hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দল, সংগঠন, ইমারত ও বায়‘আত সম্পর্কে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের বক্তব্য

লেখকঃ আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার

(৩) জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী
প্রশ্ন: হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটির ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেনঃ ‘তাঁরা রাসূলকে কল্যাণ বিষয়ে প্রশ্ন করতেন, কিন্তু আমি কিসে অকল্যাণ আছে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম...’। উক্ত হাদীছ থেকে বর্তমানের ইসলামী জামা‘আতসমূহ সম্বন্ধে কি ইঙ্গিত পাওয়া যায়? বর্তমান সালাফী আন্দোলনের সংগঠন সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?

উত্তর: যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর রাসূলের প্রতি। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুরাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর হাদীছটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে। আর তা হচ্ছে, মুসলিমদের দলে দলে বিভক্ত হওয়া আদৌ বৈধ নয়; বরং তাদেরকে একটিমাত্র ইমারতের অধীনে এবং সেই ইমারতের খলীফার তত্ত্বাবধায়নে একক জামা‘আত হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু যদি কখনও এমন হয় যে, মুসলিমরা দলমত নির্বিশেষে একক খলীফার বায়‘আত করে একক জামা‘আত হয়ে থাকতে পারছে না, তাহলে সেক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর অনুসরণ প্রিয় কোনো মুসলিমের নির্দিষ্ট কোনো একটি দলে যোগদান করা বৈধ নয়। বিশেষ করে যখন প্রত্যেকটি দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত থাকবে আর দাবী করবে যে, তার একজন নির্দিষ্ট আমীর রয়েছে এবং ঐ আমীরের দলে দলভুক্ত সবাইকে তাঁর কাছে বায়‘আত করতে হবে। আর যখন এই বায়‘আতকে ‘বায়‘আতে কুবরা’ বা সর্ববৃহৎ বায়‘আত গণ্য করা হবে, তখন বিষয়টি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে। মনে রাখতে হবে, ‘বায়‘আতে কুবরা’ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা ছাড়া অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। বিষয়টি তখন আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে, যখন প্রত্যেকটি জামা‘আতের একজন করে বায়‘আত গ্রহণকারী আমীর থাকেন এবং তার অনুসারীরা উক্ত বায়‘আতের শর্তাবলী এমনভাবে মেনে চলে যে, তাদের কারো জন্য অন্য কারো মতামত গ্রহণের বৈধতা থাকে না। আমি অন্য কোনো আমীরের কথা বললাম না, কারণ আমীর কথাটি বললে অন্তত: নামের ক্ষেত্রে হলেও আমরা যেন তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করলাম। সেজন্য আমি আমীর না বলে অন্য কোনো ব্যক্তি বা আলেমের কথা বললাম। অর্থাৎ তাদের দলভুক্ত নয় এমন কোনো ব্যক্তি বা আলেমের সাথে দলীল-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাদের জন্য তাঁর মতামত গ্রহণের সুযোগ থাকে না। অতএব, দলগুলির অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে সেগুলোতে যোগদান করা কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়; বরং তাকে একাকী থাকতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে, তার যেসব ভাই পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্‌র অনুসরণে আগ্রহী, সে তাদের থেকে দূরে থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١١٩ ﴾ [ التوبة : ١١٩ ]

‘আর তোমরা সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তাওবাহ ১১৯)। অর্থাৎ সত্যবাদী যেই হোক না কেন এবং যেখানেই হোক না কেন তাদের সাথে থাক। সেকারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর হাদীছে দলাদলির প্রত্যেকটি দলকে পরিত্যাগের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও উম্মতে মুহাম্মাদীকে নিম্নোক্ত হাদীছে সুসংবাদ প্রদান করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি জনগোষ্ঠী হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে; তাদের বিরোধীরা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না’। উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছ এবং হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর হাদীছে স্ববিরোধী কোনো বক্তব্য নেই। কেননা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর হাদীছে একদিকে যেমন দলাদলি করতে নিষেধ করা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি কুরআন ও সুন্নাহ্‌র অনুসারী সত্যবাদী মুমিনদের সাথে থাকতে বলা হয়েছে এবং তাদেরকে একক কোনো ব্যক্তির অন্ধ অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এই একক ব্যক্তি যদি দলমত নির্বিশেষে গোটা মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক বায়‘আতকৃত ইমাম হন, তাহলে তাঁর অনুসরণ করা যরূরী। মনে রাখতে হবে, মুসলিম উম্মাহ যদি একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির হাতে বায়‘আত করে, তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। আমার ধারণা মতে, দলাদলি সৃষ্টিকারীরা যদি ভয়াবহ সেই বিষয়টি জানত, তাহলে দলাদলি থেকে পশ্চাদ্‌ধাবন করত এবং হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর হাদীছের বক্তব্য অনুযায়ী তারা কাউকে তাদের ‘আমীর’ হিসাবে গ্রহণ করত না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একই সময়ে দু’জন খলীফার বায়‘আত সংঘটিত হলে শেষের জনকে তোমরা হত্যা কর’। অতএব, গোটা মুসলিম উম্মাহকে পরিচালনার জন্য একক খলীফা তৈরী পর্যন্ত তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে এবং অপেক্ষার এই সময়ে তাদের জন্য কোনক্রমেই ভিন্ন ভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন আমীর বা দলপ্রধান নির্ধারণ ও তাঁর হাতে বায়‘আত বৈধ হবে না। কারণ এই বায়‘আত মুসলিমদের বিভক্তি ও দলাদলিকে আরো বৃদ্ধি করবে। আমি বিভক্তি সৃষ্টির কথা না বলে বিভক্তি বৃদ্ধির কথা বললাম একারণে যে, দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলিমরা ইতোমধ্যে দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিভক্তির পরে প্রত্যেকটি দল যদি তাদের আলাদা আলাদা দলীয় প্রধান নির্ধারণ করে, তাহলে এই নেতৃত্ব উম্মতের মধ্যে বিভক্তি আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করবে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَلَا تَنَٰزَعُواْ فَتَفۡشَلُواْ وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡۖ ﴾ [ الانفال : ٤٦ ]

