বুশাইর ইব্নু ইয়াসার (র) থেকে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইব্নু সাহল আনসারী ও মুহায়্যিসা খায়বর গিয়েছিল, সেখানে যেয়ে তারা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে একে অপর হতে পৃথক হয়ে গেল। আবদুল্লাহকে কেউ হত্যা করল। মুহায়্যিসা ফিরে এসে তার ভাই হুয়ায়্যিসা ও আবদুর রহমানকে নিয়ে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হল এবং আবদুর রহমান স্বীয় ভ্রাতার ব্যাপারে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কথা বলতে চাইল। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে বড় তার প্রতি লক্ষ্য কর। অতঃপর আবদুল্লাহর ঘটনা মুহায়্যিসা ও হুয়ায়্যিসা বর্ণনা করলেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমরা পঞ্চাশবার কসম খেতে পার তবে তোমরা দিয়াত প্রাপ্ত হবে। তাঁরা বললেন ‘ইয়া রসূলাল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা তো তখন তথায় ছিলাম না, আমরা দেখিওনি। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলে ইহুদীরা পঞ্চাশ কসম করে নির্দোষ হয়ে যাবে। তারা বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ্, তারা তো কাফির! তাদের কসম কি করে গ্রহণ করা যাবে ? বুশাইর বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ হতে দিয়াত আদায় করলেন। (বুখারী ৬৮৯৮, ইমাম মুসলিম মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন মুসলিম ১৯৬৯, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল)
মালিক (র) বলেন, আমাদের কাছে ইহা একটি সর্বস্বীকৃত বিষয়, এ ব্যাপারে অনেক আলিমের নিকটও শ্রবণ করেছি এবং পূর্ব যুগের আর পরবর্তী যুগের ইমামগণও এতে একমত হয়েছেন যে, কসম নেওয়ার ব্যাপারে প্রথমত বাদীপক্ষের নিকট হতেই কসম নিতে হবে। বাদীগণই প্রথমত কসম করবে (যদি তারা কসম না করে তবে বিবাদী হতে কসম নিতে হবে। যদি তারা কসম করে, তবে তারা নির্দোষ সাব্যস্ত হবে)।
নিম্নোক্ত দুটির যে কোন একটির জন্যই কসম নেয়া অনিবার্য হয়। প্রথমত মৃত্যুর পূর্বে নিহত ব্যক্তি নিজেই বলবে, যদি তার পক্ষে বলা সম্ভব হয়, আমাকে অমুক ব্যক্তি হত্যা করেছে, ইহা তখনই যখন কোন সাক্ষী না থাকে। দ্বিতীয়ত নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ যখন কারো উপর হত্যার সন্দেহ করে (অথচ কোন সাক্ষী পাওয়া না যায়)। আমাদের নিকট এই দুটি কারণেই কসম নেয়া অনিবার্য হয়। এতদ্ব্যতীত অন্য কোন কারণে কসম নেয়া অনিবার্য হয় না।
মালিক (র) বলেন, আমাদের কাছে এই সুন্নাত সর্বসম্মত এবং এর উপর সর্বসাধারণের আমলও রয়েছে যে, প্রথমে বাদী পক্ষ হতেই কসম নিতে হবে। সে হত্যা ইচ্ছাকৃত হত্যাই হোক অথবা অনিচ্ছাকৃত হত্যাই হোক।
মালিক (র) বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী হারিসের কোন আত্মীয় খায়বরে মারা যাওয়ার পর প্রথমত বানী হারিসকেই কসম করতে বলেছিলেন।
