্যক্তি ইফতার করবে। (সহীহ বুখারী, হা/১৯৫৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৬১২)
তাড়াতাড়ি ইফতার করার গুরম্নত্ব :
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, লোকেরা যতদিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে, কারণ ইয়াহূদীরা দেরীতে ইফতার করে থাকে। অন্য বর্ণনায় আছে, ইসলাম ততদিন প্রভাবশালী হয়ে থাকবে যতদিন লোকেরা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। (আবু দাউদ, হা/২৩৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৮০৯)
উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সূর্য ডুবার সাথে সাথে ইফতার করা সুন্নাত, দেরী করা সমীচীন নয়।
ইফতারের পর দু‘আ :
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ
যাহাবায যামাউ ওয়াব তালস্নাতিল উরূকু ওয়াসাবাতাল আজরম্ন ইনশাআলস্নাহ
অর্থ : পিপাসা দূর হল, শরীরের শিরাগুলো সতেজ হল এবং আলস্নাহ চান তো রোযার সওয়াব নির্ধারিত হল। (আবু দাঊদ, হা/২৩৫৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৩৯৫)
খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত :
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর দিয়ে আর যদি শুকনা খেজুরও না পেতেন তবে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। (আবু দাউদ, হা/২৩৫৮; তিরমিযী, হা/৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৯৮)
রোযাদারকে ইফতার করানোর ফযীলত :
مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَه مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَه مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْتَقِصَ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْئًا - وَمَنْ جَهَّزَ غَازِيًا أَوْ خَلَفَه فِىْ أَهْلِه كَانَ لَه مِثْلُ أَجْرِه مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْتَقِصَ مِنْ أَجْرِه شَيْئًا
নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে অথবা কোন যোদ্ধাকে জিহাদের আসবাবপত্র সংগ্রহ করে দেবে বা তার পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করবে সে রোযাদার ও মুজাহিদের সমান সওয়াব পাবে তবে রোযাদার ও মুজাহিদের সওয়াব থেকে বিন্দু মাত্র কমানো হবে না। (তিরমিযী, হা/৮০৭; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৪৬)
যেহেতু রমাযান মাসটাকে মহান আলস্নাহ বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদায় ভূষিত করেছেন যা আমরা কোরআন ও সহীহ হাদীসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তাই এ মাসটাকে ইবাদাত-বন্দেগী ও ভাল কাজের মধ্যে ব্যয় করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর একামত্ম কর্তব্য।
রমাযান মাসে মানুষকে আলস্নাহর পক্ষ থেকে আহবান করা হয়।
يَا بَاغِىَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِىَ الشَّرِّ أَقْصِرْ
‘‘হে মঙ্গল অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে কুপথগামী! একটু থাম।’’ অর্থাৎ এ মাসে যেহেতু রহমতের দরজা খোলা থাকে, তাই তুমি এই সুযোগকে হেলায়-খেলায় নষ্ট করো না। দুনিয়া-আখেরাতে উন্নতি লাভের জন্য তুমি ভাল কাজে তৎপর হও। অপরদিকে এ মাসে যেহেতু শয়তানগুলো বাঁধা থাকে, তাই এ সময়টি হচ্ছে পাপ থেকে দূরে সরে আসার সুবর্ণ সুযোগ। তাই তুমি সচেতন হও, ফিরে আস তোমার প্রভুর দিকে। রমাযানের এই মর্মস্পর্শী ডাকে সকলের সাড়া দেয়া উচিত।
কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী এ মাসে যে সকল আমল করা একামত্ম জরম্নরী এখন আমরা তা জানব এবং সে অনুযায়ী আমল করার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করব। তাহলেই রোযার মাস আমাদের জন্য সার্থক হবে।
১. রোযা রাখা
রমাযান মাসের সবচেয়ে বড় এবং গুরম্নত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে- আলস্নাহর সমত্মুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রোযা রাখা। আলস্নাহ বলেন,
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে যেন রোযা রাখে’’।
(সূরা বাকারা- ১৮৫)
হাদীসে এসেছে,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাযান মাসে রোযা রাখবে তার পেছনের সকল গোনাহ আলস্নাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেবেন।’’ (বুখারী, হা/২০১৪; মুসলিম, হা/১৮১৭)
২. তারাবীর নামায আদায় করা
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাযান মাসে তারাবীর নামায পড়বে তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/ ২৪৯: বুখারী, হা/২০০৯; মুসলিম, হা/১৮৭৫; আবু দাউদ, হা/১৩৭৩; তিরমিযী, হা/৮০৮)
আলস্নাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا
‘‘আর যারা তাদের প্রভুর সমত্মুষ্টির লক্ষ্যে সিজদাবনত ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি যাপন করে।’’ (সূরা ফুরকান- ৬৪)
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত হবে এ মাসে ইমামের সাথে জামা‘আতে তারাবীর নামাজ আদায় করা; যাতে রাত্রে ইবাদাতকারীদের অমত্মর্ভুক্ত হওয়া যায়। এক হাদীসে নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন,
إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا صَلّى مَعَ الْإِمَامِ حَتّى يَنْصَرِفَ حُسِبَ لَه قِيَامُ لَيْلَةٍ
যে ব্যক্তি তার ইমামের সাথে তারাবীর নামায শেষ পর্যমত্ম আদায় করে তার জন্য পূর্ণ রাত্রি জেগে ইবাদাত করার সওয়াব লেখা হবে। (আবূ দাউদ, হা/১৩৭৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৪৭)
কোন কিশোর, পুরম্নষ বা মহিলার ইমামতিতে কোন বাড়িতে মহিলারা একত্রিত হয়ে তারাবীর নামায পড়তে পারে।
৩. বেশি বেশি কোরআন পাঠ করা
কোরআন তিলাওয়াত একটি উত্তম ইবাদাত। কোরআন ও হাদীসে কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি খুবই উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং এর যথেষ্ট ফযীলতও বর্ণনা করা হয়েছে। কোরআনে কারীমের এরশাদ হচ্ছে,
إِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَأَقَامُوْا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
‘‘নিশ্চয় যারা কোরআন তিলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক হতে কিছু অংশ গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে তারা এমন ব্যবসার আশা করে যাতে কখনো লোকসান হবে না।’’ (সূরা ফাতির- ২৯)
এ আয়াতে কোরআন পড়াকে একটি লাভজনক ব্যবসা বলা হয়েছে। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُولُ الم َرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ
যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পড়বে সে একটি নেকী পাবে আর একটি নেকী হবে দশটি নেকীর সমান। আমি বলছি না আলিফ, লাম, মীম সব মিলিয়ে একটি হরফ; বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর। (তিরমিযী, হা/২৯১০)
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন,
اَلصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
কিয়ামতের দিন কোরআন ও রোযা বান্দার জন্য শাফা‘আত করবে। রোযা বলবে, হে প্রভু! আমি এ বান্দাকে দিনে খানা-পিনা ও যৌন চাহিদা মিটানো থেকে বিরত রেখেছি, তাই আমার শাফা‘আত কবুল করম্নন। কোরআন বলবে, হে প্রভু! আমি এ বান্দাকে রাতের বেলায় ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, তাই আমার শাফা‘আত কবুল করম্নন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। (মুসতাদরাকে হাকেম, ২০৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৬২৬)
এজন্য সালাফুস সালেহীন (পূর্ব যুগের নেককার বান্দারা) বিশেষ করে রমাযান মাসে কোরআন পাঠে খুবই মনোযোগ দিতেন। এ মাসে কোরআন পড়ার জন্য তারা সময়ের একটা বড় অংশ নির্ধারণ করে রাখতেন।
ইমাম যুহরী (রহঃ) রমাযান মাস আসলে বলতেন,
إِنَّمَا هُوَ قِرَأَةُ الْقُرْأنِ وَإِطْعَامُ الطَّعَامِ
‘‘রমাযান মাস কেবল কোরআন পড়ার ও মানুষকে খাদ্য দানের মাস।’’
ইমাম মালেক (রহঃ) রমাযান মাসে হাদীস পড়া স্থগিত রাখতেন এবং কোরআন পড়ার প্রতি ঝুঁকে পড়তেন। (রমাযান শাহরম্নল কোরআন)
সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) রমাযান মাস এলে অন্যন্য নফল ইবাদাতের চেয়ে কোরআন পড়ার প্রতি অধিক মনযোগী হতেন।
এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এ সকল মহামনীষীরা না বুঝে কোরআন পড়তেন না। তারা আলস্নাহর কালাম বুঝে বুঝে পড়তেন এবং এর উপর আমল করতেন। কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমান এমন আছেন যারা কোরআনের শুধু শব্দগুলো পড়ে প্রতি হরফে দশ নেকী অর্জনের চিমত্মা করেন এবং কে কত খতম দিতে পারে- এ নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। কোরআন না বুঝে পড়লে এর দ্বারা কোরআন নাযিলের আসল উদ্দেশ্য সফল হয় না। মানুষ যাতে কোরআন পড়ে, বুঝে এবং কোরআন অনুযায়ী তাদের জীবন পরিচালনা করে- এটাই হল কোরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য। কোরআন তিলাওয়াতের ফযীলত সংক্রামত্ম হাদীসগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোরআন পড়ার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা। না বুঝে পড়লে পড়ার হক আদায় হয় না। না বুঝে একশত খতম দেয়ার চেয়ে কেউ যদি দু’চারটি আয়াত অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ বুঝে পড়ে এবং এর উপর আমল করতে পারে তবে এটা তার জন্য হাজার গুণে উত্তম হবে; যেহেতু সে কোরআন নাযিলের উদ্দেশ্যকে বাসত্মবায়িত করেছে।
একজন মুসলমানের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বড় কাজ ও ইবাদাত হল ইসলামের সঠিক জ্ঞান লাভ করা। এজন্য যে শব্দটি দিয়ে কোরআন নাযিল শুরম্ন হয়েছে তা হল إِقْرَأْ ‘পড়ো’ তার মানে সবকিছুর আগে তোমাকে পড়তে হবে, জানতে হবে। মুসলিম হতে হলে কি কি কাজ করতে হবে, কোন্ কোন্ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং কোন্ ধরনের আকীদাহ-বিশ্বাস পোষণ করতে হবে তা না জানা পর্যমত্ম কেউ যদি হাজার বারও বলে ‘আমি মুসলিম’ তবে সে আলস্নাহর কাছে মুসলিম হতে পারবে না। তাই ইসলামের সঠিক ও নির্ভুল জ্ঞান অর্জনের জন্য আলস্নাহর কালাম বুঝে পড়তে হবে। কোরআনে এসেছে - وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلاً ‘‘আলস্নাহর কথার চেয়ে সঠিক কথা আর কার হতে পারে?’’ ذلِكَ الْكِتَابِ لَارَيْبَ فِيْهِ ‘‘এটা এমন কিতাব যার কথার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয় নেই।’’
কোরআন যেহেতু আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে, তাই একে ভালভাবে বুঝার জন্য আরবী ভাষা শিক্ষা করা সকলের কর্তব্য। কোরআন-হাদীস বুঝার জন্য যদি কেউ আরবী ভাষা শিখে তবে এটা ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। তাছাড়া কোরআনের বিধি-বিধান জানার জন্য মাতৃভাষার সহযোগিতা নেয়া যায়, বর্তমানে পৃথিবীর মধ্যে প্রচলিত যত ভাষা আছে প্রায় সকল ভাষাতেই কোরআনের অনুবাদ ও তাফসীর প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আলস্নাহর রহমতে আমাদের বাংলাদেশেও বাংলা ভাষায় কোরআন বুঝার যথেষ্ট উপকরণ বের হয়েছে। কোরআনের শাব্দিক অনুবাদ, ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ, কোরআনের শব্দের অভিধান, বিষয় অভিধানসহ বেশ কিছু ভাল ভাল তাফসীর গ্রন্থও বাংলা ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে এবং সর্বত্রই এসব পাওয়া যাচ্ছে।
আমিও আলস্নাহর রহমতে কোরআন দিয়ে কোরআনের একটি বিষয়ভিত্তিক তাফসীর লিখেছি। এতে একেকটি বিষয় সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতগুলো একত্র করে বিভিন্ন পয়েন্টে সাজানো হয়েছে। কোরআনে আলোচিত মৌলিক বিষয়গুলোকে হাদীসের কিতাবের মত করে বিভিন্ন অধ্যায়ে বিন্যসত্ম করা হয়েছে। এ গ্রন্থের মাধ্যমে একেকটি বিষয় সম্পর্কে কোরআনের বক্তব্য কী তা একই জায়গায় ধারাবাহিকভাবে জানা যাবে, কিছু দিনের মধ্যে গ্রন্থটি প্রকাশিত হবে, ইনশা-আলস্নাহ!
৪. রমাযান মাসে বেশি বেশি করে দান করা
রমাযান মাসের দান হল সর্বোত্তম দান।
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ وَأَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ ، وَكَانَ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ يُدَارِسُهُ الْقُرْآنَ ، فَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ أَجْوَدَ مِنَ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম ছিলেন সবচেয়ে বড় দানশীল। আর রমাযান মাসে যখন জিবরাঈল (আঃ)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাত হত তখন তাঁর দান আরো বেড়ে যেত -كَانَ اَجْوَدُ بَالْخَيْرِ مِنَ اَلرِّيْحِ الْمُرْسَلَةِ
নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম প্রবাহমান মুক্ত বাতাসের চেয়েও আরো বেশি মুক্ত হসেত্ম কল্যাণের পথে খরচ করতেন। (বুখারী, হা/৬)
দানের অনেক দিক রয়েছে। যেমন :
টাকা-পয়সা দান করা।
কাপড় বা অন্য কোন প্রয়োজনীয় জিনিস দান করা।
অপরকে খাদ্য খাওয়ানো।
রোযাদারকে ইফতার করানো আরো সওয়াবের কাজ।
জান্নাতবাসী বান্দাদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
وَيُطْعِمُوْنَ الطَّعَامَ عَلٰى حُبِّه مِسْكِيْنًا وَّيَتِيْمًا وَّأَسِيْرًا- إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَّلَا شُكُوْرًا
‘‘তারা আলস্নাহর মহববতে মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে খাবার দেয় এবং বলে, আমরা তোমাদেরকে খাওয়াচ্ছি কেবল আলস্নাহর সমত্মুষ্টি অর্জনের জন্য- তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান এবং কৃতজ্ঞতা আমরা চাই না।’’
(সূরা দাহর- ৮, ৯)
আলস্নাহর নেক বান্দাদের মধ্যে এমন অনেক লোক ছিলেন যারা অপরকে খাদ্য দানের ক্ষেত্রে খুবই উৎসাহী ছিলেন। এক্ষেত্রে তারা শুধু গরীবদেরকে বাছাই করতেন না। অনেকে এমনও ছিলেন যারা মেহমান ছাড়া খাবার খেতেন না। অপরকে খাদ্য খাওয়ানোতে যথেষ্ট কল্যাণ রয়েছে, এর মধ্যে একটি হচ্ছে- যে খাওয়ায় এবং যাদেরকে খাওয়ানো হয় তাদের মধ্যে আমত্মরিকতা ও ভালবাসা সৃষ্টি হয়- যা জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন,
لَا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتّى تُؤْمِنُوْا وَلَا تُؤْمِنُوْا حَتّى تَحَابُّوْا
তোমরা মু’মিন না হওয়া পর্যমত্ম জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর পরস্পরে ভালবাসা ব্যতীত মু’মিন হতে পারবে না। (মুসলিম, হা/২০৩; আবু দাউদ, হা/৫১৯৫; তিরমিযী, হা/২৬৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৬৮, ৩৬৯২)
৫. রমাযান মাসে উমরা করা
কাবা হল ইবাদাতের উদ্দেশ্যে নির্মিত পৃথিবীর সর্বপ্রথম গৃহ। এর মধ্যে রয়েছে আলস্নাহর অসংখ্য নিদর্শন। হজ্জ ও উমরার মাধ্যমে এসব নিদর্শন দেখা যায়। উমরার অগণিত ফযীলত রয়েছে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَه جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। নবী করীম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, ‘‘একবার উমরা করার পর আবার উমরা করলে তা দুই উমরার মধ্যবর্তী গোনাহসমূহের কাফ্ফারাহ হয়ে যায়। আর হজ্জে মাবরম্নরের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।’’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৭৬৭; বুখারী, হা/১৭৭৩; মুসলিম, হা/৩৩৫৫; তিরমিযী, হা/৯৩৩; নাসাঈ, হা/২৬২৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৮৮)
فَإِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فَاعْتَمِرِىْ فَإِنَّ عُمْرَةً فِيْهِ تَعْدِلُ حَجَّةً
রমাযান মাসে উমরা করার ফযীলত সম্পর্কে নবী বলেন, ‘‘যখন রমাযান মাস আসবে তখন উমরা কর। কেননা এ মাসে উমরা করার সওয়াব একটি হজ্জের সমান।’’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘রমাযান মাসে উমরা করা আমার (নবীর) সাথে হজ্জ করার সমান।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৩০৯৭; তিরমিযী, হা/৯৩৯)
নবীর ইমেত্মকালের পরেও নবীর সাথে হজ্জ করার সমান সওয়াব পাওয়া যায় এমন সুযোগ কে হারায়? এ জন্য আলস্নাহ যাদেরকে সামর্থ্য দিয়েছেন তাদের রমাযান মাসে উমরা করা উচিত।
৬. রমাযানে ইতিকাফ করা
ইতিকাফ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল আবদ্ধ থাকা, কোন নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা। ইসলামী পরিভাষায় ইতিকাফ হল; ইবাদাতের নিয়তে আলস্নাহর সমত্মুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর পদ্ধতি অনুযায়ী কোন মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ রাখা।
ইতিকাফ খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। নবী কারীম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম নিজেই ইতিকাফ করেছেন এবং তার স্ত্রীগণ ও সাহাবীরাও ইতিকাফ করেছেন। ইতিকাফ আলস্নাহর সমত্মুষ্টি ও নৈকট্য লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। কারণ এটি এমন এক নির্জনতা যখন বান্দা দুনিয়ার বিভিন্ন ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে আলস্নাহর দরজায় হাজির হয় এবং আলস্নাহর আনুগত্য ও যিকির করার মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখে। বান্দা তার দেহ ও মনকে স্বীয় প্রভুর উদ্দেশ্যে বেঁধে রাখে।
ইতিকাফের বাসত্মবরূপটা এমন যেন কোন ব্যক্তি কারো কাছ থেকে তার দাবী-দাওয়া পূরণের জন্য সে তার দরজায় ধর্ণা দেয় এবং দাবী পূরণ না হওয়া পর্যমত্ম ঐ দরজায় পড়ে থাকে। ঠিক তেমনিভাবে যারা ইতিকাফ করেন তারা মায়ার সংসারকে ভুলে লাগাতার কয়েকদিন আলস্নাহর দরজায় নিজেদেরকে আটক রাখেন ফলে আলস্নাহ তাদেরকে যথেষ্ট পুরস্কার দেন।
এক হাদীসে কুদসীতে আলস্নাহ তা‘আলা বলেন, যে ব্যক্তি অর্ধ হাত আমার নিকটবর্তী হয় আমি এক হাত তার নিকটবর্তী হই। আর যে ব্যক্তি এক হাত আমার নিকটবর্তী হয় আমি তার দিকে দৌড়ে আসি আর যে যমীন ভর্তি পাপ নিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আর সে আমার সাথে কাউকে শরীক না করে আমিও ঐরূপ ক্ষমা নিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করি। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০০৯)
অপর এক হাদীসে কুদসীতে আলস্নাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার বান্দার সাথে তার ধারণা অনুযায়ী ব্যবহার করে থাকি। আর সে যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথেই থাকি। সে যখন আমাকে জনসমক্ষে স্মরণ করে তখন আমি এর থেকে উত্তম মজলিসে তাকে স্মরণ করি। আর আমার বান্দা যখন আমাকে একা একা স্মরণ করে তখন আমিও এককভাবে তাকে স্মরণ করি। (সহীহ বুখারী, হা/৭৩০৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৮১)
ইতিকাফের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল রমাযানের শেষ দশ দিন,
عَنْ أَبِيِّ بْنِ كَعْبٍ : أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ فَلَمْ يَعْتَكِفْ عَامًا فَلَمَّا كَانَ فِي الْعَامِ الْمُقْبِلِ اِعْتَكَفَ عِشْرِيْنَ لَيْلَةً .
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। এক বছর তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি, তাই পরের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০৪৪; আবু দাউদ, হা/২৪৬৮)
এটা হল সুন্নাত ইতিকাফ। আর ইতিকাফ করার জন্য মান্নত করলে এটা ওয়াজিব হবে। আর বছরের যেকোন সময়ে অল্প সময় হলেও কেউ যদি ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করে তবে তা নফল ইতিকাফ হবে।
ইতিকাফ করতে হবে মসজিদে। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِي الْمَسَاجِدِ
‘‘আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৭)
পাঞ্জেগানা মসজিদে ইতিকাফ চলে, তবে জামে মসজিদে হলে ভাল হয়।
ইতিকাফকারী মসজিদের কোন এক জায়গায় কিছুটা আড়াল করে সেখানে অবস্থান করবে, সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করবে। মানবীয় প্রয়োজন যেমন প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদি ছাড়া মসজিদের বাইরে যাবে না।
ইতিকাফের সময় বেশি বেশি নফল ইবাদাত করা উচিত। নফল নামায, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ, তাওবা-ইসিত্মগফার, দরূদ পাঠ ও মুনাজাত ইত্যাদি কাজে মগ্ন থাকবে। তাছাড়া ধর্মীয় বই-কিতাব পড়ে এবং কোরআন-হাদীস চর্চা করে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করবে এবং একে অপরের সাথে ইসলামী কথা আলোচনা করবে- এটাও বড় ধরনের ইবাদাত।
৭. লাইলাতুল কদর তালাশ করা
আরবী ভাষায় ক্বাফ- এর যবর ও দাল বর্ণে সাকিন দিয়ে ‘কাদ্রম্নন’ শব্দের অর্থ হল- সম্মান ও মর্যাদা। এদিক থেকে শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বাদর এর অর্থ হল সম্মানিত ও মহিমান্বিত রজনী।
অন্যদিকে দাল বর্ণে যবর দিয়ে কাদারম্নন শব্দের অর্থ হল পরিমাপ করা, নির্ধারণ করা। এ হিসেবে লাইলাতুল ক্বাদার অর্থ হল ভাগ্য রজনী, তাকদীরের ফয়সালা করার রাত।
কদরের রাত মহান আলস্নাহর এক বিশেষ অবদান। এ রাতের রয়েছে বিশেষ সম্মান, বিশেষ মাহাত্ম্য ও বিশেষ ফযীলত। এ রাতের নামে পবিত্র কোরআনে একটি সূরা রয়েছে। এ রাতের ব্যাপারে নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম এর অনেক হাদীস রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল এ রাতের কেন এত মর্যাদা? কেন এত ফযীলত? উত্তর একটাই, আর তা হল এ রাতেই মহান আলস্নাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ মহাগ্রন্থ আল-কোরআন মর্যাদাবান ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে মর্যাদাশীল নবী মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর উপর তাঁর মর্যাদাবান উম্মতের পথপ্রদর্শক হিসেবে নাযিল হয়েছে। সুতরাং যেখানে এতগুলো মর্যাদাপূর্ণ বিষয় একত্র হল সেখানে যে রাতে এগুলোর সমাবেশ ঘটেছে সে রাতটি কি মর্যাদাপূর্ণ না হয়ে পারে?
আলস্নাহ তা‘আলা নিজেই বলেছেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ
‘‘নিশ্চয় আমি এটাকে (আল-কোরআনকে) কদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি।’’ (সূরা কদর- ১)
এ রাতে কোরআন নাযিল করার অর্থ হল- লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে এটি নাযিল হয়, পরে প্রয়োজন অনুপাতে পর্যায়ক্রমে তা নবীর উপর নাযিল হতে থাকে। এর অপর অর্থ হচ্ছে- এ রাতে কোরআন নাযিলের সিলসিলা শুরম্ন হয়েছে এবং দীর্ঘ তেইশ বছরে তা পূর্ণতা লাভ করেছে।
এ রাতের মর্যাদার দিকে ইঙ্গিত করে আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ - لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
‘‘তুমি কি জান কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’’ (সূরা কদর ২-৩)
এখানে হাজার মাস বলতে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝানো উদ্দেশ্য নয়; বরং বেশি বুঝানোর উদ্দেশ্যে এটা বলা হয়েছে, তার মানে এ রাতটি হাজার হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
উত্তম কথাটির দু’টি ব্যাখ্যা আছে এবং উভয়টিই সঠিক।
১. কদরের রাতটি এমন ফযীলতপূর্ণ যে, এ রাতের ইবাদাত-বন্দেগী হাজার মাসের ইবাদাত-বন্দেগীর চেয়ে উত্তম। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন,
مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে আলস্নাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান লাভের আশায় কদরের রাতে ইবাদাত করবে, তার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী, হা/৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮১৮)
২. এ রাতটি এদিক দিয়ে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম যে, এ রাতে বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাযিল করে মানুষের এত কল্যাণ সাধন করা হয়েছে যা মানব জাতির ইতিহাসে হাজার মাসেও করা হয়নি। কারণ এ কোরআন একটি অসভ্য, বর্বর জাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে তাদেরকে সভ্য, ভদ্র ও চরিত্রবান করে উন্নতি ও কল্যাণের চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। কোরআনের বাণী শুনে পাথরের মত কঠিন অমত্মরগুলো পানির মত নরম হয়ে গিয়েছিল, এর মুজিযা ও মাধুর্যের সামনে সারা বিশ্ব অবাক, হতভম্ব ও নিসত্মব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সূরা দুখানে এ কথাটি এভাবে বলা হয়েছে,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ
‘‘আমি একে এক বরকতময় রাত্রে অবতীর্ণ করেছি।’’ (সূরা দুখান- ৩)
এখানে কদরের রাতকে বরকতময় বলা হয়েছে। যেহেতু এ রাতে কল্যাণ ও বরকতের এমন ধারা শুরম্ন হয়েছিল যা সারা দুনিয়ায় এখন পর্যমত্ম অব্যাহত আছে এবং কিয়ামত পর্যমত্ম থাকবে।
কদরের রাতের বিশেষত্ব সম্পর্কে আলস্নাহ তা‘আলা আরো বলেন,
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِّنْ كُلِّ أَمْرٍ
‘‘এ রাতে জিবরাঈল ও অন্যান্য ফেরেশতারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে নাযিল হয়।’’ (সূরা ক্বদর- ৪)
এ রাত্রে অগণিত ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন। হাদীসে এসেছে,
إِنَّ الَمَلَائِكَةَ تِلْكَ اللَّيْلَةِ أَكْثَرَ فِيْ الْأَرْضِ مِنْ عَدَدِ الْحَصى
‘‘কদরের রাতে ফেরেশতাদের সংখ্যা পৃথিবীর সমুদয় কংকরের চেয়েও বেশি হয়’’ (ইবনে খুযাইমা)। এই অসংখ্য ফেরেশতারা এ রাতে ইবাদাতকারীদের জন্য দু‘আ করেন।
এ রাতে বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।। সূরা দুখানে বলা হয়েছে-
فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ
‘‘এই রাতে সব ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ ফায়সালা হয়ে থাকে।’’ (সূরা দুখান- ৪)
سَلَامٌ هِيَ حَتّٰى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
‘‘এ রাতটি ফজর উদয় হওয়া পর্যমত্ম পুরোপুরি শামিত্মময়।’’ (সূরা কদর- ৫)
অর্থাৎ এ রাতে শুধু শামিত্ম আর শামিত্ম, মঙ্গল আর মঙ্গল। এতে অনিষ্টের নাম গন্ধও নেই। অনাবিল শামিত্মপূর্ণ এ রজনীর অফুরমত্ম শামিত্ম ফজর উদয় পর্যমত্ম অব্যাহত থাকে।
লাইলাতুল কদর কোনটি?
কদরের রাত কোন তারিখে তা একেবারে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে কিছু দলীলের ভিত্তিতে এ রাতটি রমাযান মাসে হওয়ার ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হতে পারি। যেমন সূরা কদরের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, কোরআন কদরের রাতে নাযিল হয়েছে। আবার সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, রমাযান মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে। সুতরাং এ আয়াতের মাধ্যমে এটা নির্দিষ্ট হয়ে গেল যে, কদরের রাতটি রমাযান মাসেই রয়েছে। রমাযান মাসের কোন্ রাত? এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنْ الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, লাইলাতুল কদরকে তোমরা রমাযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে খোঁজ কর। (সহীহ বুখারী, হা/২০১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৮৯)
এ হাদীস দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এ রাতটি রমাযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের রাতগুলোতে রয়েছে এবং ২৭ তারিখের রাতে হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি। আবার এ রাতটি পরিবর্তন হয়, অর্থাৎ এ বেজোড় তারিখগুলোর মধ্যে একেক বছর একেক তারিখে হতে পারে।
হাদীসে এসেছে, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম কদরের রাতের তারিখ জানানোর জন্য বের হলেন, তখন মুসলমানদের দু’ব্যক্তি বিতর্কে লিপ্ত হল, ফলে নবীকে এ রাতটি ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৬৯৬; সহীহ বুখারী, হা/৪৯; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৩৩৮০)
তবে এ রাতটি নির্দিষ্ট না করার মধ্যে বিরাট কল্যাণ ও হেকমত রয়েছে। এটি নির্দিষ্ট থাকলে কেবল ঐ তারিখেই মানুষ আলস্নাহর ইবাদাত করত, এখন অনির্দিষ্ট থাকাতে শেষ দশকের বেজোড় পাঁচটি রাতেই আলস্নাহর বান্দারা বেশি বেশি ইবাদাত করে আলস্নাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পাবে।
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَه وَأَحْيَا لَيْلَه وَأَيْقَظَ أَهْلَه
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম রমাযানের শেষ দশকের রাতগুলোতে ইবাদাতের প্রতি বিশেষ গুরম্নত্ব দিতেন, কোমর কষে বাঁধতেন। তিনি নিজে জাগতেন এবং পরিবারের লোকদেরকেও জাগাতেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪২২)
লাইলাতুল কদরে পড়ার দু‘আ :
আয়েশা (রাঃ) নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামকে বললেন, আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তবে কী পড়ব? তিনি বলেন এ দু‘আ পড়-
اَللّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ .
আলস্নাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউউন তুহিববুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী ।
অর্থ : হে আলস্নাহ! তুমি বড়ই ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে তুমি ভালবাস। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী, হা/৩৫১৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৫০)
৮. ফিতরা আদায় করা
ইসলাম শামিত্ম ও সমতার ধর্ম। একজন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে আর একজন না খেয়ে মরবে- এই নীতিকে ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম সম্পদের আবর্তন চায়। সূরা হাশরের ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
كَيْ لَا يَكُوْنَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ
‘‘সম্পদ শুধুমাত্র তোমাদের ধনীদের মধ্যে যেন কেন্দ্রীভূত না থাকে।’’
وَفِيْ أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
‘‘আর তাদের সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে।’’ (সূরা যারিয়াত ১৯)
এজন্যই ইসলাম এমন কিছু বিধান ফরয করেছে যাতে করে গরীবরা ধনীদের সম্পদের কিছু অংশ ভোগ করতে পারে। এরই একটি অংশ হচ্ছে সাদাকাতুল ফিতর। দু’টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ সাদাকাহ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একটি হল রোযাকে ত্রম্নটিমুক্ত করা, অপরটি হল গরীবদেরকে ঈদের আনন্দে শরীক করা। মানুষের মধ্যে নানাবিধ দুর্বলতা রয়েছে, আলস্নাহর হুকুম পালন করতে কতইনা ভুল-ত্রম্নটি হয়ে যায়। বান্দা দীর্ঘ একটি মাস রোযা পালন করেছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই কিছু ত্রম্নটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। বান্দার এ ঘাটতি যাতে পূর্ণ হয়ে যায় তাই ইসলাম বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কিছু দান-সাদাকাহ করার নির্দেশ দিয়েছে। অপর দিকে ঈদের দিনটি হচ্ছে মুসলিম জাতির এক চরম আনন্দের দিন। কিন্তু যারা অর্ধাহারে অনাহারে কালযাপন করছে, আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, তারা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে কী করে ঈদের আনন্দ উপভোগ করবে? মুসলিম সমাজের এই বৈষম্য দূর করার জন্য বিশেষ করে ঈদের দিনে গরীবদেরকে সাহায্য করে ঈদের আনন্দে তাদেরকে শরীক করার জন্য ইসলাম এই সুন্দর ব্যবস্থা দিয়েছে।
ফিতরা ছোট বড় সকলের পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে :
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ وَالذَّكَرِ وَالْأُنْثى وَالصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلَاةِ .
আবদুলস্নাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম মুসলমানদের প্রত্যেক স্বাধীন-পরাধীন, নারী-পুরম্নষ, ছোট-বড়, সকলের উপর এক ‘সা’ পরিমাণ যব দিয়ে ফিতরা আদায় করা ফরয করেছেন এবং ঈদের নামাযে যাওয়ার আগে তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৫০৩; নাসাঈ, হা/২৫০৪)
এ হাদীসসহ অন্যান্য হাদীসে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে দেশে যে খাদ্য প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত সেখানে ঐ খাদ্যকেই ফিতরার জন্য নির্বাচন করতে হবে। আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য চাল, দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে গম। তাই আমরা যারা যে দামের চাল খাই সেই দামের চাল দিয়ে ফিতরা দেয়া উত্তম হবে।
ফিতরার পরিমাণ হল এক ‘সা’। আমাদের দেশের হিসাবে এক ‘সা’ হচ্ছে সেরের মাপে পৌনে তিন সের এবং কেজির মাপে আড়াই কেজি প্রায় ।
ফিতরার হক্বদার হচ্ছেন মিসকীন ও ফকীরগণ। তাছাড়া সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে বর্ণিত যাকাত প্রদানের যে ৮টি খাত উলেস্নখ করা রয়েছে এসব খাতেও ফিতরা দেয়া যাবে।
নিজের কোন আত্মীয় গরীব থাকলে তাকে ফিতরা বা অন্যান্য দান-সাদাকা দিলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। একটি হল দানের সওয়াব, অপরটি হল আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার সওয়াব। (ইবনে মাজাহ, হা/১৮৪৪)
৯. ঈদের নামায আদায় করা
রমাযান মাস শেষে পশ্চিমাকাশে যখন শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখা যায় তখন মুসলিম সমাজের মধ্যে এক নতুন আনন্দ বিরাজ করে। সবাই ঈদের খুশীতে মেতে উঠে। তবে এই খুশীতে শয়তানী কার্যকলাপ না ঢুকিয়ে নবীর শিক্ষা ও আমলের অনুসরণ করা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব।
ঈদ শব্দটি আরবী عَوْدٌ থেকে এসেছে, এর অর্থ হচ্ছে বার বার ফিরে আসা। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দু’টি দিন প্রতি বছর একবার করে ফিরে আসে বিধায় এ দু’টি দিনকে ইসলামী শরীয়াতে ঈদের দিন বলা হয়েছে। তাছাড়া ঈদের অপর অর্থ আনন্দ, উৎসব। মুসলিম সমাজ এ দু’টি দিনে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে এবং আনন্দ করে, তাই এ দিনগুলোকে ঈদের দিন বলা হয়।
মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর পূর্বে কোন নবীর শরীয়াতে ঈদের কোন অনুষ্ঠান ছিল না। মহানবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম মদীনায় হিজরত করার পর দ্বিতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে প্রথম ঈদের নামায আদায় করেন। আরবের মুশরিকরা বৎসরে দু’টি পর্বে আনন্দ উৎসব করত। এর বিপরীতে আলস্নাহ তা‘আলা মুসলিম জাতিকে দু’টি পবিত্র উৎসবের দিন বদলা দিলেন।
নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন-
يَا أَبَا بَكْرٍ إِنَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا وَهذَا عِيْدُنَا
হে আবূ বকর! প্রত্যেক জাতিরই আনন্দোৎসব রয়েছে। আর আমাদের আনন্দোৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। (সহীহ বুখারী, হা/৯৫২; সহীহ মুসলিম, হা/২০৯৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৮৯৮)
ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া সুন্নাত। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম এদিন সকালে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেতেন এরপর ঈদগাহে যেতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৯৫২; সহীহ মুসলিম, হা/২০৯৮)
ঈদের দিন শরীর পরিচ্ছন্ন করা, সকালে গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ও যথাসম্ভব উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নাত।
কোন ওযর না থাকলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া এবং সম্ভব হলে এক রাসত্মা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাসত্মা দিয়ে ফিরে আসা সুন্নাত।
ঈদের দিন তাকবীর পাঠ করা জরম্নরী :
وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
‘‘আলস্নাহ তা‘আলা চান তোমরা রোযার দিনগুলো (রমাযানের সংখ্যা) পূর্ণ কর এবং আলস্নাহর বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা কর, যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিখিয়েছেন। তাহলে আশা করা যায় তোমরা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৫)
তাফসীরকুল শিরোমনী আবদুলস্নাহ ইবনে আববাস (রাঃ) এ আয়াতের প্রেক্ষিতে বলেন, প্রত্যেক রোযাদারের কর্তব্য হচ্ছে শাওয়াল মাস শুরম্ন হওয়ার সাথে সাথেই তাকবীর বলতে থাকবে। যতক্ষণ না ঈদগাহ থেকে ফিরে আসে। (ফত্হুল বয়ান ১ম খ- ২৩৯ পৃষ্ঠা)
বিশেষ করে ঈদগাহে যাওয়ার সময় এবং ফিরে আসার সময় তাকবীর বলা মুসত্মাহাব।
নীচের বাক্যগুলোর মাধ্যমে তাকবীর পড়তে হয় :
اَللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ لَا اِلٰهَ إِلَّا اللهُ اَللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ وَ لِلّهِ الْحَمْدُ .
আলস্নাহু আকবার, আলস্নাহু আকবার, লা-ইলাহা ইলস্নালস্নাহু, আলস্নাহু আকবার, আলস্নাহু আকবার, ওয়ালিলস্না-হিল হামদ।
অর্থ : আলস্নাহ সবচেয়ে বড়, আলস্নাহ সবচেয়ে বড়, আলস্নাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন উপাস্য নেই, আলস্নাহ সবচেয়ে বড়, আলস্নাহ সবচেয়ে বড়, সকল প্রশংসা আলস্নাহর জন্য।
ঈদের দিন রোযাদাররা বিশেষ সম্মান লাভ করে। আলস্নাহর বান্দারা সারাটি মাস রোযা রাখার পর আলস্নাহর সমত্মুষ্টি লাভের আশা নিয়ে যখন ঈদগাহের দিকে রওয়ানা হয় তখন আলস্নাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করতে থাকেন এবং বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! তোমরা বলত ঐ শ্রমিকের পুরস্কার কী হতে পারে যে তার কাজ পরিপূর্ণ করেছে। তারা বললেন, পরিপূর্ণ প্রতিদান দেয়াই হল তার পুরস্কার। এবার আলস্নাহ তা‘আলা বললেন, হে আমার ফেরেশতাকুল! আমার বান্দা-বান্দীরা তাদের উপর আমার ফরয করা দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছে। অতঃপর উচ্চ আওয়াজে (তাকবীর) বলতে বলতে দু‘আর জন্য ঈদগাহে রওয়ানা হয়েছে। আমার ইজ্জত, বড়ত্ব, ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি অবশ্যই তাদের ডাকে সাড়া দেব।
এবার আলস্নাহ তা‘আলা বলেন, হে আমার বান্দারা! তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের গোনাহগুলোকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম, ফলে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে।
(বাইহাকী থেকে মিশকাত)
প্রিয় ভাই-বোনেরা একটু চিমত্মা করম্নন! এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য ও মর্যাদা আর কী হতে পারে? হে আলস্নাহ! আমাদেরকেও তোমার ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যে শামিল করে নাও। আ-মীন!
রমাযান মাসে মানুষকে আলস্নাহর পক্ষ থেকে আহবান করা হয়।
يَا بَاغِىَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِىَ الشَّرِّ أَقْصِرْ
‘‘হে মঙ্গল অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে কুপথগামী! একটু থাম।’’ অর্থাৎ এ মাসে যেহেতু রহমতের দরজা খোলা থাকে, তাই তুমি এই সুযোগকে হেলায়-খেলায় নষ্ট করো না। দুনিয়া-আখেরাতে উন্নতি লাভের জন্য তুমি ভাল কাজে তৎপর হও। অপরদিকে এ মাসে যেহেতু শয়তানগুলো বাঁধা থাকে, তাই এ সময়টি হচ্ছে পাপ থেকে দূরে সরে আসার সুবর্ণ সুযোগ। তাই তুমি সচেতন হও, ফিরে আস তোমার প্রভুর দিকে। রমাযানের এই মর্মস্পর্শী ডাকে সকলের সাড়া দেয়া উচিত।
কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী এ মাসে যে সকল আমল করা একামত্ম জরম্নরী এখন আমরা তা জানব এবং সে অনুযায়ী আমল করার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করব। তাহলেই রোযার মাস আমাদের জন্য সার্থক হবে।
১. রোযা রাখা
রমাযান মাসের সবচেয়ে বড় এবং গুরম্নত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে- আলস্নাহর সমত্মুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রোযা রাখা। আলস্নাহ বলেন,
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে যেন রোযা রাখে’’।
(সূরা বাকারা- ১৮৫)
হাদীসে এসেছে,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাযান মাসে রোযা রাখবে তার পেছনের সকল গোনাহ আলস্নাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেবেন।’’ (বুখারী, হা/২০১৪; মুসলিম, হা/১৮১৭)
২. তারাবীর নামায আদায় করা
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাযান মাসে তারাবীর নামায পড়বে তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/ ২৪৯: বুখারী, হা/২০০৯; মুসলিম, হা/১৮৭৫; আবু দাউদ, হা/১৩৭৩; তিরমিযী, হা/৮০৮)
আলস্নাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا
‘‘আর যারা তাদের প্রভুর সমত্মুষ্টির লক্ষ্যে সিজদাবনত ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি যাপন করে।’’ (সূরা ফুরকান- ৬৪)
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত হবে এ মাসে ইমামের সাথে জামা‘আতে তারাবীর নামাজ আদায় করা; যাতে রাত্রে ইবাদাতকারীদের অমত্মর্ভুক্ত হওয়া যায়। এক হাদীসে নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন,
إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا صَلّى مَعَ الْإِمَامِ حَتّى يَنْصَرِفَ حُسِبَ لَه قِيَامُ لَيْلَةٍ
যে ব্যক্তি তার ইমামের সাথে তারাবীর নামায শেষ পর্যমত্ম আদায় করে তার জন্য পূর্ণ রাত্রি জেগে ইবাদাত করার সওয়াব লেখা হবে। (আবূ দাউদ, হা/১৩৭৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৪৭)
কোন কিশোর, পুরম্নষ বা মহিলার ইমামতিতে কোন বাড়িতে মহিলারা একত্রিত হয়ে তারাবীর নামায পড়তে পারে।
৩. বেশি বেশি কোরআন পাঠ করা
কোরআন তিলাওয়াত একটি উত্তম ইবাদাত। কোরআন ও হাদীসে কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি খুবই উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং এর যথেষ্ট ফযীলতও বর্ণনা করা হয়েছে। কোরআনে কারীমের এরশাদ হচ্ছে,
إِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَأَقَامُوْا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
‘‘নিশ্চয় যারা কোরআন তিলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক হতে কিছু অংশ গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে তারা এমন ব্যবসার আশা করে যাতে কখনো লোকসান হবে না।’’ (সূরা ফাতির- ২৯)
এ আয়াতে কোরআন পড়াকে একটি লাভজনক ব্যবসা বলা হয়েছে। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُولُ الم َرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ
যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পড়বে সে একটি নেকী পাবে আর একটি নেকী হবে দশটি নেকীর সমান। আমি বলছি না আলিফ, লাম, মীম সব মিলিয়ে একটি হরফ; বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর। (তিরমিযী, হা/২৯১০)
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন,
اَلصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
কিয়ামতের দিন কোরআন ও রোযা বান্দার জন্য শাফা‘আত করবে। রোযা বলবে, হে প্রভু! আমি এ বান্দাকে দিনে খানা-পিনা ও যৌন চাহিদা মিটানো থেকে বিরত রেখেছি, তাই আমার শাফা‘আত কবুল করম্নন। কোরআন বলবে, হে প্রভু! আমি এ বান্দাকে রাতের বেলায় ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, তাই আমার শাফা‘আত কবুল করম্নন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। (মুসতাদরাকে হাকেম, ২০৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৬২৬)
এজন্য সালাফুস সালেহীন (পূর্ব যুগের নেককার বান্দারা) বিশেষ করে রমাযান মাসে কোরআন পাঠে খুবই মনোযোগ দিতেন। এ মাসে কোরআন পড়ার জন্য তারা সময়ের একটা বড় অংশ নির্ধারণ করে রাখতেন।
ইমাম যুহরী (রহঃ) রমাযান মাস আসলে বলতেন,
إِنَّمَا هُوَ قِرَأَةُ الْقُرْأنِ وَإِطْعَامُ الطَّعَامِ
‘‘রমাযান মাস কেবল কোরআন পড়ার ও মানুষকে খাদ্য দানের মাস।’’
ইমাম মালেক (রহঃ) রমাযান মাসে হাদীস পড়া স্থগিত রাখতেন এবং কোরআন পড়ার প্রতি ঝুঁকে পড়তেন। (রমাযান শাহরম্নল কোরআন)
সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) রমাযান মাস এলে অন্যন্য নফল ইবাদাতের চেয়ে কোরআন পড়ার প্রতি অধিক মনযোগী হতেন।
এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এ সকল মহামনীষীরা না বুঝে কোরআন পড়তেন না। তারা আলস্নাহর কালাম বুঝে বুঝে পড়তেন এবং এর উপর আমল করতেন। কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমান এমন আছেন যারা কোরআনের শুধু শব্দগুলো পড়ে প্রতি হরফে দশ নেকী অর্জনের চিমত্মা করেন এবং কে কত খতম দিতে পারে- এ নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। কোরআন না বুঝে পড়লে এর দ্বারা কোরআন নাযিলের আসল উদ্দেশ্য সফল হয় না। মানুষ যাতে কোরআন পড়ে, বুঝে এবং কোরআন অনুযায়ী তাদের জীবন পরিচালনা করে- এটাই হল কোরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য। কোরআন তিলাওয়াতের ফযীলত সংক্রামত্ম হাদীসগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোরআন পড়ার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা। না বুঝে পড়লে পড়ার হক আদায় হয় না। না বুঝে একশত খতম দেয়ার চেয়ে কেউ যদি দু’চারটি আয়াত অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ বুঝে পড়ে এবং এর উপর আমল করতে পারে তবে এটা তার জন্য হাজার গুণে উত্তম হবে; যেহেতু সে কোরআন নাযিলের উদ্দেশ্যকে বাসত্মবায়িত করেছে।
একজন মুসলমানের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বড় কাজ ও ইবাদাত হল ইসলামের সঠিক জ্ঞান লাভ করা। এজন্য যে শব্দটি দিয়ে কোরআন নাযিল শুরম্ন হয়েছে তা হল إِقْرَأْ ‘পড়ো’ তার মানে সবকিছুর আগে তোমাকে পড়তে হবে, জানতে হবে। মুসলিম হতে হলে কি কি কাজ করতে হবে, কোন্ কোন্ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং কোন্ ধরনের আকীদাহ-বিশ্বাস পোষণ করতে হবে তা না জানা পর্যমত্ম কেউ যদি হাজার বারও বলে ‘আমি মুসলিম’ তবে সে আলস্নাহর কাছে মুসলিম হতে পারবে না। তাই ইসলামের সঠিক ও নির্ভুল জ্ঞান অর্জনের জন্য আলস্নাহর কালাম বুঝে পড়তে হবে। কোরআনে এসেছে - وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلاً ‘‘আলস্নাহর কথার চেয়ে সঠিক কথা আর কার হতে পারে?’’ ذلِكَ الْكِتَابِ لَارَيْبَ فِيْهِ ‘‘এটা এমন কিতাব যার কথার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয় নেই।’’
কোরআন যেহেতু আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে, তাই একে ভালভাবে বুঝার জন্য আরবী ভাষা শিক্ষা করা সকলের কর্তব্য। কোরআন-হাদীস বুঝার জন্য যদি কেউ আরবী ভাষা শিখে তবে এটা ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। তাছাড়া কোরআনের বিধি-বিধান জানার জন্য মাতৃভাষার সহযোগিতা নেয়া যায়, বর্তমানে পৃথিবীর মধ্যে প্রচলিত যত ভাষা আছে প্রায় সকল ভাষাতেই কোরআনের অনুবাদ ও তাফসীর প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আলস্নাহর রহমতে আমাদের বাংলাদেশেও বাংলা ভাষায় কোরআন বুঝার যথেষ্ট উপকরণ বের হয়েছে। কোরআনের শাব্দিক অনুবাদ, ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ, কোরআনের শব্দের অভিধান, বিষয় অভিধানসহ বেশ কিছু ভাল ভাল তাফসীর গ্রন্থও বাংলা ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে এবং সর্বত্রই এসব পাওয়া যাচ্ছে।
আমিও আলস্নাহর রহমতে কোরআন দিয়ে কোরআনের একটি বিষয়ভিত্তিক তাফসীর লিখেছি। এতে একেকটি বিষয় সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতগুলো একত্র করে বিভিন্ন পয়েন্টে সাজানো হয়েছে। কোরআনে আলোচিত মৌলিক বিষয়গুলোকে হাদীসের কিতাবের মত করে বিভিন্ন অধ্যায়ে বিন্যসত্ম করা হয়েছে। এ গ্রন্থের মাধ্যমে একেকটি বিষয় সম্পর্কে কোরআনের বক্তব্য কী তা একই জায়গায় ধারাবাহিকভাবে জানা যাবে, কিছু দিনের মধ্যে গ্রন্থটি প্রকাশিত হবে, ইনশা-আলস্নাহ!
৪. রমাযান মাসে বেশি বেশি করে দান করা
রমাযান মাসের দান হল সর্বোত্তম দান।
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ وَأَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ ، وَكَانَ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ يُدَارِسُهُ الْقُرْآنَ ، فَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ أَجْوَدَ مِنَ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম ছিলেন সবচেয়ে বড় দানশীল। আর রমাযান মাসে যখন জিবরাঈল (আঃ)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাত হত তখন তাঁর দান আরো বেড়ে যেত -كَانَ اَجْوَدُ بَالْخَيْرِ مِنَ اَلرِّيْحِ الْمُرْسَلَةِ
নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম প্রবাহমান মুক্ত বাতাসের চেয়েও আরো বেশি মুক্ত হসেত্ম কল্যাণের পথে খরচ করতেন। (বুখারী, হা/৬)
দানের অনেক দিক রয়েছে। যেমন :
টাকা-পয়সা দান করা।
কাপড় বা অন্য কোন প্রয়োজনীয় জিনিস দান করা।
অপরকে খাদ্য খাওয়ানো।
রোযাদারকে ইফতার করানো আরো সওয়াবের কাজ।
জান্নাতবাসী বান্দাদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
وَيُطْعِمُوْنَ الطَّعَامَ عَلٰى حُبِّه مِسْكِيْنًا وَّيَتِيْمًا وَّأَسِيْرًا- إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَّلَا شُكُوْرًا
‘‘তারা আলস্নাহর মহববতে মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে খাবার দেয় এবং বলে, আমরা তোমাদেরকে খাওয়াচ্ছি কেবল আলস্নাহর সমত্মুষ্টি অর্জনের জন্য- তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান এবং কৃতজ্ঞতা আমরা চাই না।’’
(সূরা দাহর- ৮, ৯)
আলস্নাহর নেক বান্দাদের মধ্যে এমন অনেক লোক ছিলেন যারা অপরকে খাদ্য দানের ক্ষেত্রে খুবই উৎসাহী ছিলেন। এক্ষেত্রে তারা শুধু গরীবদেরকে বাছাই করতেন না। অনেকে এমনও ছিলেন যারা মেহমান ছাড়া খাবার খেতেন না। অপরকে খাদ্য খাওয়ানোতে যথেষ্ট কল্যাণ রয়েছে, এর মধ্যে একটি হচ্ছে- যে খাওয়ায় এবং যাদেরকে খাওয়ানো হয় তাদের মধ্যে আমত্মরিকতা ও ভালবাসা সৃষ্টি হয়- যা জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন,
لَا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتّى تُؤْمِنُوْا وَلَا تُؤْمِنُوْا حَتّى تَحَابُّوْا
তোমরা মু’মিন না হওয়া পর্যমত্ম জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর পরস্পরে ভালবাসা ব্যতীত মু’মিন হতে পারবে না। (মুসলিম, হা/২০৩; আবু দাউদ, হা/৫১৯৫; তিরমিযী, হা/২৬৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৬৮, ৩৬৯২)
৫. রমাযান মাসে উমরা করা
কাবা হল ইবাদাতের উদ্দেশ্যে নির্মিত পৃথিবীর সর্বপ্রথম গৃহ। এর মধ্যে রয়েছে আলস্নাহর অসংখ্য নিদর্শন। হজ্জ ও উমরার মাধ্যমে এসব নিদর্শন দেখা যায়। উমরার অগণিত ফযীলত রয়েছে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَه جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। নবী করীম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, ‘‘একবার উমরা করার পর আবার উমরা করলে তা দুই উমরার মধ্যবর্তী গোনাহসমূহের কাফ্ফারাহ হয়ে যায়। আর হজ্জে মাবরম্নরের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।’’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৭৬৭; বুখারী, হা/১৭৭৩; মুসলিম, হা/৩৩৫৫; তিরমিযী, হা/৯৩৩; নাসাঈ, হা/২৬২৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৮৮)
فَإِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فَاعْتَمِرِىْ فَإِنَّ عُمْرَةً فِيْهِ تَعْدِلُ حَجَّةً
রমাযান মাসে উমরা করার ফযীলত সম্পর্কে নবী বলেন, ‘‘যখন রমাযান মাস আসবে তখন উমরা কর। কেননা এ মাসে উমরা করার সওয়াব একটি হজ্জের সমান।’’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘রমাযান মাসে উমরা করা আমার (নবীর) সাথে হজ্জ করার সমান।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৩০৯৭; তিরমিযী, হা/৯৩৯)
নবীর ইমেত্মকালের পরেও নবীর সাথে হজ্জ করার সমান সওয়াব পাওয়া যায় এমন সুযোগ কে হারায়? এ জন্য আলস্নাহ যাদেরকে সামর্থ্য দিয়েছেন তাদের রমাযান মাসে উমরা করা উচিত।
৬. রমাযানে ইতিকাফ করা
ইতিকাফ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল আবদ্ধ থাকা, কোন নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা। ইসলামী পরিভাষায় ইতিকাফ হল; ইবাদাতের নিয়তে আলস্নাহর সমত্মুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর পদ্ধতি অনুযায়ী কোন মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ রাখা।
ইতিকাফ খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। নবী কারীম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম নিজেই ইতিকাফ করেছেন এবং তার স্ত্রীগণ ও সাহাবীরাও ইতিকাফ করেছেন। ইতিকাফ আলস্নাহর সমত্মুষ্টি ও নৈকট্য লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। কারণ এটি এমন এক নির্জনতা যখন বান্দা দুনিয়ার বিভিন্ন ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে আলস্নাহর দরজায় হাজির হয় এবং আলস্নাহর আনুগত্য ও যিকির করার মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখে। বান্দা তার দেহ ও মনকে স্বীয় প্রভুর উদ্দেশ্যে বেঁধে রাখে।
ইতিকাফের বাসত্মবরূপটা এমন যেন কোন ব্যক্তি কারো কাছ থেকে তার দাবী-দাওয়া পূরণের জন্য সে তার দরজায় ধর্ণা দেয় এবং দাবী পূরণ না হওয়া পর্যমত্ম ঐ দরজায় পড়ে থাকে। ঠিক তেমনিভাবে যারা ইতিকাফ করেন তারা মায়ার সংসারকে ভুলে লাগাতার কয়েকদিন আলস্নাহর দরজায় নিজেদেরকে আটক রাখেন ফলে আলস্নাহ তাদেরকে যথেষ্ট পুরস্কার দেন।
এক হাদীসে কুদসীতে আলস্নাহ তা‘আলা বলেন, যে ব্যক্তি অর্ধ হাত আমার নিকটবর্তী হয় আমি এক হাত তার নিকটবর্তী হই। আর যে ব্যক্তি এক হাত আমার নিকটবর্তী হয় আমি তার দিকে দৌড়ে আসি আর যে যমীন ভর্তি পাপ নিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আর সে আমার সাথে কাউকে শরীক না করে আমিও ঐরূপ ক্ষমা নিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করি। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০০৯)
অপর এক হাদীসে কুদসীতে আলস্নাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার বান্দার সাথে তার ধারণা অনুযায়ী ব্যবহার করে থাকি। আর সে যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথেই থাকি। সে যখন আমাকে জনসমক্ষে স্মরণ করে তখন আমি এর থেকে উত্তম মজলিসে তাকে স্মরণ করি। আর আমার বান্দা যখন আমাকে একা একা স্মরণ করে তখন আমিও এককভাবে তাকে স্মরণ করি। (সহীহ বুখারী, হা/৭৩০৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৮১)
ইতিকাফের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল রমাযানের শেষ দশ দিন,
عَنْ أَبِيِّ بْنِ كَعْبٍ : أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ فَلَمْ يَعْتَكِفْ عَامًا فَلَمَّا كَانَ فِي الْعَامِ الْمُقْبِلِ اِعْتَكَفَ عِشْرِيْنَ لَيْلَةً .