‘তোমরা পরস্পরে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। অন্যথায়, তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হবে’ (আল-আনফাল ৪৬)। তবে মুসলিম উম্মাহ্‌র প্রত্যেককে তার সাধ্যানুযায়ী সর্বজন স্বীকৃত একক খলীফা তৈরীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর এটিই হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটির অর্থ। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার কাঁধে বায়‘আত না থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, তার জাহেলী মৃত্যু হবে’। দলাদলি সৃষ্টিকারীদের মধ্যে বহু সংখ্যক মানুষ এই হাদীছটি ভুল বুঝে থাকে। তারা মনে করে, প্রত্যেকটি মুসলিমের কাঁধে কারো না কারো বায়‘আত অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু হাদীছটির মর্মার্থ তা নয়; বরং এর অর্থ দু’টিঃ (১) গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা থাকলে কোনো মুসলিমের জন্য তাঁর বায়‘আত পরিত্যাগ করে জামা‘আত থেকে পৃথক থাকা বৈধ নয়। আর এই বায়‘আত পরিত্যাগ করে কারো মৃত্যু হলে তার মৃত্যুকে জাহেলী মৃত্যু গণ্য করা হবে। (২) যদি মুসলিমদের মধ্যে এমন খলীফা না থাকে, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই এমন খলীফা তৈরীর চেষ্টা করতে হবে, সবাই যার বায়‘আত করবে। এটিই হচ্ছে হাদীছের দ্বিতীয় অর্থ। হাদীছটির দ্বিতীয় এই অর্থকে কিছু ‘ফিক্বহী ক্বায়েদা’ সমর্থন করে। যেমন: مَا لَا يَتِمُّ الْوَاجِبُ إلَّا بِهِ فَهُوَ وَاجِبٌ ‘যা ছাড়া ওয়াজিব বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, সেটিও ওয়াজিব’। বুঝা গেল, মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা থাকা ওয়াজিব। এই খলীফা না থাকলে তাঁকে তৈরীর চেষ্টা করাও ওয়াজিব। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ্‌র এমন ইমাম না থাকলে তাদের দলে দলে বিভক্ত হয়ে থাকা ঠিক নয়। কেননা এই দলাদলি তাদের বিভক্তিকে আরো বৃদ্ধি করবে। সেজন্য আমার মতে, যারা কোনো দল বা সংগঠনের দিকে মানুষকে দা‘ওয়াত দেয়, তাদের এই দা‘ওয়াতের উদ্দেশ্য যদি হয় সংগঠন বা দল গঠন, যেসব দলের মূলনীতি ও শর্তসমূহ অন্যান্য সংগঠনের অনেক মূলনীতি থেকে ভিন্ন, তাহলে এই হাদীছে তা থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। তবে মুসলিমদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতে এবং তদ্‌নুযায়ী আমলের জন্য তাদেরকে সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে; বরং তা অপরিহার্য বিষয়। কেননা মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা তৈরীর জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে মানুষকে আগে দ্বীনের জ্ঞানে জ্ঞানী করে তুলতে হবে। অন্যথায় চূড়ান্ত এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে না।( [() ‘বায়‘আত সম্পর্কে হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু–এর হাদীছের ব্যাখ্যা’ ক্যাসেট থেকে সংগৃহীত (আল-আছালাহ আস-সালাফিইয়াহ রেকর্ডিং সেন্টার, জেদ্দা)।])

প্রশ্ন: আন্দোলনধর্মী সংঘবদ্ধ দা‘ওয়াতী কার্যক্রম যদি সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি এবং সুবিন্যস্ত পরিকল্পনার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?

উত্তর: বর্তমান প্রচলিত সংগঠন এবং প্রচলিত সুবিন্যস্ত দা‘ওয়াতী কার্যক্রমে আমরা বিশ্বাস করি না। কেননা সংগঠন মুসলিমদেরকে তাদের দ্বীনী দায়িত্ব পালনে অক্ষম করে ফেলে। উল্লেখ্য যে, التنظيم ‘আত-তানযীম’ শব্দটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়; প্রথমত: এটি ব্যাপক অর্থে গোপন কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে। দ্বিতীয়ত: সংক্ষিপ্ত পরিসরে এটি তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ, আরবী ব্যকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ে মুসলিমদেরকে পাঠদানের সুবিন্যস্ত বন্দোবস্তকে বুঝায়। তবে এই ধরনের প্রশ্নে সাধারণতঃ দ্বিতীয় অর্থটি উদ্দেশ্য নয়; বরং দলাদলি সম্পর্কে জানতে চাওয়াই এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য। বর্তমানে বিভিন্ন জামা‘আত ও সংগঠনের অবস্থা হচ্ছে, তারা পরস্পরে বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করছে, প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন কর্মপদ্ধতি ও মূলনীতি রয়েছে এবং প্রত্যেকটি জামা‘আতের পৃথক পৃথক অনুসরণীয় দলপ্রধান রয়েছেন। মনে রাখতে হবে, ইসলামের সাথে এসব সংগঠনের কোনই সম্পর্ক নেই। এমনিতেই আমরা দলাদলির মধ্যে বসবাস করছি, এর পরে যদি আমরা আবার নতুন নতুন দল গঠন করি, তাহলে এর মানে হচ্ছে আমরা দলাদলি ও মতানৈক্যের পরিমণ্ডল আরো লম্বা করলাম। সেজন্য আমরা প্রচলিত এসব সাংগঠনিক কার্যক্রমকে সমর্থন করি না।

এখানে আমি একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যে বিষয়ে বিশেষ করে ভাল মনের অনেক মানুষ সজাগ নন; বর্তমান ইসলামী বিশ্বে বিপ্লব ও জাগরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা ২০/৩০ বছর আগে ছিল না। আমার মত বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষেরা বলতে পারবেন যে, আগে এসব ছিল না। বর্তমান এই জাগরণের সাথে একই ধাঁচে যুক্ত হয়েছে কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি ও কর্মপদ্ধতির দিকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান। ইদানীং শেষোক্ত দা‘ওয়াতের ব্যাপক সাড়া পড়েছে এবং অন্যান্য দলের লোকেরা মনে করছে, দেশ এখন সালাফী দা‘ওয়াতের দখলে। সেকারণে প্রচলিত সালাফী দা‘ওয়াত এখন ‘সালাফী’ নাম দিয়ে বিভিন্ন দল গঠনের সুযোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সালাফী দা‘ওয়াত এসব দলাদলির অনেক ঊর্ধ্বে। সালাফে ছালেহীন কি এমন দলাদলির সৃষ্টি করেছিলেন?! কখনই না। এসব দলাদলি তো দূরের কথা তারা এমনকি রাজনৈতিক দলাদলিতেও বিশ্বাসী ছিলেন না। এসব দলাদলি ইসলাম পরিপন্থী। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ وَلَا تَكُونُواْ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٣١ مِنَ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗاۖ كُلُّ حِزۡبِۢ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ ٣٢ ﴾ [ الروم : ٣١، ٣٢ ]

‘আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত’ (আর-রূম ৩১-৩২)। সত্যিকার অর্থে এটিই হচ্ছে বর্তমান দলাদলির বাস্তব চিত্র। আমার মতে, কোনো দলের সাথে ‘সালাফী’ শব্দটির ব্যবহার বিদ‘আতের সাথে ‘ইসলামী’ শব্দটি ব্যবহারের মত। যাহোক, সালাফী দা‘ওয়াতে বিশ্বাসীদের মন কাড়ার জন্য এখন এই শব্দটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ প্রকৃত সালাফী দা‘ওয়াত কখনই কোনো প্রকার দলাদলি সমর্থন করে না, যদিও বিশ্ব সেরা মানুষটিও সেই দলাদলির পুরোধা হন।

কেউ দলাদলির দিকে আহ্বান করলেই বুঝতে হবে, সে সরল-সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হতে শুরু করেছে। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবায়ে কেরামের সাথে বসা অবস্থায় ছিলেন। এমন সময় তিনি মাটির উপর সোজা একটি দাগ টেনে নিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন,

﴿ وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ﴾ [ الانعام : ١٥٣ ]

‘নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথেই চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে’ (আল-আন‘আম ১৫৩)। অতঃপর সোজা দাগটির পাশে ছোট ছোট আরো কিছু দাগ টেনে বললেন, ‘এই সোজা দাগটিই হচ্ছে আল্লাহ্‌র পথ এবং এর দু’পাশের দাগগুলি এমন পথ, যেগুলির প্রত্যেকটির শেষ প্রান্তে শয়তান রয়েছে। সে মানুষদেরকে তার দিকে ডাকছে’। সরল-সোজা পথটির আশপাশের পথগুলি শুধুমাত্র প্রাচীন ছূফীদের পথ নয়; বরং আধুনিক নতুন নতুন দলগুলিও উক্ত পথের অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে বিভ্রান্ত যেসব পথের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর কোনো কোনোটি আগে ভিন্ন আক্বীদা পোষণ করত এবং রাজনীতির সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। যেমন: মু‘তাযিলা, মুরজিয়া ইত্যাদি। আবার সেসব দলের কোনো কোনটি সরাসরি রাজনৈতিক দল ছিল। যেমন: খারেজী মতবাদ, যার মূলনীতিই হচ্ছে মুসলিম সরকারের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ। পরিশেষে বলব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট ছোট যেসব পথের কথা বলেছেন, সেগুলো তাঁর আঁকা সোজা পথের বাইরের সব পথ, মত ও পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করে।

যদি কেউ বলে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব দলের প্রয়োজন রয়েছে। জবাবে আমরা বলব, শরী‘আত বিরোধী কোনো কাজ করে কোনো প্রকার কল্যাণ সাধন সম্ভব নয়। তাছাড়া এসব মুসলিমদেরকে দলে-উপদলে বিভক্ত করে ফেলছে, প্রত্যেকটি দল নিজের মূলনীতি নিয়ে খুশী থাকছে।( [() ‘আল-হুদা ওয়ান নূর’ ক্যাসেট সিরিজের ১/৩৪০ নং ক্যাসেট থেকে সংগৃহীত।])

প্রশ্ন: মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৎকাজে এবং পরহেযগারিতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে ‘সংঘবদ্ধ দা‘ওয়াতী কাজ’-এর সঠিক ব্যাখ্যা কি হবে? কেননা কেউ কেউ মনে করেন, এক্ষেত্রে অবশ্যই নেতৃত্ব এবং আনুগত্য থাকতে হবে আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার আমীরের অবাধ্য হল, সে স্বয়ং আমার অবাধ্য হল’।

উত্তর: উল্লেখিত হাদীছটি ‘ছহীহ’। এর অর্থ হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর খলীফা কর্তৃক নিযুক্ত আমীরের অনুসরণ করা ওয়াজিব। প্রশ্নকারী হাদীছটিকে যে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, তা সঠিক নয়; বরং হাদীছটি গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমরা যেন মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা তৈরীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই, যিনি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্‌র আলোকে আমাদেরকে পরিচালিত করবেন। যাহোক, মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা যদি আমাদের উপরে কাউকে আমীর হিসাবে নিযুক্ত করেন, তাহলে তার অনুসরণ করা ওয়াজিব।... ( [() নিম্নোক্ত লিঙ্ক থেকে ১০/১২/২০১২ তারিখে দুপুর ১৩:২২ টায় সংক্ষেপিত: http://www.facebook.com/ehab.abdelaleem.5/posts/299867513456144])

তিনি হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত ফেতনা সম্পর্কিত হাদীছটি উল্লেখ করার পর বলেন, ‘হাদীছটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হাদীছটিতে বর্তমান মুসলিমদের বাস্তব চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কারণ আজ একদিকে যেমন মুসলিম উম্মাহ্‌র প্রতিষ্ঠিত জামা‘আত ও খলীফা নেই, অন্যদিকে তেমনি তারা চিন্তা-চেতনা, কর্মপদ্ধতি ও মূলনীতির ক্ষেত্রে শতধাবিভক্ত হয়ে গেছে। হাদীছটির বক্তব্য অনুযায়ী, কোনো মুসলিম এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে সে কোনো দল, জামা‘আত বা সংগঠনে যোগদান করবে না। অর্থাৎ যেহেতু এমন জামা‘আত বর্তমানে নেই, যাদের নেতৃত্বে গোটা মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক বায়‘আতকৃত একক খলীফা থাকার কথা, সেহেতু অন্য কোনো জামা‘আতে যোগ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই’।( [() আলী ইবনে হাসান আল-হালাবী, আদ-দা‘ওয়াহ ইলাল্লাহ বায়নাত্‌-তাজাম্মুইল হিযবী ওয়াত-তা‘আউন আশ-শারঈ (মাকতাবাতুছ-ছহাবাহ, জেদ্দা, প্রথম প্রকাশ: ১৪১২ হি:), পৃ: ৯৮।])

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন