আবূ সালামাহ্ ও সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, সাক্ষী ও কসমের দ্বারা ফয়সালা করা যাবে কি? উত্তরে তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
মালিক (র) বলেন যে, একজন সাক্ষীর সাথে বাঁদীর কসম গ্রহণের প্রথা পূর্ব হতে প্রচলিত হয়ে আসছে। সে যদি কসম করে তবে তার দাবি প্রমাণিত হবে। আর যদি সে কসম করতে ভয় পায় অথবা অস্বীকার করে তবে বিবাদীকে কসম দেয়া হবে। যদি বিবাদী কসম করে নেয় তবে ঐ হক (পাওনা) বিবাদীর উপর হতে এড়িয়ে যাবে। আর যদি সেও কসম করতে অস্বীকার করে তবে পুনরায় বাঁদীর দাবি তার উপর ন্যস্ত হবে।
মালিক (র) বলেন যে, কসমসহ সাক্ষ্য শুধু মালের বেলায় চলবে, হুদুদ (শরীয়তের শাস্তি), বিবাহ, তালাক, গোলাম আযাদ, চুরি ও অপবাদের মধ্যে চলবে না। অতঃপর যদি কেউ বলে যে, গোলাম আযাদ মালের মধ্যে শামিল, তবে সে ভুল করবে। কারণ ব্যাপার অন্য রকম, যদি এমন হত যে, সে বলেছে তবে গোলাম একজন সাক্ষীসহ হাযির হলে কসম নিয়ে তাকে আযাদ করে দেয়া উচিত ছিল। আর যদি গোলাম একজন সাক্ষী আনে কোন মালের ব্যাপারে যে, সে মালিকের উপর দাবি করে তবে সেই ক্ষেত্রে একজন সাক্ষীসহ কসম নিতে হবে এবং তার হক প্রমাণিত হবে। যেমন আযাদ মানুষ হলফ করলে হয়।
মালিক (র) বলেন আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য নিয়ম এই যে, গোলাম যদি তার আযাদ হওয়ার সপক্ষে একজন সাক্ষী নিয়ে আসে তবে তার মনিবকে কসম দেয়া হবে যে, তাহার গোলামকে আযাদ করেনি। তা হলেই গোলামের আযাদী প্রমাণিত হবে না।
মালিক (র) বলেন যে, এই নিয়ম তালাকের ব্যাপারেও। যদি কোন স্ত্রী লোক তালাকের ব্যাপারে একজন সাক্ষী নিয়ে আসে তবে স্বামীকেও কসম করানো হবে। যদি স্বামী তালাক না দেয়ার উপর কসম করে তবে তালাক প্রমাণিত হবে না। মালিক (র) বলেন যে, এভাবেই তালাক ও আযাদ-এর সাক্ষ্যের মধ্যে এক সাক্ষী থাকলে স্বামী ও মনিবকে কসম করানো হবে। কেননা আযাদ করা (ই’তাক) একটি শরীয়তী সীমারেখার মধ্য হতে একটি, তার মধ্যে স্ত্রীলোকদের সাক্ষ্য জায়েয নেই। কেননা গোলাম আযাদ হয়ে গেলেই তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং তার কারণে শাস্তি অন্যের উপর পতিত হয় এবং অন্যের কারণে শাস্তি তার উপর পতিত হয়। সে যদি যিনা করে এবং বিবাহিত হয় তবে তাকে রজম (প্রস্তর নিক্ষেপ) করা হবে। আর যদি সে হত্যা করে তবে তার বদলায় তাকেও হত্যা করা হবে এবং তার ওয়ারিসগণ মীরাস দাবি করতে পারবে। কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, যদি কোন মনিব তার গোলামকে আযাদ করে এবং কোন ব্যক্তি এসে গোলামের মনিবের নিকট নিজের কর্জ দাবি করে এবং তার সপক্ষে একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলাকে সাক্ষীরূপে পেশ করে তবে মনিবের উপর করয প্রমাণিত হয়ে যাবে। আর যদি মনিবের নিকট এই গোলাম ছাড়া আর কোন সম্পদ না থাকে তবে গোলামের আযাদী ভঙ্গ হয়ে যাবে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আযাদীর ব্যাপারে মেয়েদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। তার উত্তর এই যে, এখানে মেয়েদের সাক্ষ্য কর্জ প্রমাণের জন্য গ্রহণযোগ্য। গোলাম আযাদের ব্যাপারে নয়। তার উদাহরণ এইরূপ যে, যদি কোন লোক তার গোলামকে আযাদ করে দেয়, অতঃপর তার পাওনাদারগণ এক সাক্ষী ও কসমের দ্বারা নিজের দাবি প্রমাণিত করে এবং এর কারণে গোলামের আযাদী বাতিল করে দেয়া হবে। অথবা কেউ গোলামের মনিবের উপর কর্জের দাবি করে এবং সাক্ষী