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। এক বছর তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি, তাই পরের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০৪৪; আবু দাউদ, হা/২৪৬৮)
এটা হল সুন্নাত ইতিকাফ। আর ইতিকাফ করার জন্য মান্নত করলে এটা ওয়াজিব হবে। আর বছরের যেকোন সময়ে অল্প সময় হলেও কেউ যদি ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করে তবে তা নফল ইতিকাফ হবে।
ইতিকাফ করতে হবে মসজিদে। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِي الْمَسَاجِدِ
‘‘আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৭)
পাঞ্জেগানা মসজিদে ইতিকাফ চলে, তবে জামে মসজিদে হলে ভাল হয়।
ইতিকাফকারী মসজিদের কোন এক জায়গায় কিছুটা আড়াল করে সেখানে অবস্থান করবে, সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করবে। মানবীয় প্রয়োজন যেমন প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদি ছাড়া মসজিদের বাইরে যাবে না।
ইতিকাফের সময় বেশি বেশি নফল ইবাদাত করা উচিত। নফল নামায, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ, তাওবা-ইসিত্মগফার, দরূদ পাঠ ও মুনাজাত ইত্যাদি কাজে মগ্ন থাকবে। তাছাড়া ধর্মীয় বই-কিতাব পড়ে এবং কোরআন-হাদীস চর্চা করে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করবে এবং একে অপরের সাথে ইসলামী কথা আলোচনা করবে- এটাও বড় ধরনের ইবাদাত।
৭. লাইলাতুল কদর তালাশ করা
আরবী ভাষায় ক্বাফ- এর যবর ও দাল বর্ণে সাকিন দিয়ে ‘কাদ্রম্নন’ শব্দের অর্থ হল- সম্মান ও মর্যাদা। এদিক থেকে শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বাদর এর অর্থ হল সম্মানিত ও মহিমান্বিত রজনী।
অন্যদিকে দাল বর্ণে যবর দিয়ে কাদারম্নন শব্দের অর্থ হল পরিমাপ করা, নির্ধারণ করা। এ হিসেবে লাইলাতুল ক্বাদার অর্থ হল ভাগ্য রজনী, তাকদীরের ফয়সালা করার রাত।
কদরের রাত মহান আলস্নাহর এক বিশেষ অবদান। এ রাতের রয়েছে বিশেষ সম্মান, বিশেষ মাহাত্ম্য ও বিশেষ ফযীলত। এ রাতের নামে পবিত্র কোরআনে একটি সূরা রয়েছে। এ রাতের ব্যাপারে নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম এর অনেক হাদীস রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল এ রাতের কেন এত মর্যাদা? কেন এত ফযীলত? উত্তর একটাই, আর তা হল এ রাতেই মহান আলস্নাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ মহাগ্রন্থ আল-কোরআন মর্যাদাবান ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে মর্যাদাশীল নবী মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর উপর তাঁর মর্যাদাবান উম্মতের পথপ্রদর্শক হিসেবে নাযিল হয়েছে। সুতরাং যেখানে এতগুলো মর্যাদাপূর্ণ বিষয় একত্র হল সেখানে যে রাতে এগুলোর সমাবেশ ঘটেছে সে রাতটি কি মর্যাদাপূর্ণ না হয়ে পারে?
আলস্নাহ তা‘আলা নিজেই বলেছেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ
‘‘নিশ্চয় আমি এটাকে (আল-কোরআনকে) কদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি।’’ (সূরা কদর- ১)
এ রাতে কোরআন নাযিল করার অর্থ হল- লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে এটি নাযিল হয়, পরে প্রয়োজন অনুপাতে পর্যায়ক্রমে তা নবীর উপর নাযিল হতে থাকে। এর অপর অর্থ হচ্ছে- এ রাতে কোরআন নাযিলের সিলসিলা শুরম্ন হয়েছে এবং দীর্ঘ তেইশ বছরে তা পূর্ণতা লাভ করেছে।
এ রাতের মর্যাদার দিকে ইঙ্গিত করে আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ - لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
‘‘তুমি কি জান কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’’ (সূরা কদর ২-৩)
এখানে হাজার মাস বলতে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝানো উদ্দেশ্য নয়; বরং বেশি বুঝানোর উদ্দেশ্যে এটা বলা হয়েছে, তার মানে এ রাতটি হাজার হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
উত্তম কথাটির দু’টি ব্যাখ্যা আছে এবং উভয়টিই সঠিক।
১. কদরের রাতটি এমন ফযীলতপূর্ণ যে, এ রাতের ইবাদাত-বন্দেগী হাজার মাসের ইবাদাত-বন্দেগীর চেয়ে উত্তম। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন,
مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে আলস্নাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান লাভের আশায় কদরের রাতে ইবাদাত করবে, তার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী, হা/৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮১৮)
২. এ রাতটি এদিক দিয়ে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম যে, এ রাতে বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাযিল করে মানুষের এত কল্যাণ সাধন করা হয়েছে যা মানব জাতির ইতিহাসে হাজার মাসেও করা হয়নি। কারণ এ কোরআন একটি অসভ্য, বর্বর জাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে তাদেরকে সভ্য, ভদ্র ও চরিত্রবান করে উন্নতি ও কল্যাণের চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। কোরআনের বাণী শুনে পাথরের মত কঠিন অমত্মরগুলো পানির মত নরম হয়ে গিয়েছিল, এর মুজিযা ও মাধুর্যের সামনে সারা বিশ্ব অবাক, হতভম্ব ও নিসত্মব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সূরা দুখানে এ কথাটি এভাবে বলা হয়েছে,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ
‘‘আমি একে এক বরকতময় রাত্রে অবতীর্ণ করেছি।’’ (সূরা দুখান- ৩)
এখানে কদরের রাতকে বরকতময় বলা হয়েছে। যেহেতু এ রাতে কল্যাণ ও বরকতের এমন ধারা শুরম্ন হয়েছিল যা সারা দুনিয়ায় এখন পর্যমত্ম অব্যাহত আছে এবং কিয়ামত পর্যমত্ম থাকবে।
কদরের রাতের বিশেষত্ব সম্পর্কে আলস্নাহ তা‘আলা আরো বলেন,
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِّنْ كُلِّ أَمْرٍ
‘‘এ রাতে জিবরাঈল ও অন্যান্য ফেরেশতারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে নাযিল হয়।’’ (সূরা ক্বদর- ৪)
এ রাত্রে অগণিত ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন। হাদীসে এসেছে,
إِنَّ الَمَلَائِكَةَ تِلْكَ اللَّيْلَةِ أَكْثَرَ فِيْ الْأَرْضِ مِنْ عَدَدِ الْحَصى
‘‘কদরের রাতে ফেরেশতাদের সংখ্যা পৃথিবীর সমুদয় কংকরের চেয়েও বেশি হয়’’ (ইবনে খুযাইমা)। এই অসংখ্য ফেরেশতারা এ রাতে ইবাদাতকারীদের জন্য দু‘আ করেন।
এ রাতে বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।। সূরা দুখানে বলা হয়েছে-
فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ
‘‘এই রাতে সব ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ ফায়সালা হয়ে থাকে।’’ (সূরা দুখান- ৪)
سَلَامٌ هِيَ حَتّٰى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
‘‘এ রাতটি ফজর উদয় হওয়া পর্যমত্ম পুরোপুরি শামিত্মময়।’’ (সূরা কদর- ৫)
অর্থাৎ এ রাতে শুধু শামিত্ম আর শামিত্ম, মঙ্গল আর মঙ্গল। এতে অনিষ্টের নাম গন্ধও নেই। অনাবিল শামিত্মপূর্ণ এ রজনীর অফুরমত্ম শামিত্ম ফজর উদয় পর্যমত্ম অব্যাহত থাকে।
লাইলাতুল কদর কোনটি?
কদরের রাত কোন তারিখে তা একেবারে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে কিছু দলীলের ভিত্তিতে এ রাতটি রমাযান মাসে হওয়ার ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হতে পারি। যেমন সূরা কদরের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, কোরআন কদরের রাতে নাযিল হয়েছে। আবার সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, রমাযান মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে। সুতরাং এ আয়াতের মাধ্যমে এটা নির্দিষ্ট হয়ে গেল যে, কদরের রাতটি রমাযান মাসেই রয়েছে। রমাযান মাসের কোন্ রাত? এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنْ الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, লাইলাতুল কদরকে তোমরা রমাযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে খোঁজ কর। (সহীহ বুখারী, হা/২০১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৮৯)
এ হাদীস দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এ রাতটি রমাযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের রাতগুলোতে রয়েছে এবং ২৭ তারিখের রাতে হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি। আবার এ রাতটি পরিবর্তন হয়, অর্থাৎ এ বেজোড় তারিখগুলোর মধ্যে একেক বছর একেক তারিখে হতে পারে।
হাদীসে এসেছে, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম কদরের রাতের তারিখ জানানোর জন্য বের হলেন, তখন মুসলমানদের দু’ব্যক্তি বিতর্কে লিপ্ত হল, ফলে নবীকে এ রাতটি ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৬৯৬; সহীহ বুখারী, হা/৪৯; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৩৩৮০)
তবে এ রাতটি নির্দিষ্ট না করার মধ্যে বিরাট কল্যাণ ও হেকমত রয়েছে। এটি নির্দিষ্ট থাকলে কেবল ঐ তারিখেই মানুষ আলস্নাহর ইবাদাত করত, এখন অনির্দিষ্ট থাকাতে শেষ দশকের বেজোড় পাঁচটি রাতেই আলস্নাহর বান্দারা বেশি বেশি ইবাদাত করে আলস্নাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পাবে।
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَه وَأَحْيَا لَيْلَه وَأَيْقَظَ أَهْلَه
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম রমাযানের শেষ দশকের রাতগুলোতে ইবাদাতের প্রতি বিশেষ গুরম্নত্ব দিতেন, কোমর কষে বাঁধতেন। তিনি নিজে জাগতেন এবং পরিবারের লোকদেরকেও জাগাতেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪২২)
লাইলাতুল কদরে পড়ার দু‘আ :
আয়েশা (রাঃ) নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামকে বললেন, আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তবে কী পড়ব? তিনি বলেন এ দু‘আ পড়-
اَللّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ .
আলস্নাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউউন তুহিববুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী ।
অর্থ : হে আলস্নাহ! তুমি বড়ই ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে তুমি ভালবাস। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী, হা/৩৫১৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৫০)
৮. ফিতরা আদায় করা
ইসলাম শামিত্ম ও সমতার ধর্ম। একজন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে আর একজন না খেয়ে মরবে- এই নীতিকে ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম সম্পদের আবর্তন চায়। সূরা হাশরের ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
كَيْ لَا يَكُوْنَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ
‘‘সম্পদ শুধুমাত্র তোমাদের ধনীদের মধ্যে যেন কেন্দ্রীভূত না থাকে।’’
وَفِيْ أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
‘‘আর তাদের সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে।’’ (সূরা যারিয়াত ১৯)
এজন্যই ইসলাম এমন কিছু বিধান ফরয করেছে যাতে করে গরীবরা ধনীদের সম্পদের কিছু অংশ ভোগ করতে পারে। এরই একটি অংশ হচ্ছে সাদাকাতুল ফিতর। দু’টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ সাদাকাহ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একটি হল রোযাকে ত্রম্নটিমুক্ত করা, অপরটি হল গরীবদেরকে ঈদের আনন্দে শরীক করা। মানুষের মধ্যে নানাবিধ দুর্বলতা রয়েছে, আলস্নাহর হুকুম পালন করতে কতইনা ভুল-ত্রম্নটি হয়ে যায়। বান্দা দীর্ঘ একটি মাস রোযা পালন করেছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই কিছু ত্রম্নটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। বান্দার এ ঘাটতি যাতে পূর্ণ হয়ে যায় তাই ইসলাম বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কিছু দান-সাদাকাহ করার নির্দেশ দিয়েছে। অপর দিকে ঈদের দিনটি হচ্ছে মুসলিম জাতির এক চরম আনন্দের দিন। কিন্তু যারা অর্ধাহারে অনাহারে কালযাপন করছে, আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, তারা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে কী করে ঈদের আনন্দ উপভোগ করবে? মুসলিম সমাজের এই বৈষম্য দূর করার জন্য বিশেষ করে ঈদের দিনে গরীবদেরকে সাহায্য করে ঈদের আনন্দে তাদেরকে শরীক করার জন্য ইসলাম এই সুন্দর ব্যবস্থা দিয়েছে।
ফিতরা ছোট বড় সকলের পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে :
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ وَالذَّكَرِ وَالْأُنْثى وَالصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلَاةِ .
আবদুলস্নাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম মুসলমানদের প্রত্যেক স্বাধীন-পরাধীন, নারী-পুরম্নষ, ছোট-বড়, সকলের উপর এক ‘সা’ পরিমাণ যব দিয়ে ফিতরা আদায় করা ফরয করেছেন এবং ঈদের নামাযে যাওয়ার আগে তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৫০৩; নাসাঈ, হা/২৫০৪)
এ হাদীসসহ অন্যান্য হাদীসে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে দেশে যে খাদ্য প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত সেখানে ঐ খাদ্যকেই ফিতরার জন্য নির্বাচন করতে হবে। আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য চাল, দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে গম। তাই আমরা যারা যে দামের চাল খাই সেই দামের চাল দিয়ে ফিতরা দেয়া উত্তম হবে।
ফিতরার পরিমাণ হল এক ‘সা’। আমাদের দেশের হিসাবে এক ‘সা’ হচ্ছে সেরের মাপে পৌনে তিন সের এবং কেজির মাপে আড়াই কেজি প্রায় ।
ফিতরার হক্বদার হচ্ছেন মিসকীন ও ফকীরগণ। তাছাড়া সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে বর্ণিত যাকাত প্রদানের যে ৮টি খাত উলেস্নখ করা রয়েছে এসব খাতেও ফিতরা দেয়া যাবে।
নিজের কোন আত্মীয় গরীব থাকলে তাকে ফিতরা বা অন্যান্য দান-সাদাকা দিলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। একটি হল দানের সওয়াব, অপরটি হল আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার সওয়াব। (ইবনে মাজাহ, হা/১৮৪৪)
৯. ঈদের নামায আদায় করা
রমাযান মাস শেষে পশ্চিমাকাশে যখন শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখা যায় তখন মুসলিম সমাজের মধ্যে এক নতুন আনন্দ বিরাজ করে। সবাই ঈদের খুশীতে মেতে উঠে। তবে এই খুশীতে শয়তানী কার্যকলাপ না ঢুকিয়ে নবীর শিক্ষা ও আমলের অনুসরণ করা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব।
ঈদ শব্দটি আরবী عَوْدٌ থেকে এসেছে, এর অর্থ হচ্ছে বার বার ফিরে আসা। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দু’টি দিন প্রতি বছর একবার করে ফিরে আসে বিধায় এ দু’টি দিনকে ইসলামী শরীয়াতে ঈদের দিন বলা হয়েছে। তাছাড়া ঈদের অপর অর্থ আনন্দ, উৎসব। মুসলিম সমাজ এ দু’টি দিনে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে এবং আনন্দ করে, তাই এ দিনগুলোকে ঈদের দিন বলা হয়।
মুহাম্মাদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম-এর পূর্বে কোন নবীর শরীয়াতে ঈদের কোন অনুষ্ঠান ছিল না। মহানবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম মদীনায় হিজরত করার পর দ্বিতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে প্রথম ঈদের নামায আদায় করেন। আরবের মুশরিকরা বৎসরে দু’টি পর্বে আনন্দ উৎসব করত। এর বিপরীতে আলস্নাহ তা‘আলা মুসলিম জাতিকে দু’টি পবিত্র উৎসবের দিন বদলা দিলেন।
নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন-
يَا أَبَا بَكْرٍ إِنَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا وَهذَا عِيْدُنَا
হে আবূ বকর! প্রত্যেক জাতিরই আনন্দোৎসব রয়েছে। আর আমাদের আনন্দোৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। (সহীহ বুখারী, হা/৯৫২; সহীহ মুসলিম, হা/২০৯৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৮৯৮)
ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া সুন্নাত। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম এদিন সকালে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেতেন এরপর ঈদগাহে যেতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৯৫২; সহীহ মুসলিম, হা/২০৯৮)
ঈদের দিন শরীর পরিচ্ছন্ন করা, সকালে গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ও যথাসম্ভব উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নাত।
কোন ওযর না থাকলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া এবং সম্ভব হলে এক রাসত্মা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাসত্মা দিয়ে ফিরে আসা সুন্নাত।
ঈদের দিন তাকবীর পাঠ করা জরম্নরী :
وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
‘‘আলস্নাহ তা‘আলা চান তোমরা রোযার দিনগুলো (রমাযানের সংখ্যা) পূর্ণ কর এবং আলস্নাহর বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা কর, যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিখিয়েছেন। তাহলে আশা করা যায় তোমরা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে।’’ (সূরা বাকারা- ১৮৫)
তাফসীরকুল শিরোমনী আবদুলস্নাহ ইবনে আববাস (রাঃ) এ আয়াতের প্রেক্ষিতে বলেন, প্রত্যেক রোযাদারের কর্তব্য হচ্ছে শাওয়াল মাস শুরম্ন হওয়ার সাথে সাথেই তাকবীর বলতে থাকবে। যতক্ষণ না ঈদগাহ থেকে ফিরে আসে। (ফত্হুল বয়ান ১ম খ- ২৩৯ পৃষ্ঠা)
বিশেষ করে ঈদগাহে যাওয়ার সময় এবং ফিরে আসার সময় তাকবীর বলা মুসত্মাহাব।
নীচের বাক্যগুলোর মাধ্যমে তাকবীর পড়তে হয় :
اَللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ لَا اِلٰهَ إِلَّا اللهُ اَللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ وَ لِلّهِ الْحَمْدُ .
আলস্নাহু আকবার, আলস্নাহু আকবার, লা-ইলাহা ইলস্নালস্নাহু, আলস্নাহু আকবার, আলস্নাহু আকবার, ওয়ালিলস্না-হিল হামদ।
অর্থ : আলস্নাহ সবচেয়ে বড়, আলস্নাহ সবচেয়ে বড়, আলস্নাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন উপাস্য নেই, আলস্নাহ সবচেয়ে বড়, আলস্নাহ সবচেয়ে বড়, সকল প্রশংসা আলস্নাহর জন্য।
ঈদের দিন রোযাদাররা বিশেষ সম্মান লাভ করে। আলস্নাহর বান্দারা সারাটি মাস রোযা রাখার পর আলস্নাহর সমত্মুষ্টি লাভের আশা নিয়ে যখন ঈদগাহের দিকে রওয়ানা হয় তখন আলস্নাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করতে থাকেন এবং বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! তোমরা বলত ঐ শ্রমিকের পুরস্কার কী হতে পারে যে তার কাজ পরিপূর্ণ করেছে। তারা বললেন, পরিপূর্ণ প্রতিদান দেয়াই হল তার পুরস্কার। এবার আলস্নাহ তা‘আলা বললেন, হে আমার ফেরেশতাকুল! আমার বান্দা-বান্দীরা তাদের উপর আমার ফরয করা দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছে। অতঃপর উচ্চ আওয়াজে (তাকবীর) বলতে বলতে দু‘আর জন্য ঈদগাহে রওয়ানা হয়েছে। আমার ইজ্জত, বড়ত্ব, ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি অবশ্যই তাদের ডাকে সাড়া দেব।
এবার আলস্নাহ তা‘আলা বলেন, হে আমার বান্দারা! তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের গোনাহগুলোকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম, ফলে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে।
(বাইহাকী থেকে মিশকাত)
প্রিয় ভাই-বোনেরা একটু চিমত্মা করম্নন! এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য ও মর্যাদা আর কী হতে পারে? হে আলস্নাহ! আমাদেরকেও তোমার ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যে শামিল করে নাও। আ-মীন!
রমাযান মাস ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ে কিছু কিছু রোযা রাখার অভ্যাস থাকা খুবই ভাল এবং বিরাট সওয়াবের কাজ। আবূ উমামা (রাঃ) নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামকে বললেন, হে আলস্নাহর রাসূল! আমাকে কোন (ভাল) আমলের কথা বলে দিন। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বললেন,
عَلَيْكَ بِاالصَّوْمِ فَإِنَّه لَاعَدْلَ لَه
‘‘তুমি অবশ্যই রোযা রাখবে, কেননা এর সমতুল্য অন্য কিছু নেই।’’
(নাসাঈ, হা/২২২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩৩০)
রমাযান মাস ছাড়াও যে দিনগুলোতে রোযা রাখার বিশেষ ফযীলত রয়েছে হাদীসের প্রমাণসহ নীচে তা উলেস্নখ করা হল :
عَلَيْكَ بِاالصَّوْمِ فَإِنَّه لَاعَدْلَ لَه
‘‘তুমি অবশ্যই রোযা রাখবে, কেননা এর সমতুল্য অন্য কিছু নেই।’’
(নাসাঈ, হা/২২২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩৩০)
রমাযান মাস ছাড়াও যে দিনগুলোতে রোযা রাখার বিশেষ ফযীলত রয়েছে হাদীসের প্রমাণসহ নীচে তা উলেস্নখ করা হল :
দশই মুহাররম অনেক ফযীলতপূর্ণ দিন। এদিন রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কে রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন,
أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ
‘‘রমাযানের পর সর্বোত্তম রোযা হল মুহাররম মাসের রোযা।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৮১২; আবু দাউদ, হা/২৪৩১; তিরমিযী, হা/৪৩৮)
নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম আরো বলেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَاشُرَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يَّكَفِّرَ السَّنَةَ اللَّتِىْ قَبْلَه ̒
‘‘আমি আলস্নাহর নিকট আশা রাখি যে, আশুরার রোযা বিগত একবছরের গোনাহের কাফফারাহ হয়ে যাবে।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; আবু দাউদ, হা/২৪২৭)
আশুরার রোযা আগে বা পরে একদিন মিলিয়ে দু’টি রাখা উত্তম।
أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ
‘‘রমাযানের পর সর্বোত্তম রোযা হল মুহাররম মাসের রোযা।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৮১২; আবু দাউদ, হা/২৪৩১; তিরমিযী, হা/৪৩৮)
নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম আরো বলেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَاشُرَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يَّكَفِّرَ السَّنَةَ اللَّتِىْ قَبْلَه ̒
‘‘আমি আলস্নাহর নিকট আশা রাখি যে, আশুরার রোযা বিগত একবছরের গোনাহের কাফফারাহ হয়ে যাবে।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; আবু দাউদ, হা/২৪২৭)
আশুরার রোযা আগে বা পরে একদিন মিলিয়ে দু’টি রাখা উত্তম।
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَه سِتًّا مِّنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
আবূ আইয়ূবের বর্ণিত হাদীসে রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রমাযান মাসে রোযা রাখল এবং শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি রোযা রাখল সে যেন সারা বছর রোযা রাখল।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/২৮৭৯)
এ হাদীসটির উপর আমল করা সকলের উচিত। একটি নেক আমলের সওয়াব সর্বনিম্ন দশ দেয়া হয়। তাই রমাযানের ত্রিশ রোযা ৩০০ দিন আর শাওয়ালে ৬টি রোযা ৬০ দিনের সমান হয়। এতে ৩৬০ দিন পূর্ণ হয়ে যায় যা একবছরের বেশি হয়, কারণ আরবী বছর ৩৫৪ দিনে হয়ে থাকে। এ রোযাগুলো পূর্ণ মাসের যেকোন সময়ে রাখা যায়, একসাথে না রেখে ভেঙ্গে ভেঙ্গেও রাখা যায়।
আবূ আইয়ূবের বর্ণিত হাদীসে রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রমাযান মাসে রোযা রাখল এবং শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি রোযা রাখল সে যেন সারা বছর রোযা রাখল।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/২৮৭৯)
এ হাদীসটির উপর আমল করা সকলের উচিত। একটি নেক আমলের সওয়াব সর্বনিম্ন দশ দেয়া হয়। তাই রমাযানের ত্রিশ রোযা ৩০০ দিন আর শাওয়ালে ৬টি রোযা ৬০ দিনের সমান হয়। এতে ৩৬০ দিন পূর্ণ হয়ে যায় যা একবছরের বেশি হয়, কারণ আরবী বছর ৩৫৪ দিনে হয়ে থাকে। এ রোযাগুলো পূর্ণ মাসের যেকোন সময়ে রাখা যায়, একসাথে না রেখে ভেঙ্গে ভেঙ্গেও রাখা যায়।
এ রোযার অনেক গুরম্নত্ব রয়েছে। এ রোযাকে আইয়্যামে বীজের রোযা বলা হয়। রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম আবূ যর (রাঃ)-কে বললেন-
يَا أَبَا ذَرِّ إِذَا صُمْتَ مِنَ الشَّهْرِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَصُمْ ثَلَاثَ عَشَرَةَ وَأَرْبَعَ عَشَرَةَ وَخَمْسَ عَشَرَةَ
হে আবূ যার! তুমি যখন প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখবে তখন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখ। (তিরমিযী, হা/৭৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২১২৮)
আবূ যর (রাঃ) বলেন, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখল সে যেন সারা বছরই রোযা রাখল, এর সত্যতা স্বরূপ তিনি আলস্নাহ তা‘আলার কিতাবের এ আয়াতটি পাঠ করেন,
مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَه عَشْرُ أَمْثَالِهَا
‘‘যে ব্যক্তি একটি নেক আমল করবে এর বিনিময়ে সে দশটি নেকী পাবে।’’ (সূরা আনআম- ১৬০)
একদিন দশদিনের সমান এবং তিনদিন এক মাসের সমান। এভাবে প্রতি মাসে তিনটি রোযা রাখলে পূর্ণ বছর রোযা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
يَا أَبَا ذَرِّ إِذَا صُمْتَ مِنَ الشَّهْرِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَصُمْ ثَلَاثَ عَشَرَةَ وَأَرْبَعَ عَشَرَةَ وَخَمْسَ عَشَرَةَ
হে আবূ যার! তুমি যখন প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখবে তখন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখ। (তিরমিযী, হা/৭৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২১২৮)
আবূ যর (রাঃ) বলেন, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখল সে যেন সারা বছরই রোযা রাখল, এর সত্যতা স্বরূপ তিনি আলস্নাহ তা‘আলার কিতাবের এ আয়াতটি পাঠ করেন,
مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَه عَشْرُ أَمْثَالِهَا
‘‘যে ব্যক্তি একটি নেক আমল করবে এর বিনিময়ে সে দশটি নেকী পাবে।’’ (সূরা আনআম- ১৬০)
একদিন দশদিনের সমান এবং তিনদিন এক মাসের সমান। এভাবে প্রতি মাসে তিনটি রোযা রাখলে পূর্ণ বছর রোযা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
আরাফার দিনের অনেক ফযীলত রয়েছে। আলস্নাহ তা‘আলা আরাফার দিন মানুষকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং ফেরেশতাগণের সামনে গৌরব করে বলেন, আরাফার মাঠের এসকল মানুষ কী চায়? অর্থাৎ যা চায় তাই দান করা হবে।
আরাফার দিন তথা যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখের রোযার গুরম্নত্ব অপরিসীম। এ সম্পর্কে নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন-
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّيْ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِيْ قَبْلَه وَالسَّنَةَ الَّتِيْ بَعْدَهُ
‘‘আমি ধারণা করি যে, আরাফার দিনের রোযা গত বছর ও আগামী এক বছরের গোনাহের কাফফারাহ হয়ে যায়।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; তিরমিযী, হা/৭৪৯)
আরাফার দিন তথা যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখের রোযার গুরম্নত্ব অপরিসীম। এ সম্পর্কে নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন-
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّيْ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِيْ قَبْلَه وَالسَّنَةَ الَّتِيْ بَعْدَهُ
‘‘আমি ধারণা করি যে, আরাফার দিনের রোযা গত বছর ও আগামী এক বছরের গোনাহের কাফফারাহ হয়ে যায়।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; তিরমিযী, হা/৭৪৯)
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযাকে খুবই গুরম্নত্ব দিতেন। তিনি বলতেন-
تُعْرَضُ الْأَعْمَالُ يَوْمَ الْإِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُّعْرَضَ عَمَلِيْ وَأَنَا صَائِمٌ
‘‘সোমবার ও বৃহস্পাতিবার মানুষের আমলসমূহ আলস্নাহর নিকট পেশ করা হয়। তাই আমি এটা পছন্দ করি যে, রোযা অবস্থায় আমার আমল আলস্নাহর কাছে পেশ করা হোক।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭১১; তিরমিযী, হা/৭৪৭)
تُعْرَضُ الْأَعْمَالُ يَوْمَ الْإِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُّعْرَضَ عَمَلِيْ وَأَنَا صَائِمٌ
‘‘সোমবার ও বৃহস্পাতিবার মানুষের আমলসমূহ আলস্নাহর নিকট পেশ করা হয়। তাই আমি এটা পছন্দ করি যে, রোযা অবস্থায় আমার আমল আলস্নাহর কাছে পেশ করা হোক।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭১১; তিরমিযী, হা/৭৪৭)
প্রত্যেকটি কাজের পরিকল্পনা গ্রহণের মূলে একটি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে। সেই উদ্দেশ্যকে বাসত্মবায়িত করার জন্য কাজটি সম্পাদন করা হয়। মহান আলস্নাহ তাঁর বান্দাদের উপর একমাস রোযা রাখা ফরয করেছেন তাদেরকে উপবাস রেখে অযথা কষ্ট দেয়ার জন্য নয়। রোযা ফরয করার পেছনে এক বিরাট উদ্দেশ্য রয়েছে। যে আয়াতের মাধ্যমে আলস্নাহ তা‘আলা রোযা ফরয করেছেন সে আয়াতেরই শেষ অংশে সেই উদ্দেশ্যের কথা তিনি বলে দিয়েছেন। তাই আমাদের কর্তব্য হল সে বিষয়টি জানা এবং তা অর্জন করার জন্য চেষ্টা করা। কারণ কোন কাজ যে উদ্দেশ্যে করা হয় সে উদ্দেশ্য যদি সফল না হয় তবে কাজটি বিফলে যায়।
মহান আলস্নাহ তা‘আলা রোযার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! পূর্ববর্তী উম্মতের মত তোমাদের উপরও রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, সম্ভবত এর মাধ্যমে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা বাকারা- ১৮৩)
এখান থেকে স্পষ্ট জানা গেল যে, তাকওয়া অর্জন করাই রোযার মূল উদ্দেশ্য। তাকওয়া এত মূল্যবান জিনিস যে, এর ফলে যে কল্যাণ ও উপকার পাওয়া যায় অন্য কিছুর দ্বারা তা পাওয়া যায় না। যেমন কোরআন থেকে হেদায়াত লাভে ধন্য হয় মুত্তাকীরা। আলস্নাহ বলেছেন, هُدًىْ لِّلْمُتَّقِيْنَ যাদের তাকওয়া আছে তারাই এর থেকে হিদায়াত বা পথের দিশা পায় (সূরা বাকারা-২)। সবচেয়ে বড় ও চিরস্থায়ী সুখ ও শামিত্মর ঠিকানা জান্নাতে মুত্তাকীরাই যাবে। আলস্নাহ বলেন, أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ যাদের মধ্যে তাকওয়া আছে তাদের জন্য জান্নাত তৈরী করে রাখা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৩)
যত ভাল কাজ ও নেক আমল রয়েছে এর বাহ্যিক কাঠামো আলস্নাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তাকওয়াই তাঁর কাছে পৌঁছে। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন-
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوى مِنْكُمْ
‘‘তোমাদের কুরবানীর পশুর রক্ত এবং গোশত আলস্নাহর কাছে পেঁŠছে না; বরং তাকওয়াই আলস্নাহর কাছে পেঁŠছে।’’ (সূরা হাজ্জ- ৩৭)
এখন প্রশ্ন হল, তাকওয়া এমন কোন জিনিসের নাম যার এত মান-মর্যাদা, এত উপকারিতা যা অর্জন করার জন্য দীর্ঘ একটি মাস সাধনা করতে হয়?
তাকওয়ার শাব্দিক অর্থ রক্ষা করা, বেঁচে চলা, ভয় করা। পূর্ণাঙ্গ অর্থে তাকওয়া হচ্ছে মানুষের ভেতরে লুকায়িত এমন কিছু গুণের নাম যা আলস্নাহর খাওফ ও মুহাববাত (ভয় ও ভালবাসা) থেকে জন্ম নেয়, যা ভাল কাজের প্রেরণা দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। এজন্য যার মধ্যে তাকওয়ার গুণ অর্জিত হয়ে যায় সে জাহান্নাম ও আলস্নাহর শাসিত্মর ভয়ে গোনাহের কাজ করতে পারে না। আর জান্নাত ও আলস্নাহর ভালবাসা অর্জনের আশায় নেক আমল ছাড়তে পারে না। রোযার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এ গুণটি অর্জিত হয়।
মহান আলস্নাহ তা‘আলা রোযার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! পূর্ববর্তী উম্মতের মত তোমাদের উপরও রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, সম্ভবত এর মাধ্যমে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা বাকারা- ১৮৩)
এখান থেকে স্পষ্ট জানা গেল যে, তাকওয়া অর্জন করাই রোযার মূল উদ্দেশ্য। তাকওয়া এত মূল্যবান জিনিস যে, এর ফলে যে কল্যাণ ও উপকার পাওয়া যায় অন্য কিছুর দ্বারা তা পাওয়া যায় না। যেমন কোরআন থেকে হেদায়াত লাভে ধন্য হয় মুত্তাকীরা। আলস্নাহ বলেছেন, هُدًىْ لِّلْمُتَّقِيْنَ যাদের তাকওয়া আছে তারাই এর থেকে হিদায়াত বা পথের দিশা পায় (সূরা বাকারা-২)। সবচেয়ে বড় ও চিরস্থায়ী সুখ ও শামিত্মর ঠিকানা জান্নাতে মুত্তাকীরাই যাবে। আলস্নাহ বলেন, أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ যাদের মধ্যে তাকওয়া আছে তাদের জন্য জান্নাত তৈরী করে রাখা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৩)
যত ভাল কাজ ও নেক আমল রয়েছে এর বাহ্যিক কাঠামো আলস্নাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তাকওয়াই তাঁর কাছে পৌঁছে। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন-
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوى مِنْكُمْ
‘‘তোমাদের কুরবানীর পশুর রক্ত এবং গোশত আলস্নাহর কাছে পেঁŠছে না; বরং তাকওয়াই আলস্নাহর কাছে পেঁŠছে।’’ (সূরা হাজ্জ- ৩৭)
এখন প্রশ্ন হল, তাকওয়া এমন কোন জিনিসের নাম যার এত মান-মর্যাদা, এত উপকারিতা যা অর্জন করার জন্য দীর্ঘ একটি মাস সাধনা করতে হয়?
তাকওয়ার শাব্দিক অর্থ রক্ষা করা, বেঁচে চলা, ভয় করা। পূর্ণাঙ্গ অর্থে তাকওয়া হচ্ছে মানুষের ভেতরে লুকায়িত এমন কিছু গুণের নাম যা আলস্নাহর খাওফ ও মুহাববাত (ভয় ও ভালবাসা) থেকে জন্ম নেয়, যা ভাল কাজের প্রেরণা দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। এজন্য যার মধ্যে তাকওয়ার গুণ অর্জিত হয়ে যায় সে জাহান্নাম ও আলস্নাহর শাসিত্মর ভয়ে গোনাহের কাজ করতে পারে না। আর জান্নাত ও আলস্নাহর ভালবাসা অর্জনের আশায় নেক আমল ছাড়তে পারে না। রোযার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এ গুণটি অর্জিত হয়।
রোযার নৈতিক ও আধ্যাত্মিক অন্যতম সুফল হল রোযা মানুষের মধ্যে আত্মসংযম তৈরী করে। মানুষের নাফস বা প্রবৃত্তি তিন প্রকার :
১. নাফ্সে আম্মারাহ : এটি সর্বদা মানুষকে মন্দ কাজের দিকে প্রেরণা দেয়। সূরা ইউসুফের ৫৩ নং আয়াতে এর উলেস্নখ আছে ।
২. নাফ্সে লাওয়ামাহ : এ নাফসের অধিকারী মানুষ খারাপ কাজ করে ফেলে; কিন্তু পরে যখন তার বিবেক সজাগ হয় তখন সে নিজেকে তিরস্কার করে। সূরা কিয়ামার ২ নং আয়াতে এর উলেস্নখ আছে।
৩. নাফ্সে মুতমাইন্নাহ : প্রশামত্ম আত্মা, নাফসের উপর চেষ্টা সাধনা করতে করতে যখন এমন সত্মরে পেঁŠছে যায় যে, তার মধ্যে মন্দ কাজের কোন স্পৃহা থাকে না, গোনাহের কাজে ভয় পায় আর ভাল কাজে খুশী হয় তখন তাকে নাফসে মুতমাইন্নাহ বলা হয়। এ আত্মাকে বলা হবে-
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ - ارْجِعِيْ إِلٰى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً - فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ - وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ
‘‘হে প্রশামত্ম আত্মা! তুমি সমত্মুষ্ট এবং সমেত্মাষভাজন হয়ে তোমার প্রভুর দিকে চল। অতঃপর আমার (নেক) বান্দাদের অমত্মর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে।’’ (সূরা ফাজর : ২৭-৩০)
মানুষের নাফস বা আত্মাকে পর্যায়ক্রমে উন্নত করতে হলে এর উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন করতে হয় এবং একে আলস্নাহর বিধান অনুযায়ী চালাতে হয়। এটাই হচ্ছে সংযম বা আত্মাকে সংযত করা।
মানুষের মন হল রাজা আর অঙ্গ-প্রতঙ্গ হল প্রজা, মন যা পরিকল্পনা করে শরীরের অঙ্গগুলো তা বাসত্মবায়ন করে। এই মনকে ভাল ও কল্যাণকর পরিকল্পনায় নিয়োজিত না করে যে একে লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেয়, তার অবস্থা হয়ে যায় ঐ অশ্বারোহীর মত যে তার অশ্বকে কাবু করতে পারে না, অশ্ব যেদিকে যেতে চায় তাকে নিয়ে সেদিকে চলে যায়।
এ পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাসে যারা স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছেন তারা তাদের আভ্যমত্মরীণ শক্তিকে নিজেদের অধীন ও অনুগত করে নিয়েছিলেন। তারা কোন দিনই নাফসের লোভ-লালসা এবং আবেগের গোলাম হননি। তাদের ইচ্ছা-বাসনা ছিল মযবুত, সংকল্প ছিল অটল।
মানুষের প্রকৃতিতে পরস্পর বিরোধী দু’টি ভাব সমানভাবে রেখে দেয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে পশুত্ব, আর অপরটি হচ্ছে মনুষ্যত্ব। যারা পশুত্ব তথা নাফসের দাবী-দাওয়াকে নিয়ন্ত্রণে রেখে আত্মার উন্নতি সাধন করতে পারেন তারাই সফলতা অর্জন করতে পারেন।
ইসলাম নাফ্সের দাবীগুলোকে গলাটিপে হত্যা করার নির্দেশ দেয়নি। অথচ একদল লোক মানবদেহ হতে পশুত্বের উপাদানগুলোর বিলুপ্তি ঘটানোর কাজে লিপ্ত। তারা খাওয়া-দাওয়া, নিদ্রা ও যৌন চাহিদা- মানবপ্রকৃতির এ দাবীগুলোকে একেবারে শেষ করতে চান। তারা সাধু, সন্ন্যাসী, সেন্ট ও দরবেশরূপে পৃথিবীবাসীর নিকট পরিচিত।
আরেক দল পশুত্বকে জীবনের চরম সার্থকতা হিসেবে ধরে নিয়েছেন। আহার, নিদ্রা, যৌনসংযোগ ও আরাম-আয়েশ এগুলোকেই তারা জীবনের মূল লক্ষ্যে পরিণত করেছেন। কিন্তু আসল সত্য এ দুয়ের মাঝখানে রয়েছে। আর তা হল- মনের চাহিদাগুলোকে সমূলে ধ্বংস করা যাবে না, আবার মন যা চায় তাই করা যাবে না; বরং মনের চাহিদাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের শিখানো পন্থায় পূরণ করতে হবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা।
মানুষের প্রকৃতিতে যৌন চাহিদা রয়েছে। এটাকে মূলোৎপাটন করে খাসি হয়ে যেতে ইসলাম বলেনি। আবার লাগামহীনভাবে যে যার সাথে ইচ্ছা মিলিত হবে এটাকেও সমর্থন করেনি। ইসলাম কিছু বিধিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে মাত্র। ছেলে বা মেয়ে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে তখন একে অপরকে পছন্দ করে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এ চাহিদা মিটাবে। এতে একদিকে যেমন মনের চাহিদা মিটবে অন্যদিকে পরিবারের ভিত্তি স্থাপিত হবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্থায়ী বন্ধনের ফলে ভালবাসা গাঢ় হবে। সমত্মান প্রজনেমর ধারা অব্যাহত থাকবে। মাতৃত্ব, পিতৃত্ব ও বংশের মর্যাদা রক্ষা হবে। এ বিধানকে উপেক্ষা করে যারা যিনা-ব্যভিচারকে লাইসেন্স দিয়ে অবাধে হালাল করে দিয়েছে তাদের চারিত্রিক, পারিবারিক ও সামাজিক পরিস্থিতির কী যে অবনতি ঘটেছে তা ব্যাখ্যা দিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন বসত্মুবাদী দেশগুলোর দিকে নজর দিলেই সেই দৃশ্য ফুটে উঠবে।
মানুষের প্রকৃতিতে পেটের ক্ষুধা রয়েছে, সময় হলে বাঁচার জন্য খেতেই হয়। এছাড়াও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা রয়েছে যা পূরণ করতে হলে টাকা-পয়সার দরকার হয়। তাই উপার্জন করতে হবে। এখন ইসলাম উপার্জনের সকল পথ বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতে বলেনি; বরং আরো উৎসাহ দিয়েছে। উপার্জনকারীকে আলস্নাহর বন্ধু বলা হয়েছে। ইসলাম উপার্জনের কিছু অবৈধ পন্থাকে নিষিদ্ধ করেছে মাত্র। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি এগুলো যদি হালাল হয়ে যায় তাহলে তো কারও জান-মালের কোন নিরাপত্তাই থাকবে না। সুদ, ঘুষ, ওজনে কম দেয়া, ব্যবসায় প্রতারণা, চাঁদাবাজী, দুর্নীতি, হাইজ্যাক ইত্যাদির কারণে সমাজে আজ কত অশামিত্মকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তা সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। মানুষ নাফস বা কুপ্রবৃত্তির অনুসারী হওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে।
রোযা মানুষের মনের চাহিদাগুলো মেটানোর ক্ষেত্রে খুবই সুন্দরভাবে আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ দেয়। রোযা মানুষকে সম্বোধন করে বলে যে, দেখো! তুমি রোযা থাকার কারণে সারাটি দিন তোমার জন্য খাওয়া-দাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রোযা থাকার কারণে হালাল খাবার পর্যমত্ম তোমার উপর হারাম হয়ে গেছে, তাহলে তুমি হারাম পন্থায় কামাই করার চিমত্মা কীভাবে করতে পার? রোযা থাকার কারণে দিনের বেলায় তোমার স্ত্রীর সাথেও যৌনমিলন হারাম হয়ে গেছে, তাহলে তুমি যিনা করার চিমত্মা কীভাবে করতে পার?
রোযা আরো বলে যে, ফজরের আযানের সাথে সাথেই তোমাকে খানা-পিনা বন্ধ করে দিতে হবে, আবার সূর্য ডুবার সাথে সাথে খাবার খেতেই হবে, এখন খাওয়ার মধ্যেই কল্যাণ।
রোযা আরো বলে যে, ইফতারের পরেই তুমি আরামে ঘুমাতে পারবে না; তারাবীর নামায পড়তে হবে, তবে সারা রাত নয়; মাত্র দেড়-দু’ঘন্টা। তারাবীর পরে তুমি আরামে ঘুমাও, তবে সকাল পর্যমত্ম নয়; ভোর রাতে উঠে তোমাকে সাহারী খেতে হবে এরপর আবার ফজরের নামায পড়তে হবে।
এভাবে রোযা মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে এবং মানুষের জীবনকে উন্নত ও কল্যাণকর করতে সাহায্য করে।
১. নাফ্সে আম্মারাহ : এটি সর্বদা মানুষকে মন্দ কাজের দিকে প্রেরণা দেয়। সূরা ইউসুফের ৫৩ নং আয়াতে এর উলেস্নখ আছে ।
২. নাফ্সে লাওয়ামাহ : এ নাফসের অধিকারী মানুষ খারাপ কাজ করে ফেলে; কিন্তু পরে যখন তার বিবেক সজাগ হয় তখন সে নিজেকে তিরস্কার করে। সূরা কিয়ামার ২ নং আয়াতে এর উলেস্নখ আছে।
৩. নাফ্সে মুতমাইন্নাহ : প্রশামত্ম আত্মা, নাফসের উপর চেষ্টা সাধনা করতে করতে যখন এমন সত্মরে পেঁŠছে যায় যে, তার মধ্যে মন্দ কাজের কোন স্পৃহা থাকে না, গোনাহের কাজে ভয় পায় আর ভাল কাজে খুশী হয় তখন তাকে নাফসে মুতমাইন্নাহ বলা হয়। এ আত্মাকে বলা হবে-
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ - ارْجِعِيْ إِلٰى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً - فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ - وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ
‘‘হে প্রশামত্ম আত্মা! তুমি সমত্মুষ্ট এবং সমেত্মাষভাজন হয়ে তোমার প্রভুর দিকে চল। অতঃপর আমার (নেক) বান্দাদের অমত্মর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে।’’ (সূরা ফাজর : ২৭-৩০)
মানুষের নাফস বা আত্মাকে পর্যায়ক্রমে উন্নত করতে হলে এর উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন করতে হয় এবং একে আলস্নাহর বিধান অনুযায়ী চালাতে হয়। এটাই হচ্ছে সংযম বা আত্মাকে সংযত করা।
মানুষের মন হল রাজা আর অঙ্গ-প্রতঙ্গ হল প্রজা, মন যা পরিকল্পনা করে শরীরের অঙ্গগুলো তা বাসত্মবায়ন করে। এই মনকে ভাল ও কল্যাণকর পরিকল্পনায় নিয়োজিত না করে যে একে লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেয়, তার অবস্থা হয়ে যায় ঐ অশ্বারোহীর মত যে তার অশ্বকে কাবু করতে পারে না, অশ্ব যেদিকে যেতে চায় তাকে নিয়ে সেদিকে চলে যায়।
এ পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাসে যারা স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছেন তারা তাদের আভ্যমত্মরীণ শক্তিকে নিজেদের অধীন ও অনুগত করে নিয়েছিলেন। তারা কোন দিনই নাফসের লোভ-লালসা এবং আবেগের গোলাম হননি। তাদের ইচ্ছা-বাসনা ছিল মযবুত, সংকল্প ছিল অটল।
মানুষের প্রকৃতিতে পরস্পর বিরোধী দু’টি ভাব সমানভাবে রেখে দেয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে পশুত্ব, আর অপরটি হচ্ছে মনুষ্যত্ব। যারা পশুত্ব তথা নাফসের দাবী-দাওয়াকে নিয়ন্ত্রণে রেখে আত্মার উন্নতি সাধন করতে পারেন তারাই সফলতা অর্জন করতে পারেন।
ইসলাম নাফ্সের দাবীগুলোকে গলাটিপে হত্যা করার নির্দেশ দেয়নি। অথচ একদল লোক মানবদেহ হতে পশুত্বের উপাদানগুলোর বিলুপ্তি ঘটানোর কাজে লিপ্ত। তারা খাওয়া-দাওয়া, নিদ্রা ও যৌন চাহিদা- মানবপ্রকৃতির এ দাবীগুলোকে একেবারে শেষ করতে চান। তারা সাধু, সন্ন্যাসী, সেন্ট ও দরবেশরূপে পৃথিবীবাসীর নিকট পরিচিত।
আরেক দল পশুত্বকে জীবনের চরম সার্থকতা হিসেবে ধরে নিয়েছেন। আহার, নিদ্রা, যৌনসংযোগ ও আরাম-আয়েশ এগুলোকেই তারা জীবনের মূল লক্ষ্যে পরিণত করেছেন। কিন্তু আসল সত্য এ দুয়ের মাঝখানে রয়েছে। আর তা হল- মনের চাহিদাগুলোকে সমূলে ধ্বংস করা যাবে না, আবার মন যা চায় তাই করা যাবে না; বরং মনের চাহিদাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের শিখানো পন্থায় পূরণ করতে হবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা।
মানুষের প্রকৃতিতে যৌন চাহিদা রয়েছে। এটাকে মূলোৎপাটন করে খাসি হয়ে যেতে ইসলাম বলেনি। আবার লাগামহীনভাবে যে যার সাথে ইচ্ছা মিলিত হবে এটাকেও সমর্থন করেনি। ইসলাম কিছু বিধিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে মাত্র। ছেলে বা মেয়ে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে তখন একে অপরকে পছন্দ করে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এ চাহিদা মিটাবে। এতে একদিকে যেমন মনের চাহিদা মিটবে অন্যদিকে পরিবারের ভিত্তি স্থাপিত হবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্থায়ী বন্ধনের ফলে ভালবাসা গাঢ় হবে। সমত্মান প্রজনেমর ধারা অব্যাহত থাকবে। মাতৃত্ব, পিতৃত্ব ও বংশের মর্যাদা রক্ষা হবে। এ বিধানকে উপেক্ষা করে যারা যিনা-ব্যভিচারকে লাইসেন্স দিয়ে অবাধে হালাল করে দিয়েছে তাদের চারিত্রিক, পারিবারিক ও সামাজিক পরিস্থিতির কী যে অবনতি ঘটেছে তা ব্যাখ্যা দিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন বসত্মুবাদী দেশগুলোর দিকে নজর দিলেই সেই দৃশ্য ফুটে উঠবে।
মানুষের প্রকৃতিতে পেটের ক্ষুধা রয়েছে, সময় হলে বাঁচার জন্য খেতেই হয়। এছাড়াও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা রয়েছে যা পূরণ করতে হলে টাকা-পয়সার দরকার হয়। তাই উপার্জন করতে হবে। এখন ইসলাম উপার্জনের সকল পথ বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতে বলেনি; বরং আরো উৎসাহ দিয়েছে। উপার্জনকারীকে আলস্নাহর বন্ধু বলা হয়েছে। ইসলাম উপার্জনের কিছু অবৈধ পন্থাকে নিষিদ্ধ করেছে মাত্র। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি এগুলো যদি হালাল হয়ে যায় তাহলে তো কারও জান-মালের কোন নিরাপত্তাই থাকবে না। সুদ, ঘুষ, ওজনে কম দেয়া, ব্যবসায় প্রতারণা, চাঁদাবাজী, দুর্নীতি, হাইজ্যাক ইত্যাদির কারণে সমাজে আজ কত অশামিত্মকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তা সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। মানুষ নাফস বা কুপ্রবৃত্তির অনুসারী হওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে।
রোযা মানুষের মনের চাহিদাগুলো মেটানোর ক্ষেত্রে খুবই সুন্দরভাবে আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ দেয়। রোযা মানুষকে সম্বোধন করে বলে যে, দেখো! তুমি রোযা থাকার কারণে সারাটি দিন তোমার জন্য খাওয়া-দাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রোযা থাকার কারণে হালাল খাবার পর্যমত্ম তোমার উপর হারাম হয়ে গেছে, তাহলে তুমি হারাম পন্থায় কামাই করার চিমত্মা কীভাবে করতে পার? রোযা থাকার কারণে দিনের বেলায় তোমার স্ত্রীর সাথেও যৌনমিলন হারাম হয়ে গেছে, তাহলে তুমি যিনা করার চিমত্মা কীভাবে করতে পার?
রোযা আরো বলে যে, ফজরের আযানের সাথে সাথেই তোমাকে খানা-পিনা বন্ধ করে দিতে হবে, আবার সূর্য ডুবার সাথে সাথে খাবার খেতেই হবে, এখন খাওয়ার মধ্যেই কল্যাণ।
রোযা আরো বলে যে, ইফতারের পরেই তুমি আরামে ঘুমাতে পারবে না; তারাবীর নামায পড়তে হবে, তবে সারা রাত নয়; মাত্র দেড়-দু’ঘন্টা। তারাবীর পরে তুমি আরামে ঘুমাও, তবে সকাল পর্যমত্ম নয়; ভোর রাতে উঠে তোমাকে সাহারী খেতে হবে এরপর আবার ফজরের নামায পড়তে হবে।
এভাবে রোযা মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে এবং মানুষের জীবনকে উন্নত ও কল্যাণকর করতে সাহায্য করে।
রমাযান যেমন কোরআন নাযিলের মাস তেমনি জিহাদ ও বিজয়ের মাস। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের বিধান প্রতিষ্ঠা করার জন্য এমাসেই গুরম্নত্বপূর্ণ জিহাদগুলো সংঘঠিত হয়েছে।
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নামের সময়েই রমাযান মাসে দু’টি যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি বদরের যুদ্ধ এবং দ্বিতীয়টি মক্কা বিজয়। বদরের যুদ্ধ হয় দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ই রমাযান। বদরের যুদ্ধের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন-
لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
‘‘সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বাতিলের উৎখাত করাই এ যুদ্ধের লক্ষ্য, যদিও অপরাধীরা এটা পছন্দ করে না।’’ (সূরা আনফাল- ৮)
নবীর হাতে মক্কা বিজয় হয় অষ্টম হিজরীর ২০শে রমাযান।
দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রাঃ) এর আমলে ১৫ হিজরীর ১৩ই রমাযান আমর বিন আস (রাঃ) জেরম্নজালেম জয় করেন।
মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান বায়তুল মুকাদ্দাস এই রমাযান মাসেই জয় হয়।
পারস্য সম্রাটের প্রধান সেনাপতি রম্নসত্মম মুসলিম বাহিনীর কাছে পরাজিত ও নিহত হন ১৫ হিজরীর রমাযান মাসে এবং এতে মুসলমানদের বিজয় হয়।
তারেক বিন যিয়াদ স্পেন জয় করেন ৯২ হিজরীর রমাযান মাসে।
মুহাম্মাদ বিন কাসিমের হাতে অত্যাচারী সিন্ধু রাজা দাহির পরাজিত হয় ৯২ হিজরীর রমাযান মাসে। এই বিজয়ের ফলে ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের সূচনা হয়।
মুসলিম সেনাপতি যিয়াদ বিন আগলাবরের হাতে ইতালীর সিসিলি দ্বীপ জয় হয় ২১২ হিজরীর রমাযান মাসে।
এমাদুদ্দিন জংগীর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী উত্তর সিরিয়ার হালব শহর জয় করেন এবং খৃস্টান ক্রুসেডারদের পরাজিত করেন ৫৩২ হিজরীর রমাযান মাসে। তিনি সুয়েজ খাল অতিক্রম করে ইসরাইলী বাহিনীর উপর আক্রমণ করেন।
রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নামের সময়েই রমাযান মাসে দু’টি যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি বদরের যুদ্ধ এবং দ্বিতীয়টি মক্কা বিজয়। বদরের যুদ্ধ হয় দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ই রমাযান। বদরের যুদ্ধের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলস্নাহ তা‘আলা বলেছেন-
لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
‘‘সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বাতিলের উৎখাত করাই এ যুদ্ধের লক্ষ্য, যদিও অপরাধীরা এটা পছন্দ করে না।’’ (সূরা আনফাল- ৮)
নবীর হাতে মক্কা বিজয় হয় অষ্টম হিজরীর ২০শে রমাযান।
দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রাঃ) এর আমলে ১৫ হিজরীর ১৩ই রমাযান আমর বিন আস (রাঃ) জেরম্নজালেম জয় করেন।
মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান বায়তুল মুকাদ্দাস এই রমাযান মাসেই জয় হয়।
পারস্য সম্রাটের প্রধান সেনাপতি রম্নসত্মম মুসলিম বাহিনীর কাছে পরাজিত ও নিহত হন ১৫ হিজরীর রমাযান মাসে এবং এতে মুসলমানদের বিজয় হয়।
তারেক বিন যিয়াদ স্পেন জয় করেন ৯২ হিজরীর রমাযান মাসে।
মুহাম্মাদ বিন কাসিমের হাতে অত্যাচারী সিন্ধু রাজা দাহির পরাজিত হয় ৯২ হিজরীর রমাযান মাসে। এই বিজয়ের ফলে ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের সূচনা হয়।
মুসলিম সেনাপতি যিয়াদ বিন আগলাবরের হাতে ইতালীর সিসিলি দ্বীপ জয় হয় ২১২ হিজরীর রমাযান মাসে।
এমাদুদ্দিন জংগীর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী উত্তর সিরিয়ার হালব শহর জয় করেন এবং খৃস্টান ক্রুসেডারদের পরাজিত করেন ৫৩২ হিজরীর রমাযান মাসে। তিনি সুয়েজ খাল অতিক্রম করে ইসরাইলী বাহিনীর উপর আক্রমণ করেন।
এ পর্যমত্ম রোযার বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেক আলোচনা হল, এবার বইয়ের নামের সাথে সঙ্গতি রেখে এ প্রবন্ধটি লিখছি। এবারের বিষয়বসত্মু খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। রোযা আমরা অনেকেই রাখি; কিন্তু আমরা সবাই কি রোযার যাবতীয় নিয়ম রক্ষা করে চলি? রোযার উদ্দেশ্য কি আমাদের মাঝে প্রতিফলিত হয়? আমাদের রোযা কতটুকু আলস্নাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করছে? এ বিষয়গুলো নিয়েও কিছুটা চিমত্মা-ভাবনা করা দরকার। নতুবা সারাদিন শুধু উপবাস থেকে তেমন কোন ফলাফল আসবে না। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন-
كَمْ مِّنْ صَائِمٍ لَيْسَ لَه مِنْ صِيَامِه إِلَّا الظَّمَأُ وَكَمْ مِّنْ قَائِمٍ لَيْسَ لَه مِنْ قِيَامِه إِلَّا السَّهَرُ
এমন অনেক রোযাদার আছে কেবল ক্ষুধা আর পিপাসা ছাড়া তাদের ভাগ্যে আর কিছু জোটে না। আবার রাত্রিতে ইবাদাতকারী অনেক রয়েছে, রাত্রি জাগরণের কষ্ট ছাড়া তারা আর কিছুই লাভ করতে পারে না। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৮৩; সুনানে দারেমী, হা/২৭২০)
এ হাদীস থেকে এটা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, শুধু উপবাস থাকলেই রোযার পরিপূর্ণ হক আদায় হয়ে যায় না; বরং রোযাকে ফলপ্রসূ ও সার্থক করতে হলে রোযাকে ত্রম্নটিযুক্ত করে এমনসব কার্যাবলী থেকে দূরে থাকতে হবে। অনুরূপভাবে আলস্নাহর সমত্মুষ্টির উদ্দেশ্যে নামাযের নিয়ম-কানুন রক্ষা করে নামায পড়তে হবে। এটা না করে অন্য কোন উদ্দেশ্যে নামায পড়লে বা রাতে নফল পড়ার কারণে ফজরের জামা‘আত ছেড়ে দিলে এই নামায তেমন ফলপ্রসূ হবে না। আবার পরিবারের হক আদায় না করে শুধু রাত্রি জাগরণ করাও ঠিক নয়।
রোযার একটি সুদূরপ্রসারী ফলাফল হচ্ছে রোযা মানুষের জন্য ঢালের কাজ দেয়। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন : اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ ‘‘ রোযা হচ্ছে ঢাল।’’ যুদ্ধের সময় বা যে কোন ক্ষেত্রে ঢাল শত্রম্নর আক্রমণকে প্রতিহত করে। অনুরূপভাবে রোযা মানুষকে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে, পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে ঢালের কাজ দেয়। বান্দা নিজেকে রক্ষা করতে পারে। তাই রোযাদারকে রোযা নামক ঢালটিকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য এ কথাটির পরেই নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম উম্মতকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন-
وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّه أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَه فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ
‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রোযা থাকবে তখন সে যেন অশস্নীল কাজ ও ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয় তবে সে যেন পরিষ্কার বলে দেয় যে, আমি রোযাদার মানুষ।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৬২)
রোযাদার তো আগে বেড়ে কোন খারাপ কাজ করবেই না; তবুও কেউ যদি তাকে গালি দিয়ে বসে অথবা তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় তবে সে এসবের জবাব না দিয়ে সাফ বলে দেবে যে, ভাই! তোমার গালির জবাব দেয়ার ক্ষমতা আমার থাকলেও আমি তা করব না। আমি রোযা রেখেছি, আমার রোযা এসব পছন্দ করে না, তাই তোমার মুকাবেলা করা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়। সুতরাং রোযাদারকে কেউ গালি দিলে তার বিনিময়ে গালিদাতাকে আমি রোযা রেখেছি বলা সুন্নাত। এই জবাবে রয়েছে দু’টি উপকার; একটিতে রয়েছে নিজের জন্য সতর্কতা এবং অপরটিতে রয়েছে তার বিরোধীপক্ষের জন্য সতর্কতা।
সুতরাং আমরা যখন না খেয়ে রোযা রাখব, তখন আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন : মুখ, চোখ, কান, হাত, পা ও অমত্মর এগুলোকেও রোযা রাখাতে হবে। অর্থাৎ এগুলো আলস্নাহর নাফরমানী ও গোনাহের কাজে ব্যবহার না করে তাঁর আনুগত্য ও সমত্মুষ্টি অর্জনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই আমাদের রোযা ফলপ্রসূ হবে।
كَمْ مِّنْ صَائِمٍ لَيْسَ لَه مِنْ صِيَامِه إِلَّا الظَّمَأُ وَكَمْ مِّنْ قَائِمٍ لَيْسَ لَه مِنْ قِيَامِه إِلَّا السَّهَرُ
এমন অনেক রোযাদার আছে কেবল ক্ষুধা আর পিপাসা ছাড়া তাদের ভাগ্যে আর কিছু জোটে না। আবার রাত্রিতে ইবাদাতকারী অনেক রয়েছে, রাত্রি জাগরণের কষ্ট ছাড়া তারা আর কিছুই লাভ করতে পারে না। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৮৩; সুনানে দারেমী, হা/২৭২০)
এ হাদীস থেকে এটা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, শুধু উপবাস থাকলেই রোযার পরিপূর্ণ হক আদায় হয়ে যায় না; বরং রোযাকে ফলপ্রসূ ও সার্থক করতে হলে রোযাকে ত্রম্নটিযুক্ত করে এমনসব কার্যাবলী থেকে দূরে থাকতে হবে। অনুরূপভাবে আলস্নাহর সমত্মুষ্টির উদ্দেশ্যে নামাযের নিয়ম-কানুন রক্ষা করে নামায পড়তে হবে। এটা না করে অন্য কোন উদ্দেশ্যে নামায পড়লে বা রাতে নফল পড়ার কারণে ফজরের জামা‘আত ছেড়ে দিলে এই নামায তেমন ফলপ্রসূ হবে না। আবার পরিবারের হক আদায় না করে শুধু রাত্রি জাগরণ করাও ঠিক নয়।