মালিক (র) বলেন, যদি বাদীপক্ষ কসম করে, তবে তারা যাদের ব্যাপারে কসম করেছে, তাদেরকে হত্যা করতে পারবে। তবে এ কসমের শুধুমাত্র একজনকে হত্যা করা যাবে। কিন্তু এমতাবস্থায় প্রথমে বাদী পক্ষ হতে পঞ্চাশ কসম নেয়া হবে। যদি তারা পঞ্চাশজন হয় তবে প্রত্যেকে একটি কসম করবে। আর যদি তারা সংখ্যায় পঞ্চাশ জনের কম হয় অথবা তাদের কেউ কসম করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে, তবে তাদের হতে দুই দুইবার অথবা তিন তিনবার কসম নিয়ে পঞ্চাশ পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু যখন নিহত ব্যক্তির এমন ওয়ারিসগণ যাদের হত্যাকারীকে ক্ষমা করার অধিকার আছে, তাদের একজনও যদি কসম করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে, তবে এই একজনের কসম করতে অনিচ্ছা প্রকাশের ফলে কিসাস আর অনিবার্য হবে না।
মালিক (র) বলেন, নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ যাদের ক্ষমা করবার অধিকার নাই এমন ব্যক্তিদের কেউ কসম করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও অবশিষ্ট ব্যক্তিদের হতে কসম নেয়া হবে।
মালিক (র) বলেন, যাদের ক্ষমা করবার অধিকার রয়েছে এমন ওয়ারিসদের একজনও যদি কসম করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে, তবে অবশিষ্ট ব্যক্তিদের হতে আর কসম নেয়া হবে না, বরং এমতাবস্থায় বিবাদীগণ হতে কসম নিতে হবে, বিবাদীদের পঞ্চাশজন পঞ্চাশ কসম করবে। যদি তাদের সংখ্যা পঞ্চাশজন হতে কম হয়, তবে দুই দুইবার, তিন তিন বার করে হলেও পঞ্চাশ পূর্ণ করতে হবে। যদি বিবাদী মাত্র একজন হয়, তবে এই একজন হতেই পঞ্চাশ কসম নিতে হবে। যদি এই এক ব্যক্তি পঞ্চাশ কসম করে ফেলে, তবে সে নির্দোষ সাব্যস্ত হবে।
মালিক (র) বলেন, হত্যার বেলায় পঞ্চাশ কসম নেয়া হয়ে থাকে আর অন্যান্য দাবি আদায়ের জন্য শুধু এক কসমই নেয়া হয়। কেননা মানুষ কাউকেই কারো সম্মুখে হত্যা করে না। যদি অন্যান্য দাবির মতো হত্যার বেলায়ও মাত্র একটি কসমই নেয়া হত তা হলে অনেক হত্যাই বৃথা যেত এবং মানুষ হত্যার উৎসাহ পেত। কিন্তু হত্যার কসমের বেলায় প্রথম বাদী পক্ষ হতেই কসম নেয়ার প্রথা নির্ধারিত হয়েছে যেন মানুষ হত্যা করতে সাহস না করে এবং এই ভেবে ভীত থাকে যে, এ ব্যাপারে তো নিহত ব্যক্তির কথাই ধর্তব্য।
মালিক (র) বলেন, যদি কোন একটি পূর্ণ সম্প্রদায়ের উপর হত্যার অভিযোগ আনা হয় যাতে অনেক লোক রয়েছে, আর নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ তাদের নিকট হতে কসম নিতে ইচ্ছা করে, তা হলে ঐ সমস্ত লোকের প্রত্যেক ব্যক্তি পঞ্চাশটি করে কসম করবে। সকলে মিলে পঞ্চাশটি কসম করলে চলবে না। এ ব্যাপারে আমি এটাই উত্তম শ্রবণ করেছি।
মালিক (র) বলেন, নিহত ব্যক্তির আসাবা যারা এই হত্যার হকদার তাদেরকেই কসম করানো হবে। আর তাদের কসম করার পরই কিসাস নেয়া যাবে।
(ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে কসমের দ্বারা কিসাস সাব্যস্ত হয় না, শুধু দিয়াত (রক্তপণ) সাব্যস্ত হয়ে থাকে।)