না থাকে তবে মনিব হতে কসম গ্রহণ করা হবে। যদি কসম করতে অস্বীকার করে তবে বাঁদীর নিকট হতে কসম নেয়া হবে এবং কর্জ মনিবের উপর প্রমাণিত হবে এবং গোলামের আযাদী বাতিল হবে। এমনিভাবে যদি কেউ কোন দাসীকে বিবাহ করে এবং দাসীর মনিব স্বামীকে বলে যে, তুমি এবং অমুক ব্যক্তি মিলে আমার অমুক দাসীকে এত টাকায় খরিদ করেছ। স্বামী সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করল। এদিকে মনিব যদি একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রী লোক সাক্ষীরূপে পেশ করে তবে এই অবস্থাতে বিক্রয় প্রমাণিত হয়ে যাবে এবং সে হকদার হয়ে যাবে ও বিবাহ হারাম হয়ে যাবে এবং বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। অথচ স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য তালাকের ব্যাপারে জায়েয নেই।
মালিক (র) বলেন এইরূপভাবে যদি কেউ কোন আযাদ লোকের প্রতি যিনার অপবাদ দেয় তবে তার উপর শরীয়তের হুদুদ (শাস্তি) আসবে। আর যদি একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোককে সাক্ষীরূপে আনে এবং তারা সাক্ষ্য দেয় যে, যার উপর অপবাদ দেয়া হচ্ছে সে গোলাম তবে অপবাদ কারীর উপর হতে শাস্তি বাতিল হয়ে যাবে। অথচ স্ত্রীলোকদের সাক্ষ্য অপবাদের মধ্যে চলে না।
মালিক (র) বলেন যে, যার মধ্যে বিচার ভিন্নরূপ হয় তার উদাহরণ এইরূপ- যেমন দুইজন স্ত্রীলোক সাক্ষ্য দিল যে, এই বাচ্চা জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তা হলে এই বাচ্চার জন্য মীরাস প্রমাণিত হবে এবং এই সন্তানের উত্তরাধিকার যে সেই মীরাসের মালিক হবে, যদি সন্তান মৃত্যুবরণ করে এইখানেও দুইজন স্ত্রীলোকের সাথে কোন পুরুষ নেই কিংবা কসমও নেই। কোন সময় মীরাসের মাল অনেক হয়ে থাকে, যেমন স্বর্ণ, রৌপ্য, জমি, বাগান, গোলাম, ইহা ছাড়া অন্যান্য সম্পদ আর যদি একটি দিরহাম অথবা তার চাইতেও কম বা অধিক মালের ব্যাপারে দুইজন স্ত্রীলোক সাক্ষ্য প্রদান করে তবে তাদের সাক্ষ্যের দ্বারা কোন পরিবর্তন হবে না এবং কার্যকরীও হবে না, যতক্ষণ তাদের সাথে একজন পুরুষ সাক্ষ্য না থাকবে অথবা কসম না থাকবে।
মালিক (র) বলেন যে, কোন কোন লোক বলে যে, একজন সাক্ষীর সাথে কসম প্রয়োজন হয় না এবং দলীলস্বরূপ এই আয়াত পেশ করে, “আল্লাহর কথা সত্য যদি দুইজন পুরুষ না পাওয়া যায় তবে একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোককে, যারা তোমাদের মনঃপূত হয় সাক্ষী মনোনীত কর।” (সূরা বাক্বারাহ, আয়াত ২৮২)
তারা বলে যে, একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোক না হলে তাদের জন্য কিছুই নেই। একজন সাক্ষীর সঙ্গে কসমও গ্রহণ করা হয় না।
মালিক (র) উত্তরে বলেন যারা এরূপ বলে, তাদের বলা হবে যে, তুমি কি দেখ না যে যদি কেউ কারো নিকট অর্থ দাবি করে তবে বিবাদীর নিকট হতে কি কসম নেয়া হয় না? যদি সে কসম করে তবে তার উপর দাবিকৃত হক বাতিল হয়ে যায়। আর যদি সে কসম করতে অস্বীকার করে তবে দাবিদারকে কসম দেয়া হবে যে, তার দাবি সত্য, তা হলে হক তার উপর অবধারিত হয়ে যাবে। এই মাসআলায় কোন মানুষের মতভেদ নেই, আর কোন দেশের লোকেরও এতে মতভেদ নেই। তবে তোমরা এই কথা কোথা হতে এনেছ? এবং আল্লাহর কোন কিতাব হতে সংগ্রহ করেছ? যদি তোমাদের নিকট এটা জায়েয থাকে তবে একজন সাক্ষীর সাথে কসমের কথাও স্বীকার যথেষ্ট, কিন্তু যদি সত্য কথা পাওয়া যায় তা মেনে নেয়া কর্তব্য এবং দলীলের বিষয়গুলো দেখা প্রয়োজন। আল্লাহ্র ইচ্ছায় কঠিন বিষয় সহজ হয়ে যাবে।