রোযার একটি সুদূরপ্রসারী ফলাফল হচ্ছে রোযা মানুষের জন্য ঢালের কাজ দেয়। নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন : اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ ‘‘ রোযা হচ্ছে ঢাল।’’ যুদ্ধের সময় বা যে কোন ক্ষেত্রে ঢাল শত্রম্নর আক্রমণকে প্রতিহত করে। অনুরূপভাবে রোযা মানুষকে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে, পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে ঢালের কাজ দেয়। বান্দা নিজেকে রক্ষা করতে পারে। তাই রোযাদারকে রোযা নামক ঢালটিকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য এ কথাটির পরেই নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম উম্মতকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন-
وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّه أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَه فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ
‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রোযা থাকবে তখন সে যেন অশস্নীল কাজ ও ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয় তবে সে যেন পরিষ্কার বলে দেয় যে, আমি রোযাদার মানুষ।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৬২)
রোযাদার তো আগে বেড়ে কোন খারাপ কাজ করবেই না; তবুও কেউ যদি তাকে গালি দিয়ে বসে অথবা তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় তবে সে এসবের জবাব না দিয়ে সাফ বলে দেবে যে, ভাই! তোমার গালির জবাব দেয়ার ক্ষমতা আমার থাকলেও আমি তা করব না। আমি রোযা রেখেছি, আমার রোযা এসব পছন্দ করে না, তাই তোমার মুকাবেলা করা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়। সুতরাং রোযাদারকে কেউ গালি দিলে তার বিনিময়ে গালিদাতাকে আমি রোযা রেখেছি বলা সুন্নাত। এই জবাবে রয়েছে দু’টি উপকার; একটিতে রয়েছে নিজের জন্য সতর্কতা এবং অপরটিতে রয়েছে তার বিরোধীপক্ষের জন্য সতর্কতা।
সুতরাং আমরা যখন না খেয়ে রোযা রাখব, তখন আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন : মুখ, চোখ, কান, হাত, পা ও অমত্মর এগুলোকেও রোযা রাখাতে হবে। অর্থাৎ এগুলো আলস্নাহর নাফরমানী ও গোনাহের কাজে ব্যবহার না করে তাঁর আনুগত্য ও সমত্মুষ্টি অর্জনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই আমাদের রোযা ফলপ্রসূ হবে।
মু’মিনের যবানও রোযা রাখবে। অর্থাৎ প্রত্যেক নোংরা কথা, পরচর্চা বা গীবত, চুগলখোরী, গান-বাজনা, অশস্নীল ও মিথ্যা কথা থেকে সে বিরত থাকবে।
যবানকে হেফাযত করার গুরম্নত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে মহানবী বলেন :
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
‘‘যে আলস্নাহ এবং পরকালকে বিশ্বাস করে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা নিরবতা পালন করে।’’ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৬০; সহীহ বুখারী, হা/৬১৩৬)
مَنْ يَّضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ
‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার যবান ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করার জামীন হবে, আমি (মুহাম্মাদ) তার জন্য জান্নাতের জামীন হব।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৪৭৪; বায়হাকী, হা/১৬৪৪৮)
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّوْرِ وَالْعَمَلَ بِه فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ فِيْ أَنْ يَّدَعَ طَعَامَه وَشَرَابَه
‘‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ ছাড়তে পারল না তার শুধু খানা-পিনা পরিত্যাগ করাতে আলস্নাহর কোন প্রয়োজন নেই।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৬০৫৭; আবু দাউদ, হা/২৩৬৪)
এ হাদীসে খুব কঠিন ভাষায় একথাই বুঝানো হয়েছে যে, রোযাদার ব্যক্তি কখনো মিথ্যা বলতে পারে না। সে একদিকে রোযা রাখবে অপরদিকে মিথ্যা কথা ও অশস্নীল কার্যকলাপ করবে এটা তারপক্ষে শোভা পায় না বরং তার আলস্নাহকে ভয় করা উচিত এবং এসব পাপকাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এতদূর পর্যমত্ম বলেছেন যে, ‘‘রোযা রেখে কারো গীবত করলে সেই রোযার কাযা করতে হবে।’’
(মিশকাত- ১৯১৭ নং হাদীসের ব্যাখ্যা- নূর মুহাম্মাদ আজমী)
যবানকে হেফাযত করার গুরম্নত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে মহানবী বলেন :
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
‘‘যে আলস্নাহ এবং পরকালকে বিশ্বাস করে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা নিরবতা পালন করে।’’ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৬০; সহীহ বুখারী, হা/৬১৩৬)
مَنْ يَّضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ
‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার যবান ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করার জামীন হবে, আমি (মুহাম্মাদ) তার জন্য জান্নাতের জামীন হব।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৪৭৪; বায়হাকী, হা/১৬৪৪৮)
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّوْرِ وَالْعَمَلَ بِه فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ فِيْ أَنْ يَّدَعَ طَعَامَه وَشَرَابَه
‘‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ ছাড়তে পারল না তার শুধু খানা-পিনা পরিত্যাগ করাতে আলস্নাহর কোন প্রয়োজন নেই।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৬০৫৭; আবু দাউদ, হা/২৩৬৪)
এ হাদীসে খুব কঠিন ভাষায় একথাই বুঝানো হয়েছে যে, রোযাদার ব্যক্তি কখনো মিথ্যা বলতে পারে না। সে একদিকে রোযা রাখবে অপরদিকে মিথ্যা কথা ও অশস্নীল কার্যকলাপ করবে এটা তারপক্ষে শোভা পায় না বরং তার আলস্নাহকে ভয় করা উচিত এবং এসব পাপকাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এতদূর পর্যমত্ম বলেছেন যে, ‘‘রোযা রেখে কারো গীবত করলে সেই রোযার কাযা করতে হবে।’’
(মিশকাত- ১৯১৭ নং হাদীসের ব্যাখ্যা- নূর মুহাম্মাদ আজমী)
মু’মিনের কানও রোযা রাখে। কান রোযা রাখে নোংরা ও অশস্নীল কথা শোনা থেকে, অবৈধ প্রেম ও ব্যভিচারের দিকে আহবানকারী গান-বাজনা শোনা থেকে। রোযা রাখে আলস্নাহর হারামকৃত যেসব কথা তাঁকে ক্রোধান্বিত ও অসমত্মুষ্ট করে সেসব কথা শোনা থেকে। মু’মিনের কান রোযা রাখে শয়তানের সুর শোনা থেকে, কারণ আলস্নাহ বান্দার কান সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। মহান আলস্নাহ বলেন-
إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا
কর্ণ, চক্ষু ও অমত্মর এদের প্রত্যেকটির বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا
কর্ণ, চক্ষু ও অমত্মর এদের প্রত্যেকটির বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
মু’মিনের চোখও রোযা রাখে আলস্নাহর হারামকৃত জিনিস দেখা হতে বিরত থাকার মাধ্যমে। হারাম কিছু চোখে পড়লে সে তার চক্ষুকে অবনত করে নেয়, অশস্নীল কিছু দেখা হতে দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখে। যেমন : নোংরা ফিল্ম, শস্নীলতাহীন টিভি সিরিজ এবং পরনারী ইত্যাদি দেখা হতে বিরত থাকে। মহান আলস্নাহ মু’মিন পুরম্নষদেরকে সম্বোধন করে বলেন-
قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذٰلِكَ أَزْكٰى لَهُمْ
মু’মিন পুরম্নষদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী করে এবং নিজ নিজ যৌনাঙ্গের হেফাযত করে; এটিই তাদের জন্য উত্তম। (সূরা নূর- ৩০)
মু’মিন নারীদেরকেও সম্বোধন করে আলস্নাহ বলেন-
وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ
আর মু’মিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী করে এবং নিজ নিজ যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। (সূরা নূর- ৩১)
قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذٰلِكَ أَزْكٰى لَهُمْ
মু’মিন পুরম্নষদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী করে এবং নিজ নিজ যৌনাঙ্গের হেফাযত করে; এটিই তাদের জন্য উত্তম। (সূরা নূর- ৩০)
মু’মিন নারীদেরকেও সম্বোধন করে আলস্নাহ বলেন-
وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ
আর মু’মিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী করে এবং নিজ নিজ যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। (সূরা নূর- ৩১)
মু’মিনের হাত রোযা রাখে হারাম কিছু ধরা ও স্পর্শ করা থেকে। সুতরাং যে মহিলাকে স্পর্শ করা তার জন্য হালাল নয় তাকে যেন স্পর্শ না করে। তার হাত যেন রোযা রাখে মানুষের উপর অত্যাচার করা থেকে, কাউকে অন্যায়ভাবে মারা থেকে। সুদ, ঘুষ, চুরি, ও অন্যান্য হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন করা থেকেও মু’মিনের হাত রোযা রাখে।
মু’মিনের পাও রোযা রাখে। আর তার রোযা হল- যেপথে গমন করলে আলস্নাহ অসমত্মুষ্ট হন সেপথে যাবে না। সকল প্রকার পাপাচারের পথে চলা হতে সে বিরত থাকবে। কারণ হাত-পা দিয়ে পাপ করলে কিয়ামতের ময়দানে এগুলো বান্দার বিরম্নদ্ধে স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। আলস্নাহ বলেন-
اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
‘‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব, তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের পা সাক্ষ্য দেবে।’’
(সূরা ইয়াসীন- ৬৫)
মু’মিনের পাও রোযা রাখে। আর তার রোযা হল- যেপথে গমন করলে আলস্নাহ অসমত্মুষ্ট হন সেপথে যাবে না। সকল প্রকার পাপাচারের পথে চলা হতে সে বিরত থাকবে। কারণ হাত-পা দিয়ে পাপ করলে কিয়ামতের ময়দানে এগুলো বান্দার বিরম্নদ্ধে স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। আলস্নাহ বলেন-
اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
‘‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব, তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের পা সাক্ষ্য দেবে।’’
(সূরা ইয়াসীন- ৬৫)
মু’মিনের পেটও রোযা রাখে। রোযা রাখে হারাম খাদ্য খাওয়া থেকে। সুতরাং সে হারাম খাবার সাহারীতে খায় না এবং ইফতারীতেও খায় না। সুদ, ঘুষ এবং অন্যান্য হারাম উপায়ে উপার্জিত সম্পদ কখনো সে তার পেটে প্রবেশ করায় না। কেননা যে ব্যক্তি নিজ উদরে হারাম মাল প্রবেশ করায়; অর্থাৎ যার খাদ্য ও পানীয় হারাম হয় তার দু‘আ কবুল হয় না।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَّإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ . يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا إِنِّىْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ . وَقَالَ يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُه ̒ حَرَامٌ وَمَشْرَبُه ̒ حَرَامٌ وَمَلْبَسُه ̒ حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আলস্নাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না। আর আলস্নাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন মু’মিনদেরকেও সেই নির্দেশ দিয়েছেন। আলস্নাহ বলেছেন, ‘‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি।’’ (সূরা মু’মিন- ৫১)
আলস্নাহ আরো বলেছেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে পবিত্র জিনিস খাও।’’ অতঃপর নবী এমন এক ব্যক্তির কথা উলেস্নখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধূলোয় মলিন শরীর, সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হয়েছে, সুতরাং কীভাবে তার দু‘আ কবুল হবে? (মুসলিম)
উপরের হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, ইবাদাত কবুল হওয়ার জন্য হালাল রিযিক খাওয়া পূর্বশর্ত।
রাসূল সালস্নালস্নাহু ‘আলাইহি ওয়া সালস্নাম আরো বলেছেন, যে শরীর হারাম দ্বারা প্রতিপালিত তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উপযুক্ত। (মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭১৬৪; জামেউস সগীর, হা/৮৬৪৮)
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَّإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ . يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا إِنِّىْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ . وَقَالَ يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُه ̒ حَرَامٌ وَمَشْرَبُه ̒ حَرَامٌ وَمَلْبَسُه ̒ حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আলস্নাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না। আর আলস্নাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন মু’মিনদেরকেও সেই নির্দেশ দিয়েছেন। আলস্নাহ বলেছেন, ‘‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি।’’ (সূরা মু’মিন- ৫১)
আলস্নাহ আরো বলেছেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে পবিত্র জিনিস খাও।’’ অতঃপর নবী এমন এক ব্যক্তির কথা উলেস্নখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধূলোয় মলিন শরীর, সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হয়েছে, সুতরাং কীভাবে তার দু‘আ কবুল হবে? (মুসলিম)
উপরের হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, ইবাদাত কবুল হওয়ার জন্য হালাল রিযিক খাওয়া পূর্বশর্ত।
রাসূল সালস্নালস্নাহু ‘আলাইহি ওয়া সালস্নাম আরো বলেছেন, যে শরীর হারাম দ্বারা প্রতিপালিত তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উপযুক্ত। (মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭১৬৪; জামেউস সগীর, হা/৮৬৪৮)
নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, ‘‘জেনে রাখ! দেহের মধ্যে এমন এক মাংসপি- আছে যা ভাল হলে সারা দেহ ভাল হবে এবং খারাপ হলে সারা দেহ খারাপ হবে। শোন! তা হল অমত্মর।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৫২; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৮৪)
দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গের রাজা হল অমত্মর। এই অমত্মর যখনই রোযা রাখবে, তখনই সকল অঙ্গে তা কার্যকর হবে।
মু’মিনের অমত্মর রমাযান মাসে এবং অন্য মাসেও রোযা রাখে। আর তার রোযা হবে তাকে শিরক, বাতিল বিশ্বাস, নোংরা চিমত্মা-ভাবনা, হীন পরিকল্পনা এবং খারাপ কল্পনা এসব থেকে মুক্ত রাখা।
মুমিনের অমত্মর রোযা রাখে গর্ব করা থেকে। কারণ যে ব্যক্তি গর্ব করে এবং চাল-চলনে অহংকার প্রদর্শন করে, সে ব্যক্তি যখন আলস্নাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তিনি তার প্রতি ক্রোধান্বিত থাকবেন। মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৯৯৫
মু’মিনের অমত্মর রোযা রাখে অপরের প্রতি হিংসা করা থেকে। কারণ কোন বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও হিংসা একসঙ্গে থাকতে পারে না। (নাসাঈ, হা/৩১০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬০৬)
মু’মিনের অমত্মর রোযা রাখে কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে। কারণ বিদ্বেষ হল মু-নকারী, তা দ্বীন মু-ন (ধ্বংস) করে ফেলে। (তিরমিযী, হা/২৫১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৩০)
মু’মিনের অমত্মর রোযা রাখে কৃপণতা থেকে। কারণ কোন বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও কৃপণতা একত্রে জমা হতে পারে না। (নাসাঈ, হা/৩১১০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩২৫১)
মু’মিনের অমত্মর রোযা রাখে খারাপ চিমত্মা করা থেকে এবং ঈমানের প্রতিকূল পরিকল্পনা করা থেকে। (আহকামুস সাওম ১৯পৃঃ)
এভাবে যদি আমরা রোযা রাখি এবং রোযার দাবী ও শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে তা বাসত্মবে প্রয়োগ করি তাহলেই আমাদের রোযা সার্থক ও গ্রহণযোগ্য হবে। তা না হলে দীর্ঘ একটি মাস কষ্ট করে রোযা রেখে যদি এর কোন প্রভাব আমাদের উপর না পড়ে, একটুখানি তাকওয়া বা আলস্নাহর ভয় আমাদের মধ্যে যদি না জাগে তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক এবং পরিতাপের বিষয় আর কী হতে পারে?
দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গের রাজা হল অমত্মর। এই অমত্মর যখনই রোযা রাখবে, তখনই সকল অঙ্গে তা কার্যকর হবে।
মু’মিনের অমত্মর রমাযান মাসে এবং অন্য মাসেও রোযা রাখে। আর তার রোযা হবে তাকে শিরক, বাতিল বিশ্বাস, নোংরা চিমত্মা-ভাবনা, হীন পরিকল্পনা এবং খারাপ কল্পনা এসব থেকে মুক্ত রাখা।
মুমিনের অমত্মর রোযা রাখে গর্ব করা থেকে। কারণ যে ব্যক্তি গর্ব করে এবং চাল-চলনে অহংকার প্রদর্শন করে, সে ব্যক্তি যখন আলস্নাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তিনি তার প্রতি ক্রোধান্বিত থাকবেন। মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৯৯৫
মু’মিনের অমত্মর রোযা রাখে অপরের প্রতি হিংসা করা থেকে। কারণ কোন বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও হিংসা একসঙ্গে থাকতে পারে না। (নাসাঈ, হা/৩১০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬০৬)
মু’মিনের অমত্মর রোযা রাখে কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে। কারণ বিদ্বেষ হল মু-নকারী, তা দ্বীন মু-ন (ধ্বংস) করে ফেলে। (তিরমিযী, হা/২৫১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৩০)
মু’মিনের অমত্মর রোযা রাখে কৃপণতা থেকে। কারণ কোন বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও কৃপণতা একত্রে জমা হতে পারে না। (নাসাঈ, হা/৩১১০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩২৫১)
মু’মিনের অমত্মর রোযা রাখে খারাপ চিমত্মা করা থেকে এবং ঈমানের প্রতিকূল পরিকল্পনা করা থেকে। (আহকামুস সাওম ১৯পৃঃ)
এভাবে যদি আমরা রোযা রাখি এবং রোযার দাবী ও শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে তা বাসত্মবে প্রয়োগ করি তাহলেই আমাদের রোযা সার্থক ও গ্রহণযোগ্য হবে। তা না হলে দীর্ঘ একটি মাস কষ্ট করে রোযা রেখে যদি এর কোন প্রভাব আমাদের উপর না পড়ে, একটুখানি তাকওয়া বা আলস্নাহর ভয় আমাদের মধ্যে যদি না জাগে তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক এবং পরিতাপের বিষয় আর কী হতে পারে?
রমাযান কোরআন নাযিলের মাস; অথচ আমি এই কোরআনকে ভাল করে পড়লাম না, বুঝলাম না, আমলও করলাম না, তাহলে এই কোরআন কি আমার জন্য শাফায়াত করবে?
আমি রোযা রাখলাম; কিন্তু মিথ্যা বলতে ও পরের দোষচর্চা করতে আমার ভয় হল না, অশস্নীল গান-বাজনা শোনা থেকে, টেলিভিশনের কুদৃশ্য দেখা থেকে বিরত থাকলাম না, তাহলে এই রোযা কীভাবে আলস্নাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং আমার নাজাতের উসীলা হবে?
রোযার কারণে আমি দিনের বেলায় বিড়ি-সিগারেট থেকে দূরে থাকলাম; কিন্তু ইফতারের পরেই ধূমপান শুরম্ন করে দিলাম- যা শরীয়াতের দিক থেকে নিষিদ্ধ এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেও ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। তাহলে এই রোযার সার্থকতা কী থাকল? আমার নাফসকে তো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না।
রোযা রাখলাম ঠিকই; কিন্তু হারাম উপার্জন ছাড়লাম না, ব্যবসায় মিথ্যা ও ধোঁকাবাজি ত্যাগ করলাম না, অন্যায় থেকে বিরত হতে পারলাম না, জাহান্নামের আগুনকে একটু ভয় করলাম না, তাহলে রোযা রেখে আমি কতটুকু তাকওয়া অর্জন করতে পারলাম?
আলস্নাহ যিনা-ব্যভিচার হারাম করেছেন এবং যিনাকারী ছেলে-মেয়েকে একশত বেত্রাঘাত করতে বলেছেন; অথচ বর্তমানে অহরহ যিনা হচ্ছে। আলস্নাহ অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন এবং এজন্য ক্বিসাসের বিধান দিয়েছেন; অথচ পশু-পাখীর মত মানুষ মারা হচ্ছে। আলস্নাহ চোর নারী-পুরম্নষের হাত কেটে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন; অথচ বরাবর চুরি হচ্ছে কারো হাত কাটা হচ্ছে না। আমরা জানি যে, এ বিধানগুলো পালন করতে হলে সরকারী ক্ষমতার প্রয়োজন। কিন্তু আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে আলস্নাহর দ্বীন কায়েমের জন্য কোন চেষ্টা ফিকির করলাম না।
রোযা রেখে একটি ফরয পালন করলাম; কিন্তু এই মহান ফরযটি পালনের চিমত্মাও করলাম না। এখন আমরা আলস্নাহর কাছে গিয়ে কী জবাব দেব? অথচ এই দ্বীন কায়েমের জন্য নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম সাহাবীদের নিয়ে এই রোযার মাসেই শত্রম্নদের মুকাবেলা করার জন্য বদর প্রামত্মরে যুদ্ধ করেছেন এবং কয়েকজন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেছেন।
আমি একজন মহিলা, আলস্নাহ তা‘আলা আমার সতীত্বকে হেফাযত করতে বলেছেন; কিন্তু আমি পর্দা করলাম না, আমার শরীরের অঙ্গগুলো পরপুরম্নষের সামনে প্রকাশ করলাম অথবা রোযার মাসে পর্দা করলাম পরে আর করলাম না, আলস্নাহকে ভয় করলাম না তাহলে যে গুণটি অর্জনের জন্য একমাস রোযা রাখলাম তা তো অর্জিত হল না।
বৎসরে বার মাসের মধ্যে পূর্ণ একমাস আলস্নাহ আমাদেরকে রোযা রাখার হুকুম দিয়েছেন যেন এই একমাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়ার গুণ এতটুকু অর্জিত হয় যা পরবর্তী এগার মাসের জন্য যথেষ্ট হতে পারে; অথচ দেখা যায়, রোযার মাসটি শেষ হওয়ার পর শাওয়ালের প্রথম দিনেই ঈদকে কেন্দ্র করে শহরে-বন্দরে যেসব অশস্নীলতা, নগ্নতা, যুবক-যুবতীদের অবাধ আড্ডা শুরম্ন হয় তা দেখে মনে হয় যে, একমাসের তাকওয়া পরহেযগারীকে তারা রমাযান মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বমি করে ফেলে দিয়েছে।
আমাদের মধ্যে অনেক ভাই-বোন রয়েছেন যারা রোযার মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন, মোটামুটি আলস্নাহর হুকুম মেনে চলার চেষ্টা করেন; কিন্তু রোযার মাস শেষ হলে তারা আবার আগের মত হয়ে যান। এতে মনে হয় যে, একমাসের রোযা তাদের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এর উদাহরণ হচ্ছে এরূপ যেমন : কোন লোক ভাত খেয়ে বমি করে ফেলে দিল। এখন যে উদ্দেশ্যে সে খেয়েছিল তা আর অর্জিত হল না, যেহেতু হজম হওয়ার আগেই সে তা বের করে দিয়েছে। অনুরূপভাবে যারা রোযার মাসে নামায পড়েন, আলস্নাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করেন; কিন্তু রোযার পরে তা ছেড়ে দেন তারাও যেন একমাসে যেটুকু আলস্নাহর ভয় অর্জিত হয়েছিল রমাযান শেষ হওয়ার সাথে সাথে তা বমি করে বের করে দেন। এখন তারা রোযা রেখেছেন ঠিকই; কিন্তু রোযার উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি। যদি হত তাহলে তারা সারা বছর আলস্নাহর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করত।
আসল ব্যাপার হচ্ছে, নামায-রোযাকে আমরা ইবাদাতের অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছি। এর বাইরে এগুলোর কোন প্রভাব পড়ছে না। বিয়ে-শাদী, সমাজগঠন, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন-দেন ও রাষ্ট্র পরিচালনা এসব ক্ষেত্রে আমরা ইসলামের বিধান সঠিকভাবে পালন করি না। এটাই আমাদেরকে পিছিয়ে রেখেছে।
রমাযান বিদায় নিল, তাই বলে কি মু’মিনের আমল ভরা দিনগুলো শেষ হয়ে গেল? না, মু’মিনের আমল তো কোন দিন শেষ হওয়ার নয়। মু’মিনের কর্তব্য হল, নিয়মিত আমল করে যাওয়া। মহান আলস্নাহ বলেন-
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْنُ
মৃত্যু আসা পর্যমত্ম তোমার প্রতিপালকের ইবাদাত করতে থাক। (হিজর- ৯৯)
মহানবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, আলস্নাহর নিকট সেই আমল সবচেয়ে অধিক পছন্দনীয় যা নিয়মিত পালন করা হয়; যদিও তা পরিমাণে কম হয়। (সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৬)
রোযার মাস বিদায় নিয়েছে; কিন্তু রোযা বিদায় নেয়নি। যেহেতু রমাযানের রোযা ছাড়াও অন্যান্য সুন্নাত ও নফল রোযা রয়েছে।
তারাবীর নামাযের মাস চলে গেল; কিন্তু নফল নামায ও কিয়াম কেবল রোযার মাসেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং মু’মিনের প্রত্যেক রাতের একটি অংশ তাহাজ্জুদের জন্য খাস হওয়া উচিত।
কোনো নেক আমল আলস্নাহর দরবারে কবুল হওয়ার অন্যতম লক্ষণ এই যে, আমলকারী পুনরায় অন্যান্য সৎকর্ম করে থাকে। সুতরাং রমাযানের পর অন্যান্য নেক আমল করতে থাকলে রোযা ও তারাবীহ মহান আলস্নাহর দরবারে কবুল হয়েছে বলে বুঝা যাবে ।
তাই আসুন! আমরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বদা ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলি, সাহাবাদের ঈমানের মত আমাদের ঈমানকেও মযবুত করি- এটাই হোক রমাযান মাসে আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
অতএব হে মুসলিম ভাই-বোনেরা! আপনারা আরামের নিদ্রা থেকে জেগে উঠুন। সফরের জন্য কিছু পথের সম্বল সংগ্রহ করে নিন। আলস্নাহর দিকে ফিরে আসুন, হয়তবা তাঁর সাড়া পাবেন। তাঁর রহমত পেয়ে সৌভাগ্যবান হবেন। আলস্নাহর ভয়ে, জাহান্নামের ভয়ে চোখের পানি ফেলে রমাযান মাসকে বিদায় জানান। কারণ আমরা জানি না আগামী বছর আবার সেই প্রিয়তমের সাথে সাক্ষাত হবে কি না? আবার ফরয রোযা পালন করার ও তারাবীর নামায পড়ার সুযোগ হবে কি না?
وَصَلَّىْ اللهُ عَلَى النَّبِىِّ وَالْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সমাপ্ত
আমি রোযা রাখলাম; কিন্তু মিথ্যা বলতে ও পরের দোষচর্চা করতে আমার ভয় হল না, অশস্নীল গান-বাজনা শোনা থেকে, টেলিভিশনের কুদৃশ্য দেখা থেকে বিরত থাকলাম না, তাহলে এই রোযা কীভাবে আলস্নাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং আমার নাজাতের উসীলা হবে?
রোযার কারণে আমি দিনের বেলায় বিড়ি-সিগারেট থেকে দূরে থাকলাম; কিন্তু ইফতারের পরেই ধূমপান শুরম্ন করে দিলাম- যা শরীয়াতের দিক থেকে নিষিদ্ধ এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেও ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। তাহলে এই রোযার সার্থকতা কী থাকল? আমার নাফসকে তো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না।
রোযা রাখলাম ঠিকই; কিন্তু হারাম উপার্জন ছাড়লাম না, ব্যবসায় মিথ্যা ও ধোঁকাবাজি ত্যাগ করলাম না, অন্যায় থেকে বিরত হতে পারলাম না, জাহান্নামের আগুনকে একটু ভয় করলাম না, তাহলে রোযা রেখে আমি কতটুকু তাকওয়া অর্জন করতে পারলাম?
আলস্নাহ যিনা-ব্যভিচার হারাম করেছেন এবং যিনাকারী ছেলে-মেয়েকে একশত বেত্রাঘাত করতে বলেছেন; অথচ বর্তমানে অহরহ যিনা হচ্ছে। আলস্নাহ অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন এবং এজন্য ক্বিসাসের বিধান দিয়েছেন; অথচ পশু-পাখীর মত মানুষ মারা হচ্ছে। আলস্নাহ চোর নারী-পুরম্নষের হাত কেটে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন; অথচ বরাবর চুরি হচ্ছে কারো হাত কাটা হচ্ছে না। আমরা জানি যে, এ বিধানগুলো পালন করতে হলে সরকারী ক্ষমতার প্রয়োজন। কিন্তু আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে আলস্নাহর দ্বীন কায়েমের জন্য কোন চেষ্টা ফিকির করলাম না।
রোযা রেখে একটি ফরয পালন করলাম; কিন্তু এই মহান ফরযটি পালনের চিমত্মাও করলাম না। এখন আমরা আলস্নাহর কাছে গিয়ে কী জবাব দেব? অথচ এই দ্বীন কায়েমের জন্য নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম সাহাবীদের নিয়ে এই রোযার মাসেই শত্রম্নদের মুকাবেলা করার জন্য বদর প্রামত্মরে যুদ্ধ করেছেন এবং কয়েকজন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেছেন।
আমি একজন মহিলা, আলস্নাহ তা‘আলা আমার সতীত্বকে হেফাযত করতে বলেছেন; কিন্তু আমি পর্দা করলাম না, আমার শরীরের অঙ্গগুলো পরপুরম্নষের সামনে প্রকাশ করলাম অথবা রোযার মাসে পর্দা করলাম পরে আর করলাম না, আলস্নাহকে ভয় করলাম না তাহলে যে গুণটি অর্জনের জন্য একমাস রোযা রাখলাম তা তো অর্জিত হল না।
বৎসরে বার মাসের মধ্যে পূর্ণ একমাস আলস্নাহ আমাদেরকে রোযা রাখার হুকুম দিয়েছেন যেন এই একমাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়ার গুণ এতটুকু অর্জিত হয় যা পরবর্তী এগার মাসের জন্য যথেষ্ট হতে পারে; অথচ দেখা যায়, রোযার মাসটি শেষ হওয়ার পর শাওয়ালের প্রথম দিনেই ঈদকে কেন্দ্র করে শহরে-বন্দরে যেসব অশস্নীলতা, নগ্নতা, যুবক-যুবতীদের অবাধ আড্ডা শুরম্ন হয় তা দেখে মনে হয় যে, একমাসের তাকওয়া পরহেযগারীকে তারা রমাযান মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বমি করে ফেলে দিয়েছে।
আমাদের মধ্যে অনেক ভাই-বোন রয়েছেন যারা রোযার মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন, মোটামুটি আলস্নাহর হুকুম মেনে চলার চেষ্টা করেন; কিন্তু রোযার মাস শেষ হলে তারা আবার আগের মত হয়ে যান। এতে মনে হয় যে, একমাসের রোযা তাদের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এর উদাহরণ হচ্ছে এরূপ যেমন : কোন লোক ভাত খেয়ে বমি করে ফেলে দিল। এখন যে উদ্দেশ্যে সে খেয়েছিল তা আর অর্জিত হল না, যেহেতু হজম হওয়ার আগেই সে তা বের করে দিয়েছে। অনুরূপভাবে যারা রোযার মাসে নামায পড়েন, আলস্নাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করেন; কিন্তু রোযার পরে তা ছেড়ে দেন তারাও যেন একমাসে যেটুকু আলস্নাহর ভয় অর্জিত হয়েছিল রমাযান শেষ হওয়ার সাথে সাথে তা বমি করে বের করে দেন। এখন তারা রোযা রেখেছেন ঠিকই; কিন্তু রোযার উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি। যদি হত তাহলে তারা সারা বছর আলস্নাহর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করত।
আসল ব্যাপার হচ্ছে, নামায-রোযাকে আমরা ইবাদাতের অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছি। এর বাইরে এগুলোর কোন প্রভাব পড়ছে না। বিয়ে-শাদী, সমাজগঠন, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন-দেন ও রাষ্ট্র পরিচালনা এসব ক্ষেত্রে আমরা ইসলামের বিধান সঠিকভাবে পালন করি না। এটাই আমাদেরকে পিছিয়ে রেখেছে।
রমাযান বিদায় নিল, তাই বলে কি মু’মিনের আমল ভরা দিনগুলো শেষ হয়ে গেল? না, মু’মিনের আমল তো কোন দিন শেষ হওয়ার নয়। মু’মিনের কর্তব্য হল, নিয়মিত আমল করে যাওয়া। মহান আলস্নাহ বলেন-
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْنُ
মৃত্যু আসা পর্যমত্ম তোমার প্রতিপালকের ইবাদাত করতে থাক। (হিজর- ৯৯)
মহানবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, আলস্নাহর নিকট সেই আমল সবচেয়ে অধিক পছন্দনীয় যা নিয়মিত পালন করা হয়; যদিও তা পরিমাণে কম হয়। (সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৬)
রোযার মাস বিদায় নিয়েছে; কিন্তু রোযা বিদায় নেয়নি। যেহেতু রমাযানের রোযা ছাড়াও অন্যান্য সুন্নাত ও নফল রোযা রয়েছে।
তারাবীর নামাযের মাস চলে গেল; কিন্তু নফল নামায ও কিয়াম কেবল রোযার মাসেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং মু’মিনের প্রত্যেক রাতের একটি অংশ তাহাজ্জুদের জন্য খাস হওয়া উচিত।
কোনো নেক আমল আলস্নাহর দরবারে কবুল হওয়ার অন্যতম লক্ষণ এই যে, আমলকারী পুনরায় অন্যান্য সৎকর্ম করে থাকে। সুতরাং রমাযানের পর অন্যান্য নেক আমল করতে থাকলে রোযা ও তারাবীহ মহান আলস্নাহর দরবারে কবুল হয়েছে বলে বুঝা যাবে ।
তাই আসুন! আমরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বদা ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলি, সাহাবাদের ঈমানের মত আমাদের ঈমানকেও মযবুত করি- এটাই হোক রমাযান মাসে আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
অতএব হে মুসলিম ভাই-বোনেরা! আপনারা আরামের নিদ্রা থেকে জেগে উঠুন। সফরের জন্য কিছু পথের সম্বল সংগ্রহ করে নিন। আলস্নাহর দিকে ফিরে আসুন, হয়তবা তাঁর সাড়া পাবেন। তাঁর রহমত পেয়ে সৌভাগ্যবান হবেন। আলস্নাহর ভয়ে, জাহান্নামের ভয়ে চোখের পানি ফেলে রমাযান মাসকে বিদায় জানান। কারণ আমরা জানি না আগামী বছর আবার সেই প্রিয়তমের সাথে সাক্ষাত হবে কি না? আবার ফরয রোযা পালন করার ও তারাবীর নামায পড়ার সুযোগ হবে কি না?
وَصَلَّىْ اللهُ عَلَى النَّبِىِّ وَالْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন